সাজা প্রাপ্ত আসামীকে কারাগারে না পাঠিয়ে মায়ের সেবা করতে বলায় প্রশাংসার সাগরে ভাসছে সাতক্ষীরার সেই মহিলা বিচারক

আবু সািইদ বিশ্বাস:ক্রাইমবাতা রিপোট: সাতক্ষীরা: এক বছরেন সাজা প্রাপ্ত আসামীকে কারাগারে না পাঠিয়ে মায়ের সেবা করার নির্দেশ দেয় সাতক্ষীরার একটি আদালত। এমন রায় নিয়ে ব্যাপক গুনজন। শুধু জেলাতে সীমাবদ্ধ না থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। জেলার সবকটি পত্রিকা খবটি গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করেছে। প্রশাংসার সাগরে ভাসছে  বিচারক ইয়াসমিন নাহার। কি ঘটে ছিল সেদিন-

আসামীর নাম হাসান আলী সরদার, বয়স পঁচিশ বছর। অপরাধ, তিন কেজি গাঁজা নিজ দখলে রাখা। অত:পর মামলা। তারপর রায়। তবে গতকাল রায়টি ঘোষনার পর কেবলমাত্র আসামী ও তার পরিবারের মধ্যে নয়, সাতক্ষীরার আদালত পাড়ায় আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের মধ্যেও ব্যাপক ভাবে আলোচনা হতে থাকে। প্রচলিত নিয়মে কোন মামলার রায়ে আসামী পক্ষ খালাস বা সাজা পেয়ে থাকে, কিন্তু গতকালের ব্যাতিক্রমধর্মী ওই রায়ে আসামীকে এক বছরের সাজা দেয়া হলেও তাকে জেলে যেতে হয়নি। বিচারক জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন নাহার আসামীকে কিছু সামাজিক দায়িত্ব পালনের শর্তে দিয়ে নিজ বাড়ীতে প্রবেশনে থেকে সংশোধন হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। তবে হ্যাঁ, শর্ত না মানলে হাসান আলীকে অবশ্যই জেলে যেতে হবে। আর সেটি নিশ্চিত করবেন জেলা সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন অফিসার সুমনা শারমিন। মঙ্গলবার দুপুরে সাতক্ষীরা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্্েরট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক ইয়াসমিন নাহার ব্যাতিক্রমধর্মী এ রায় ঘোষনা করেন। প্রবেশনে যাওয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামী হাসান আলী সরদার সদর উপজেলার ভাদড়া গ্রামের রজব আলী সরদারের ছেলে। আসামী পক্ষের আইনজীবী এড. এটিএম ফখরুল আলম জানান, মঙ্গলবার জিআর ৪৩/১৫ (টিআর ২৯/১৬) নম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইনের মামলার রায়ে (৩ কেজি গাজা রাখার অপরাধ প্রমানিত হয়) আসামী হাসান আলী সরদারকে এক বছরের সাজা দিয়ে জেলে না পাঠিয়ে প্রবেশনে মুক্তি দেয়া হয়েছে। এ সময় আসামীকে পাঁচটি শর্ত মানতে হবে। শর্তগুলো হলো- কোনরুপ মাদক বা নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন করা যাবে না, কোন খারাপ সঙ্গীর সাথে মিশবে না, প্রবেশনকালীন সময়ে ১০টি গাছ রোপণ করতে হবে, পিতা-মাতার সেবা করতে হবে, সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন মাদকের বিরুদ্ধে নিজ এলাকায় প্রচারণা চালাতে হবে। তবে, প্রচারনার সময় কি কি উল্লেখ করতে হবে তাও রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে। শর্তগুলো ভঙ্গ করলে তাকে আবারও কারাগারে যেতে হবে বলে আদেশ দেন আদালত। আসামী পক্ষের আইনজীবী আরো বলেন, সাতক্ষীরার আদালতের এটি একটি উল্লেখযোগ্য এবং ব্যাতিক্রমধর্মী রায়। এদিকে, সাজাপ্রাপ্ত আসামী শর্তগুলো মানছে কি-না তা তদারকি করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সাতক্ষীরা সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন অফিসার সুমনা শারমিনকে। তিন মাস পর পর প্রবেশন অফিসারকে আসামীর আচরণ সম্পর্কে আদালতে রিপোর্ট জমা দেয়ার আদেশও দেয়া হয়েছে আলোচিত এই রায়ে। আদালতের রায়ের বিষয়ে সাতক্ষীরা সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন অফিসার সুমনা শারমিন জানান, রায়ের কপি হাতে পেলে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে, তিনি আরও জানান, প্রবেশনে মুক্তি পেয়ে হাসান আলী যাতে নিজ বাড়ীতে মাদকমুক্ত পরিবেশে থেকে আদালতের দেয়া শর্তগুলো মেনে চলেন সে ব্যাপারে দেখভাল করা হবে। মামলায় আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন এড. এটিএম ফখরুল আলম বাবু এবং রাষ্ট্্রপক্ষের আইনজীবী (এপিপি) ছিলেন এড. শামছুল বারী।

Please follow and like us:

Check Also

দেবহাটা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ৯ প্রার্থীর প্রতিক বরাদ্দ

দেবহাটা প্রতিনিধি: আগামী ২১ মে আসন্ন ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ২য় ধাপে দেবহাটায় ভোট গ্রহন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।