আগামী বছরজুড়েই নির্বাচনী ডামাডোল

২৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু পৌর নির্বাচন
ক্রািইমবাতা ডেস্করিপোট॥ আগামী বছরজুড়েই থাকবে নির্বাচনী ডামাডোল। যার ধারাবাহিকতা শুরু হচ্ছে পৌরসভা নির্বাচনের মাধ্যমে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে পৌর নির্বাচন। ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবারে চারধাপে পৌর নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। এরই মধ্যে স্থগিত হওয়া চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে ইসিতে আলোচনা চলছে। এই মাসেই অনুষ্ঠিত হতে পারে চট্টগ্রাম সিটি ভোট। এছাড়া পৌর নির্বাচনের পাশাপাশি সারাদেশে সাড়ে চার হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রাথমিক আলোচনা চলছে ইসিতে। ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে আগামী বছরের মার্চ থেকে ধাপে ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শুরু হতে যাচ্ছে। এছাড়া জেলা পরিষদ নির্বাচন, নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন করার প্রস্তুতিও ইসির রয়েছে।

এ বছর ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। অন্যান্য সেক্টরের মতো দেশের নির্বাচনের ওপর এর প্রভাব পড়ে। ফলে গত মার্চ মাসেই চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনসহ বেশ কিছু নির্বাচন স্থগিত করতে হয়েছিল ইসিকে। ইতোমধ্যে করোনা ভয় কেটে যাওয়ার কারণে অনেক স্থগিত নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। দুই দফায় ৮৬ পৌর সভায় নির্বাচনের তফসিল দিয়েছে ইসি। তফসিল অনুযায়ী প্রথম দফায় ২৫ পৌরসভায় নির্বাচন হবে আগামী ২৮ ডিসেম্বর। এছাড়া দ্বিতীয় দফায় ৬১ পৌরসভায় ভোট হবে ১৬ জানুয়ারি। ইতোমধ্যে পৌরসভায় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রার্থী বাছাই শুরু হয়েছে। প্রথম দফায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। দ্বিতীয় দফায় নির্বাচনের জন্যও দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করতে যাচ্ছে দলগুলো। ফলে পৌরসভায় নির্বাচনের মাধ্যমে তৃণমূলে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেক বেড়েছে। করোনায় স্থগিত থাকা রাজনৈতিক পরিবেশ এখন বেশ উত্তপ্ত।

গত ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন। কিন্তু করোনার কারণে সে নির্বাচন স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছিল ইসি। ইসিতে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড শুরুর পর চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে। ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব মোঃ আলমগীর বুধবার সাংবাদিকদের জানান, এই মাসের শেষে অথবা জানুয়ারির প্রথমে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই নির্বাচন নিয়ে ইসিতে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। পরে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেন তিনি। তবে তিনি জানান, চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের জন্য নতুন করে তফসিল দিতে হবে না। শুধু ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হবে।

স্থগিত হওয়া চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন। এছাড়া সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরের ৫৫ পদে ২৬৯ প্রার্থী রয়েছেন ভোটে। স্থগিত হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে প্রশাসক বসানো হলেও জানা গেছে সুবিধাজনক সময়ে মন্ত্রণালয় অনুরোধ করলে নির্বাচন কমিশন ভোটের তারিখ নির্ধারণ করবে। সেক্ষেত্রে বর্তমান প্রার্থীরাই বহাল থাকবেন এবং যেখানে ভোট স্থগিত হয়েছিল সে অবস্থা থেকে নির্বাচন হবে। তবে মৃত্যুজনিত যেসব পদ-এর মধ্যে শূন্য হবে সে বিষয়ে কমিশন তখন সিদ্ধান্ত নেবে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ইসি সচিব মোঃ আলমগীর বলেন, কমিশনে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। কিন্তু সিডিউল তো ঘোষণা করেছিল, স্থগিত রয়েছে। এখন স্থগিতাদেশটা প্রত্যাহার করে পরবর্তীতে ভোটের শুধু তারিখটা দেয়া হবে। ওখানে আর কিছু নেই। ডিসেম্বরে ভোট হতে পারে।

