শিলচরে দু’দিন আগেই আটক হন আকবর ছেড়ে দিতে ২০ লাখ টাকাও দিতে চেয়েছিলেন!

সিলেটে বহুল আলোচিত রায়হান হত্যার প্রধান অভিযুক্ত বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বরখাস্ত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া দু’দিন আগে গত শনিবার ভারতের করিমগঞ্জের শিলচরে আটক হন বলে দাবি করেছেন রহিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। এমনকি সেখান থেকে ডনা সীমান্তে নিয়ে আসার পর তাকে ছেড়ে দিতে আকবর ২০ লাখ টাকা দিতে চেয়েছিলেন রহিমকে। একটি ইউটিউব চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমন দাবি করেন রহিম উদ্দিন।
পুলিশ ও বিজিবির সোর্স কানাইঘাটের লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের পাত্তিছড়া গ্রামের মৃত তরফ আলীর ছেলে রহিম উদ্দিন গরু চোরাকারবারের সঙ্গে জড়িত। তার এ বক্তব্যের সত্যতা জানতে গতকাল মঙ্গলবার তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। এর আগে রহিম উদ্দিন বিভিন্ন মাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, তার ভাতিজা শিলচরে থাকে। সে আকবরকে পেয়ে তাকে খবর দেয়। বিষয়টি পুলিশকে জানান তিনি। পুলিশের নির্দেশেই আকবরকে ডনা সীমান্তে নিয়ে আসা হয়। শনিবার রাতে আকবর শিলচরে আটক হয়েছিলেন। রোববার তাকে ডনা বস্তিতে এনে রাখা হয় হেডম্যানের কাছে। সোমবার রহিম, নাজিম, মফুরসহ ছয় যুবক মিলে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়ে আসেন আকবরকে। পরে পুলিশ তাকে আটক করে নিয়ে যায়।
এদিকে প্রকৃতপক্ষে আকবরকে কারা, কোথা থেকে আটক করেছে, তা নিয়ে চলছে টানাহেঁচড়া। এ নিয়ে ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও। এ অবস্থায় বিভিন্ন মাধ্যম থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্নেষণ করে দেখা গেছে, রহিমের দেওয়া বক্তব্য পুরোটা না হলেও অধিকাংশ সত্য। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রহিম সরকারি ও প্রবাসী ব্যক্তিদের কাছ থেকে পুরস্কারের আশায় আকবরকে ধরতে এগিয়ে যান। শিলচরে তার ভাতিজাসহ কিছু স্বজন থাকেন। যারা আকবরকে পাওয়ার পর রহিমকে অবগত করেন। রহিমের একা কৃতিত্ব দেখে বসে থাকেননি তার গ্রামের বাসিন্দা সালেহ আহমদ নামের এক যুবক। তিনি তার ফেসবুক আইডিতে রহিমকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে আকবরকে নিয়ে আসতে পাঠিয়েছেন বলে দাবি করেন। আকবরের সঙ্গে সোমবার সীমান্তে সালেহকেও দেখা গেছে।
সূত্র মতে, রহিমের মাধ্যমে শিলচর থেকে আকবরকে ডনা বস্তিতে নিয়ে আসেন তার ভাতিজাসহ কয়েকজন। সেখানে বস্তির হেডম্যানের জিম্মায় থাকার পর সোমবার সকালে রহিমসহ ছয় যুবক আকবরকে নিয়ে আসেন। এর আগে রহিম কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ থানার ওসিকে বিষয়টি অবগত করেন। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশেই আকবরকে সীমান্তের ওপার থেকে নিয়ে আসা হয়। ডনা সীমান্তের ১৩৩৫ নম্বর পিলার অতিক্রম করে কানাইঘাট উপজেলায় প্রবেশ করেন রহিম উদ্দিন ও তার সহযোগীরা। বাংলাদেশ সীমানায় আসার পর আকবরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ প্রেস ব্রিফিংকালে পুলিশের যে সোর্সের কথা বলেছিলেন, রহিমরাই সেই সোর্স বলে মনে করা হচ্ছে।
কে সেই সিনিয়র অফিসার :আকবর ভারতীয় খাসিয়া যুবকদের কাছে আটক অবস্থায় একটি ভিডিওতে একজন সিনিয়র অফিসারের নির্দেশে পালিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। অনেকের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, কে সেই সিনিয়র অফিসার। বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িটি মূলত মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার অধীনে। তার মাথার ওপর রয়েছেন থানার এসি, ওসি ও ইন্সপেক্টর। তাদের কেউ, নাকি আরও ওপরের কোনো অফিসার আকবরকে পালাতে বলেছিলেন, সেটি এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

৫০ হাজার টাকা পাচ্ছেন রহিম :আকবরকে ধরিয়ে দিতে সহায়তা করায় রহিম উদ্দিন ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার পাচ্ছেন। সিলেটের গোলাপগঞ্জের শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের কানাডা প্রবাসী জয়নাল আবেদীন জামিল এ পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেন। গতকাল ভোরে ফেসবুক পেইজে লাইভে এসে তিনি ওই টাকার ঘোষণা দেন। জয়নাল আবেদীন বিশ্ব প্রবাসী শরীফগঞ্জ উন্নয়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক বলে জানা গেছে।

Please follow and like us:

Check Also

দেবহাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ৯ প্রার্থীর প্রতিক বরাদ্দ

দেবহাটা প্রতিনিধি: আগামী ২১ মে আসন্ন ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ২য় ধাপে দেবহাটায় ভোট গ্রহন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।