ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড এবং রাসায়ানিক প্রয়োগের মাধ্যমে ধর্ষকের পুরুষাঙ্গ অকেজো (খোজাকরণ) করে দেয়ার বিধান রেখে দুটি অধ্যাদেশ অনুমোদন দিয়েছে পাকিস্তানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদ। মঙ্গলবার ধর্ষকের কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণের ঘটনায় লাগাম টানতে ধর্ষণের সংজ্ঞায়ও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন এ অধ্যাদেশকে বড়ধরনের সিদ্ধান্ত আখ্যা দিয়েছে সরকার। ধর্ষণের নতুন সংজ্ঞয় ট্রান্সজেন্ডার এবং গণধর্ষণের বিষয় দুটিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জানা যায়, প্রস্তাবিত আইনে ধর্ষণের শিকার নারীর শরীরে চিকিৎসক দ্বারা বিতর্কিত টু-ফিঙার পরীক্ষা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ওই পদ্ধতিতে পরীক্ষার মাধ্যমে নারীর একান্ত প্রত্যঙ্গে আঙুল প্রবেশ করিয়ে তার কোমলতা পরীক্ষা করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকের পর পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী শিবলি ফারাজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ধর্ষণের মৌলিক সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে ধর্ষণবিরোধী দুটি অধ্যাদেশে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদ। গণধর্ষণের অভিযুক্তদের চরম শাস্তি নিশ্চিতে ফাঁসির সুপারিশ করা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে অধ্যাদেশ দুটি চূড়ান্ত হবে বলেও জানান তিনি।
পাকিস্তানের জিও টিভির অনলাইন সংস্করণে বুধবার প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির আইন মন্ত্রণালয় ধর্ষণবিরোধী একটি আইনের খসড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করলে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানসহ সবার সম্মতিতে তা পাশ হয়।
দেশটির গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে ইমরান খান বলেছেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ব্যাপারে যেন কোনো বিলম্ব না হয়। নাগরিকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’
মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার এই বৈঠকে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে রাসায়নিকভাবে ধর্ষকের পুরুষাঙ্গ অকেজো বা নপুংসক করার পাশাপাশি ধর্ষকদের প্রকাশ্যে ফাঁসি দেয়ার দাবি তোলেন দেশটির মন্ত্রিসভার অনেকেই। তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাসায়নিক প্রয়োগে ধর্ষকদের পুরুষাঙ্গ অকেজো করে দেয়ার মাধ্যমে কঠোর পদক্ষেপ শুরু হোক। ধাপে ধাপে তা আরো কঠোর হবে।’
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, নির্যাতিতারা নির্ভয়ে অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। তার ও তার পরিবারের সুরক্ষা এবং পরিচয় গোপন রাখার দায়িত্ব সরকারের।
খসড়া ওই আইনে নারীদের নিরাপত্তায় জরুরিভিত্তিতে কয়েকটি বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশে আরো বেশি সংখ্যায় নারী নিয়োগ, দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ‘ফাস্ট ট্র্যাক আদালতে’ (দ্রুত বিচার আদালতে) যৌন নিপীড়নের মামলাগুলোর বিচার ও ধর্ষণের ঘটনার সাক্ষীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে।
অভিযুক্ত ধর্ষকের পুরুষাঙ্গ অকেজো করে দেয়ার ব্যাপারে চিকিৎসা বিজ্ঞানের যে প্রথার সাহায্য নেয়া হচ্ছে তার নাম ‘ক্যাস্টাসইজেশন’। এই প্রথায় রাসায়নিক ইনজেকশন প্রয়োগ করে চিরতরে পুরুষত্ব বিলোপ করা যায়। পৃথিবীর বহু দেশে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলেও পাকিস্তানের নেয়া এই সাজা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পারে।