তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সিঙ্গাপুর থেকে পণ্য নিয়ে জাহাজটি জাপানের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তার আগেই ফিলিপাইন বা তাইওয়ানের উপকূলের কাছাকাছি জাহাজটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘটনার প্রায় ৪০ দিন পর পত্রিকায় জাহাজটির নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ প্রকাশ হয়। এটি তাইওয়ানের উপকূলে বা ফিলিপাইনের উপকূলে নিখোঁজ হতে পারে বলে খবরে উল্লেখ করা হয়। জাহাজটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন রবিউল ইসলাম। ক্যাপ্টেনসহ বেশির ভাগ নাবিকের বাড়ি সাতক্ষীরায়। জাহাজটি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে রহস্য শুরু হয়। কারণ জাহাজ ডুবে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হলে সাধারণত দ্রুত বার্তা পাঠানো হয়, যাতে আশপাশের জাহাজ উদ্ধারে এগিয়ে আসে। তবে এমন কোনো বার্তা সেই জাহাজ থেকে আসেনি। জলদস্যুরা ধরে নিলেও মুক্তিপণ আদায় করত। সেটিও হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৯৯৬ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে জানায়, জাহাজটির নিশ্চিত অবস্থান নিরূপণ করা যায়নি।
জাহাজ নিখোঁজের পাঁচ বছর পর সেই সময়কার একটি বিদেশি জাহাজের বাংলাদেশি ক্যাপ্টেন তখনকার সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরে একটি চিঠি দেন। সেই চিঠিতে ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম জানান, অস্ট্রেলিয়া থেকে পণ্যবাহী জাহাজ নিয়ে ফিলিপাইনের মিন্দানাও প্রদেশের ইলিগান বন্দরে যান তিনি। সেখানকার মিন্দানাও এলাকার মসজিদ ‘আবু বকর’এর তত্ত্বাবধায়ক তাঁকে জানিয়েছিলেন, কাছাকাছি মুজাহিদদের একটি শিবিরে ৩০ জন বাংলাদেশি রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে নিখোঁজ জাহাজ আল কাশিম-এর নাবিকেরাও আছেন। তবে পরদিন তাঁদের জাহাজ বন্দর ত্যাগ করার কথা থাকায় বিষয়টি সত্যতা যাচাই করতে পারেননি তিনি। ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, চিঠি দেওয়া ছাড়াও আল কাশিম জাহাজের নিখোঁজ নাবিকদের কয়েকজনের পরিবারকে জানিয়েছিলাম। এরপর কী হয়েছে, তা জানা নেই তাঁর।
২৫ বছর আগের ওই ঘটনার পর ক্যাপ্টেন রবিউলের পরিবার ঘটনার খোঁজে নানা জায়গায় ধরনা দিয়েছিল। অনেক বছর পর্যন্ত নিখোঁজ নাবিকের পরিবারের সদস্যদের সেই চেষ্টা অব্যাহত ছিল। সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর হতাশ হয়ে অনেকের তৎপরতা বন্ধ হয়ে যায়। নিখোঁজ ক্যাপ্টেন রবিউল ইসলাম চৌধুরীর ভাতিজা ধুলিহর ইউপি সদস্য শামীম রেজা চৌধুরী জানান, ২৫ বছর ধরে তারা সংবাদটির অপেক্ষায় আছেন। কী ঘটেছিল এমবি আল কাশিমের নাবিকদের ভাগ্যে তার রহস্য তারা আজও জানতে পারেননি।
ক্যাপ্টেন রবিউল ইসলাম চৌধুরীর ভাগ্নে মাওলানা মহসীনুল ইসলাম জানান, ২৫ বছর ধরে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন মাধ্যমে তারা সঠিক সংবাদটির অপেক্ষায় রয়েছেন। তিনি নিখোঁজ ক্যাপ্টেন রবিউল ইসলাম চৌধুরীর স্ত্রী মিসেস হালিমা বেগমের বরাত দিয়ে আরও জানান, তিনিও এ বিষয়ে কোনো খবর পাননি। ফিলিপাইনে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন সাতক্ষীরার ফিংড়ী ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের মরহুম আব্দুল মজিদ সরদারের মেয়ে রেখা পারভীন। রেখা পারভীনের উদ্ধৃতি দিয়ে মাওলানা মহসীনুল ইসলাম জানান, প্রায় ৪০ বছর ধরে রেখা ফিলিপাইনে আছেন। তার মাধ্যমেও অনেকবার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোন সুখবর তারা পাননি।
ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোবাশ্বেরুল হক জ্যোতি বলেন, ক্যাপ্টেন রবিউল ইসলাম চৌধুরী সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভালুকা চাঁদপুর গ্রামের আলহাজ্ব আবুল কাশেম চৌধুরীর ছেলে। তিনি ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ ডিগ্রি কলেজ, ভালুকা চাঁদপুর দাখিল মাদ্রাসা, ভালুকা চাঁদপুর এতিমখানা, ভালুকা চাঁদপুর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ, ভালুকা চাঁদপুর দাতব্য চিতিৎসালয় (হাসপাতাল) অসংখ্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। এছাড়া ভালুকা চাঁদপুর জমিদার বাড়ি জামে মসজিদের সম্প্রসারণ, সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের ভবণ সম্প্রসারণ, ভালুকা চাঁদপুর আদর্শ হাইস্কুলের ভবণ সম্প্রসারণসহ অসংখ্য মসজিদ-মাদ্রাসায় আর্থিক সহযোগিতা করেছেন। এলাকার উন্নয়নে তার অবদানের কথা আজও মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। ২৫ বছর ধরে আমরা তার খবরের অপেক্ষায় আছি।