সবমিলিয়ে এই ডিসেম্বর থেকে সারাদেশে নির্বাচনী পরিবেশ উত্তপ্ত থাকছে। যা অব্যাহত থাকবে আগামী বছর পর্যন্ত। ইতোমধ্যে পৌর নির্বাচনের প্রথম দফায় মেয়র ও কাউন্সিলর পদে ১ হাজার ৩৩৩ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার রিটার্নিং কর্মকর্তা এসব মনোনয়নপত্র বাছাই করেন। প্রথম ধাপে ২৮ ডিসেম্বর ভোট হবে ইভিএমে। গত মঙ্গলবার ছিল মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন। বাছাই শেষে প্রত্যাহারের শেষ সময় ১০ ডিসেম্বর। ইসি কর্মকর্তারা জানান, মনোনয়নপত্র জমার শেষদিনে প্রথম ধাপের পৌরসভাগুলোয় মেয়র পদে ১১২ জন, সংরক্ষিত নারী আসনে ২৮৩ এবং সাধারণ বা কাউন্সিলর পদে ৯৩৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

এদিকে পৌর নির্বাচন শেষ হতে না হতেই তৃণমূলে জনপ্রিয় ভোট ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শুরু হবে। সেই প্রস্তুতি এখন থেকে ইসিতে শুরু হয়েছে। ইসি সূত্রে জানা গেছে পৌরসভা নির্বাচন তারা চার ধাপে ফেব্রুয়ারিতে শেষ করতে চায়। এরপর আগামী মার্চ-এপ্রিলে শুরু হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ নির্বাচন। এবারও ধাপে ধাপে এই ভোট করার চিন্তা করছে নির্বাচন কমিশন।

ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২১ মার্চ থেকে শুরু করে আগামী বছর জুন জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করবে ইউপি নির্বাচন। এ জন্য প্রত্যেক ধাপে প্রায় ৭ থেকে ৮শ’ ইউপিতে ভোট নেয়া হবে। তবে ইউপিতে ব্যাপকহারে ইভিএম মেশিনে ভোট নেয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে এনআইডির সক্ষমতা অনুসারে যেখানে সম্ভব ইভিএম মেশিনে ভোট গ্রহণ করা হবে। জানা গেছে দলীয় প্রতীকে ব্যালট পেপারের পাশাপাশি উপজেলা সদরের ইউপিগুলোতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।

আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ, সংশ্লিষ্ট পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠানের তারিখ হতে পাঁচ বছর সময়ের জন্য উক্ত পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। পরিষদের নির্বাচনের বিষয়ে বলা হয়েছে- ‘পরিষদ গঠনের জন্য কোন সাধারণ নির্বাচন ঐ পরিষদের জন্য অনুষ্ঠিত পূর্ববর্তী সাধারণ নির্বাচনের তারিখ হতে পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। তবে দৈব-দুর্বিপাকজনিত বা অন্যবিধ কোন কারণে নির্ধারিত ৫ বছর মেয়াদের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব না হলে সরকার লিখিত আদেশ দ্বারা, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত কিংবা অনধিক ৯০ দিন পর্যন্ত যা আগে ঘটবে, সংশ্লিষ্ট পরিষদকে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ক্ষমতা দিতে পারে। গত ২০১৬ সালে সর্বশেষ সারাদেশে ৬ ধাপে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ইউপি নির্বচনে ভোট গ্রহণ করা হয়। জানা গেছে এবারও কয়েক ধাপে ইউপি নির্বাচনের প্রস্তুতি রয়েছে। আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চেই ইউপি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। জানা গেছে ইউপি নির্বাচন শেষ হলে জেলা পরিষদ এবং পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের প্রস্তুতি তাদের রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসব নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে বলেও তারা উল্লেখ করেন

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।