নিজস্ব প্রতিনিধি: সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চুপড়িয়ার ৩ প্রতারকের ফাঁদে পড়ে আল আমিন মহিলা দাখিল মাদ্রাসা শিক্ষকরাসহ আরও অনেকে সাধারণ মানুষ সর্বশান্ত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই তিন প্রতারক সরকারী চাকরি, বিদেশে পাঠানো ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও করে দেওয়ার নামে সাধারণ মানুষের ফাঁদে ফেলে তাদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই ৩ প্রতারক সরকারি চাকরি, বিদেশে পাঠানো ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও করে দেওয়ার নামে টাকা নিয়েছেন বিভিন্ন মহলে স্বীকার করে আবার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য তালবাহানা করছেন।
প্রতারকরা হলেন সদর উপজেলার চুপড়িয়া গ্রামের মুজিবর রহমানের পুত্র মোশারফ হোসেন, মেয়ে তাজমুন নাহার, মৃত অজেদ আলির পুত্র মুজিবর রহমান। এ ঘটনায় ৪ অক্টোবর এই ৩ প্রতারকের বিরুদ্ধে আল আমিন মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার গোলাম রসুল বাদি হয়ে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সূত্রে জানান, মোশারফ হোসেন ঢাকায় থাকেন। মোশারফ হোসেন ঢাকায় থেকে সচিব, মন্ত্রী ও ক্ষমতাশীন দলের বিভিন্ন আমলাদের পরিচয় দিয়ে ও নাম ভাঙিয়ে চলে। মোশারফ হোসেন সচিব, মন্ত্রী ও ক্ষমতাশীন দলের বিভিন্ন আমলাদের পরিচয় দিয়ে মাদ্রাসার সুপার গোলাম রসুলের মোবাইল ফোনে কথা বলেন, আমি একজন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট এর সহকারী পরিচালক, বর্তমানে আমি বঙ্গবন্ধু জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন কমিটির পরিচালক। আপনার আল আমিন মহিলা দাখিল মাদ্রাসা এমপিও ভুক্ত করে দেওয়া হবে। সচিব, অর্থ উপদেষ্টা ও মন্ত্রির সাথে আমার কথা হয়েছে। তবে আপনার মাদ্রাসার এমপিওভুক্ত করতে ৩০ লাখ টাকা দেওয়া লাগবে, এমন চুক্তি করেন মাদ্রাসার সুপারের সাথে প্রতারক মোশারফ হোসেন।
একপর্যায় আল আমিন মহিলা দাখিল মাদ্রাসার এমপিও ভুক্ত করার জন্য ২০১৭ সালে ৩০ লাখ টাকার চুক্তির বিনিময়ে সরল বিশ^াসে মোশারফ হোসেনের কথামত ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২০১৮ ইং সালের ১০ অক্টোবরের মধ্যে প্রাইম ব্যাংকের একাউন্ট হিসাব ১৬২২১০২০০২৩৩১৪, ২১৬২২১৩০০৬২৫৬, নম্বরে, ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্ট হিসাব ২৫৮১৫১৩৫৪৪৫ নম্বরে ও বিকাশ ০১৭৫৯৯৬২২৯৮ মোবাইল নাম্বারের মাধ্যমে সহ বিভিন্ন জায়গায় থেকে মোশারফ হোসেন ও তার পিতা মুজিবর রহমান, বোন নাহারের কাছে মোট ২১ লাখ টাকা প্রদান করে মাদ্রাসার সুপার গোলাম রসুল। কিন্তু মাদ্রাসাটি ৩ বছরের মধ্যে এমপিও ভুক্ত করে দিতে পারিনি এই তিন প্রতারক। এমপিও ভুক্ত করে দিতে না পারায় মোশারফ হোসেন ও তার পিতা মুজিবর রহমান, বোন নাহারের কাছ থেকে ২১ লাখ টাকা ফেরত নিতে মোশারফ হোসেনের বাড়িতে ধর্ণা দিতে থাকেন এবং মোশারফ হোসেনের ফোনে কথা বলতে থাকেন মাদ্রাসার শিক্ষকরা।
কিন্তু প্রতারক মোশারফ ও তার পিতা মুজিবর একের পর এক শিক্ষকদের ওয়াদা দিতে থাকেন। মোশারফ হোসেনের গ্রামের বাড়ি চুপড়িয়ায় একটি শালিস বৈঠক হয়। শালিস বৈঠকে ওই ২১ লাখ টাকা নিয়েছেন এবং টাকা ফেরত দিবেন মৌখিকভাবে এবং মোবাইল ফোনে স্বীকার করেন মোশারফ হোসেন ও তার পিতা মুজিবর রহমান। মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানান শিক্ষকরা টাকা ফেরত না পেয়ে আল আমিন মহিলা দাখিল মাদ্রাসার সুপার গোলাম রসুল বাদি হয়ে প্রতারক মোশারফ হোসেন ও তার পিতা মুজিবর রহমান, বোন নাহারের বিরুদ্ধে ১০ নং আগরদাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম্য আদালতে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপর গ্রাম্য আদালতে মুজিবর রহমান হাজির হয়। তবে ওই মোশারফ, বোন নাহার ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম্য আদালতে হাজির হননি।
গ্রাম্য আদালতের বিচারকের কাঠ গোড়ায় মুজিবর রহমান হাজির ২১ লাখ টাকা নিয়েছে এবং টাকা ফেরত দেওয়ার কথা স্বীকার করেন বলে গ্রাম্য আদালতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। কিন্তু মাদ্রাসার শিক্ষকরা ওই টাকা ফেরত না দিয়ে তালবাহানা করছেন বলে অবশেষে মাদ্রাসার সুপার বাদি হয়ে পুলিশ সপারের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করনে। বিষয়টি জেলা গোয়েন্দা শাখার ডিবি পুলিশ তদন্ত করেন। তদন্তের স্বার্থে বাদি ও ৩ প্রতারককে ডিবি পুলিশ অফিসে হাজির হবার আদেশ দেন ডিবি পুলিশের এক তদন্ত কর্মকর্তা। সেখানে হাজির হন বিবাদী মুজিবর রহমান। হাজির হয়নি মোশারফ ও বোন নাহার। তবে ডিবি পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা নাছির জানান অভিযোগের বিবাদীদের মধ্যে মাদ্রাসার ২১ লাখ টাকা নিয়েছেন এমন ব্যাক্ত করে ২নং বিবাদী মুজিবর রহমান এবং তার পুত্র মোশারফ হোসেন স্বীকার করেন। তবে ৩০ অক্টোবর তারিখে মধ্যে ২১ লাখ টাকা ফেরত দেবেন বলে ব্যক্ত করেন মুজিবর ও ফোনের মাধ্যমে ব্যাক্ত করেন মোশারফ হোসেন। মাদ্রাসার সুপার অভিযোগ করেন বলেন ৩০ অক্টোবর টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও বিবাদীরা মাদ্রসার টাকা আজও ফেরত না দিয়ে এরকম বহু বার বিবাদীরা একের পর এক তালবাহানা করে যাচ্ছেন।
এবিষয়ে মোশারফ হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোনের সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দুর্নীতিদমন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা ও এলাকার সাধারণ মানুষ।