মোঃ রাসেল হোসেন, নিজস্ব সংবাদদাতাঃবিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য বর্ষিয়ান রাজনীতিক ভাষাসৈনিক সাবেক এমপি এম নূরুল ইসলাম দাদ ুভাই ইন্তিকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। বুধবার সকাল ৮টার দিকে বার্ধক্যজনিত কারণে খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়ে, নাতি-নাতনি, আত্মীয়-স্বজনসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মরহুমের নামাজে জানাজা বাদ আসর সাকিট হাউস ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে । এর আগে ১২ টায় খুলনা মহানগরীর কেডি ঘোষ রোডস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে তার কফিনে দলের নেতাকমী’রা শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন । খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি তিনদিনের শোক কমসূচী ঘোষণা করেছে।
১৯৩৪ সালের ২ মে নড়াইল জেলার ইতনা গ্রামের মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি খুলনা মহানগরীর ২০, বাবুখান রোডে বসবাস করছেন। তার পিতা মরহুম ডা. খাদেম আহমেদ ও মাতা মরহুমা আছিয়া খাতুন এর ৬ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে জেষ্ঠ্য সন্তান। তিনি খুলনার একজন গর্বিত রাজনীতিক।
এম নূরুল ইসলাম প্রাথমিক শিক্ষা টুটপাড়া মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মডেল স্কুলে সম্পন্ন করেন। পিতার ডা. খাদেম আহমেদ এলএমএফ ডিগ্রীধারী তার নিজ এলাকার প্রথম মুসলিম চিকিৎসক ছিলেন। থাকতেন কলকাতায়। পিতার তত্ত্বাবধানে কলকাতা মেট্রোপলিটন হাই ইংলিশ স্কুল থেকে ম্যাট্রিক (১৯৪৭) পাশ করেন তিনি। দেশ বিভক্তির পর খুলনায় চলে আসেন। সে সময় থেকে এ পর্যন্ত খুলনায় জীবনের সর্বস্তর কেটেছে। ১৯৪৭ সালে বিএল কলেজে ভর্তি এবং ১৯৪৯ সালে আইএ পাশ করেন তিনি।
ছাত্রাবস্থা থেকেই সমাজ সচেতন ব্যক্তিত্ব এবং নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন তার। ১৯৪৬ সালে নিখিল বাংলা মুসলিম ছাত্রলীগের খুলনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং পাকিস্তান আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন এম নুরুল ইসলাম। নেতৃত্বদানের বলিষ্ঠতা, শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় সিক্ত হয়ে ‘দাদু ভাই’ নামে খ্যাত হয়ে উঠেন তিনি। খান এ সবুরের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে রাজনীতি ও আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করেন দাদু ভাই। বিএল কলেজের ছাত্র হিসেবে নেতৃত্ব দিতেন খুলনা অঞ্চলে। ১৯৫২ সালে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। সেই থেকে খান এ সবুরের রাজনীতির সাথে মত অনৈক্য হয় তার। ১৯৫৪ সালে হক ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর যুক্তফ্রন্টের খুলনা জেলার অন্যতম তরুণ নেতা এবং খুলনার গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পুরোধা এডভোকেট আব্দুল জব্বারের সংগ্রামী সহকর্মী হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৭ সালে ন্যাপ প্রতিষ্ঠার সময় তিনি খুলনা শহর কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে খুলনা পৌরসভার কমিশনার নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৬৪ সালে খুলনার জাহানাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত এবং তৎকালীন ফাতেমা জিন্নাহর প্রেসিডেনসিয়াল নির্বাচনে সম্মিলিত বিরোধী দলের খুলনা জেলা স্টেয়ারিং কমিটির সদস্য হিসেবে নেতৃত্ব দেন। ১৯৬৮-৬৯ সালে গণ-অভ্যূত্থানে নেতৃত্ব দানও কারাবরণ করেন তিনি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন এম নুরুল ইসলাম দাদু ভাই। ১৯৭২ সালে তিনি ন্যাপের খুলনা শহর শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৮ সালে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টে যোগদান ও প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে বিএনপি’র খুলনা মহানগর শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। একই সাথে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছিলেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে শেষ জীবনেও এম নুরুল ইসলাম দাদুভাই রাজনৈতিক অঙ্গনে সরব ছিলেন।#