ক্রাইমবাতা রিপোট: সাতক্ষীরা:সাতক্ষীরায় চাঞ্চল্যকর ফোর মার্ডারের ঘটনায় চার্জশিট দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। চার্জশিট প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোমল পানীয়’র সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ভাই-ভাবি ও ভাতিজা-ভাতিজিকে খাওয়ায় রাহানুর।
পরে ঘুমন্ত অবস্থায় চাপাতি দিয়ে গলা কেটে তাদের হত্যা করে। সে নিয়মিত ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ‘ক্রাইম পেট্রল’ দেখত। ক্রাইম পেট্রল দেখেই সে খুনের এ কৌশল শেখে। সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ওই হত্যাকাণ্ডের এক মাস পাঁচ দিন পর গত ২২ নভেম্বর চার্জশিট আদালতে দাখিল করা হয়।
মঙ্গলবার দুপুরে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডি খুলনা ও বরিশাল অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক।
অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক জানান, দুইটি মাদক মামলার আসামি রাহানুর। সে দীর্ঘদিন ফেনসিডিলের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সেবন করত। ফেনসিডিলসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এবং জেলও খাটে। এরপর স্ত্রী ফাহিমার সঙ্গে তার ডিভোর্স হয়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে রাহানুর বেকার অবস্থায় ভাই ও ভাবির সংসারে থাকতে শুরু করে। ভাবি সাবিনা খাতুন মাঝে মধ্যে টাকা প্রসঙ্গ তুলে তার সঙ্গে যে ব্যবহার করত- তা সে মেনে নিতে পারেনি। এক সময় ভাই-ভাবিসহ পুরো পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা করে রাহানুর।
ওমর ফারুক বলেন, হত্যার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্থানীয় মো. আবু জাফরের দোকান থেকে দুটি স্পিড (কোমল পানীয়) কিনে রাহানুর তার মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। ঘুমের ওষুধ মেশানো এ পানীয় সে তার ভাই-ভাবি, ভাতিজি ও ভাতিজাকে খেতে দেয়। তারা ঘুমিয়ে পড়লে গত ১৫ অক্টোবর রাত সাড়ে ৩ টার দিকে চাপাতি দিয়ে প্রথমে তার ভাই এবং পরে ভাবিসহ বাকিদের হত্যা করে।
সিআইডি জানায়, রাহানুর মূলত তার ভাই ও ভাবিকে হত্যা করতে চেয়েছিল। কিন্তু হত্যাকাণ্ড চালানোর সময় তার ভাতিজা ও ভাতিজি জেগে ওঠে। এ কারণে সে তাদেরও হত্যা করে। ঘটনার পর রাহানুল হত্যার আলামত মুছে ফেলার চেষ্টা করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতিসহ রক্ত মাখা কাপড় উদ্ধার করা হয়।
গত ১৫ অক্টোবর ভোরে কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামে একই পরিবারের চারজনকে গলাকেটে হত্যা করা হয়। তারা হলেন- শাহিনুর রহমান, তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন, ছেলে সিয়াম হোসেন মাহী এবং মেয়ে তাসনিম সুলতানা। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় তাদের চার মাস বয়সী শিশু কন্যা মারিয়া সুলতানা। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই শাহিনুরের শাশুড়ি ময়না খাতুন বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে কলারোয়া থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলামকে।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সিআইডি খুলনা অঞ্চলের বিশেষ পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান, সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুক্তা ধর এবং সহকারী পুলিশ সুপার জিসানুল হক।