সাতক্ষীরার কলারোয়ায় গলা কেটে স্বামী-স্ত্রীসহ ফোর মার্ডারের সময় বেঁচে যাওয়া ৪ মাসের ফুট ফুটে কন্যা শিশু মারিয়া কেমন আছে

 ক্রাইমবাতা রিপোট:  সাতক্ষীরার কলারোয়ায় গলা কেটে স্বামী-স্ত্রীসহ চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডারের সময় ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া ৪ মাসের ফুট ফুটে কন্যা শিশু মারিয়া এখন কেমন আছে- সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে অনেকের মনে।গত ১৫ অক্টোবর বৃহস্পতিবার ভোরে কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামের নিজ বাড়ীতে নিহত ৯ বছরের ভাই সিয়াম হোসেন মাহি, ৬ বছরের বোন তাসনিম ও মা সাবিনা খাতুনের গলা কাটা নিথর রক্তাক্ত দেহের পাশে রক্তের উপর শুয়ে দুধের তৃষ্ণায় কান্নায় ছটফট করতে থাকা শিশু মারিয়াকে উদ্ধার করেন প্রতিবেশি আনিছুর রহমান। এসময় পাশের রুমে পা বাঁধা বিছানার উপর গলা কাটা অবস্থায় পিতা হ্যাচারির মালিক মাছ ব্যবসায়ী শাহিনুরের মরদেহ পড়ে ছিল। পরে দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল ঘটনাস্থলে এসে শিশু মারিয়াকে প্রতিবেশিদের নিকট থেকে তুলে নিয়ে তার দায়িত্বভার গ্রহণ করে হেলাতলা ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুনের কাছে তুলে দেন। এরপর থেকে ইউপি মেম্বার মায়ের মমতা ও আদর দিয়ে লালন-পালন করছেন শিশুটিকে।

গত৬ দিন যাবত শিশুটি এখন ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুনের কাছে রয়েছে। তিনি এখন শিশুটির দেখভাল করছেন। প্রতিদিন মারিয়াকে দেখার জন্য দূর দূরান্ত থেকে লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন ইউপি সদস্যের বাড়িতে। বাড়ীতে কোন শাড়ি পরিহিত মহিলা দেখলেই শিশু মারিয়া তার গর্ভধারিনী মায়ের মুখের খোঁজে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকছে।

কখনো কখনো হাসছে আবার কখনো হঠাৎ করে আতঁকে কেঁদে উঠে। তখন কোন ভাবেই তাঁর সে কান্না থামানো যায় না। আবর কখনো কান পেতে অন্যদের কথা শুনছে। কিন্তু মায়ের কোল হারা শিশুটি এখনও সে সুস্থ আছে বলে জানালেন ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুন।মারিয়ার কথা বর্ণনা দিতে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, মারিয়াচাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডার; আঁতকে কেঁদে উঠছে বেঁচে যাওয়া সেই ৪ মাসের শিশুর শেষ ঠিকানা কোথায় হবে জানিনা। আমার দুই ছেলে, কোনও মেয়ে সন্তান নেই। এখন থেকে মারিয়াই আমার কন্যা সন্তান। নিজ খরচে বাবা-মায়ের স্নেহ-ভালবাসা আর আদর সোহাগ দিয়ে আমি ওকে বড় করতে চাই। এজন্য প্রশাসনের সহযোগিতা দরকার। জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল মহদয় আইনগত ভাবে যদি শিশুটিকে লালন-পালন করার দ্বায়িত্ব দেন তাহলে আমি তার প্রতি এবং সরকারের প্রতি চির কৃতজ্ঞ থাকবো। আমার বড় ছেলের ৮ মাসের একটি বাচ্চা আছে। শিশু মারিয়াকে পরিবারে আনায় পরিবারের সবাই দারুন খুশি।

কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌসুমী জেরিন কান্তা বলেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে শিশুটিকে ইউপি সদস্যের হেফাজতে রেখে সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছি ও দেখভাল করছি। তার জন্য খাদ্য ও পোশাক কিনে দিয়েছি। তার স্বাস্থ্যসেবার খোঁজ নিয়েছি।

জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, বাবা-মা, ভাই-বোনসহ একই পরিবারের ৪ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করায় এই মুহূর্তে শিশু মারিয়ার কোনও অভিভাবক নেই। যাতে কন্যা শিশু মারিয়া ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে, আমি সেই দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আপাতত তাকে কলারোয়ার হেলাতলা ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুনের কাছে রাখা হয়েছে। তবে তার অভিভাবকরা নিতে চাইলে আইনুযায়ী তাদের কাছে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ১৫ অক্টোবর  বৃহস্পতিবার রাতে কলারোয়া উপজেলার খলসি গ্রামের একই পরিবারের চার সদস্যকে গলা কেটে হত্যার ঘটনার পর শিশু মারিয়াকে ঘাতকরা নিহত মা ও ভাইবোনের পাশে রেখে চলে যায়। শাহাজান আলীর ছেলে হ্যাচারি মালিক নিহত শাহিনুর রহমান ও তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন, ছেলে সিয়াম হোসেন মাহি ও মেয়ে তাসনিমকে কলারোয়ার ব্রজবাকসা গ্রামে নানার বাড়িতে দাফন করা হয়। রাতে শাহিনুরের শাশুড়ি ময়না খাতুন বাদী হয়ে কলারোয়া থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা (নম্বর-১৪) দায়ের করেন। মামলায় তাৎক্ষনিক কলারোয়া থানা পুলিশ কুল কিনারা করতে না পারায় এই মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সাতক্ষীরা সিআইডি পুলিশকে। এরপর নিহত শাহিনুরের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে সাতক্ষীরা সিআইডি পুলিশ। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম ১৮ অক্টোবর রবিবার গ্রেফতার নিহতের ভাই রায়হানুল ইসলামকে ১০ দিনের রিমান্ড চাইলে রবিবার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। রায়হানুলকে সিআইডি পুলিশ জিজ্ঞাবাদ শুরু করেছে।

এ লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে সাতক্ষীরা সিআইডি পুলিশের বিশেষ পুলিশ সুপার আনিচুর রহমান জানান, হত্যাকাণ্ডটি দীর্ঘদিনের পরিকল্পিত। কোন ভাড়াটিয়া কিলার দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হতে পারে। এ জন্য একটু ধৈর্যধারন করতে হবে। অধিকতর তদন্ত চলছে। অচিরেই মামলার ক্লু বেরিয়ে আসবে। খুনিদের গ্রেফতার করতে সিআইডি পুলিশ অব্যশই সক্ষম হবে।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।