৮ বছরের ছেলের সামনে কারাফটকে মা-বাবার বিয়ে

রাজশাহী ব্যুরো  :  আট বছরের ছেলের সামনেই কারাফটকে বিয়ে হল বাবা-মায়ের। ধর্ষণ মামলায় আট বছর ধরে কারাগারে আছেন দিলীপ খালকো (৩০)। সেই ধর্ষণেই জন্ম নেয় এই শিশুটি। পরে আদালতের নির্দেশে ধর্ষণের শিকার ওই নারীর (২২) সঙ্গে রাজশাহী আদালত কারাফটকে তাদের বিয়ে হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে ধর্ষণ মামলায় আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। সম্প্রতি উচ্চ আদালতে দিলীপের আইনজীবী তার জামিনের আবেদন করেন। ধর্ষণের শিকার ওই নারী আদালতকে বলেন, তারা বিয়ে করবেন। আসামিকে জামিন দিলে তার আপত্তি নেই। পরে আদালত কারাফটকেই তাদের বিয়ের আদেশ দেন।

রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে শনিবার দুপুরে দিলীপ খালকোর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে নিজ ধর্মীয় রীতিতে। আসামি দিলীপ খালকো রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চৈতন্যপুর ভিকারপাড়া গ্রামের সীতানাথ খালকোর ছেলে। তার বিয়ের জন্য এদিন কনেসহ দুই পরিবারের অন্তত ১৪ জন কারাফটকে গিয়েছিলেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যও। তাদের সঙ্গে এসেছিল ধর্ষণের ফলে জন্ম নেয়া ভিকটিম নারীর আট বছরের ছেলে।

কনেসহ দুই পরিবারের সদস্যরা বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শ্যালোইঞ্জিনচালিত একটি নসিমনে চড়ে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে আসেন। এরপর তাদের কারাফটকে ঢোকানো হয়। আগে থেকেই উপস্থিত হয়েছিলেন খ্রিস্টান ও সাঁওতালী প্রথামতে বিবাহ রেজিস্ট্রার কৃষ্ণা দেবী এবং পুরোহিত পরিমল চক্রবর্তী।

কনেপক্ষ আসার পর কারাগার থেকে বর দিলীপ খালকোকে আনা হয়। তারপর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালার উপস্থিতিতে দুপুর সাড়ে ১২টার পর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সিনিয়র জেল সুপার কনেকে একটি নতুন শাড়ি উপহার দেন। দুই পরিবারের সবাইকে মিষ্টিমুখ করান।

দিলীপ কয়েদি হিসেবে এখনও কারাবন্দি থাকার কারণে বিয়ের ছবি নিতে দেয়া হয়নি। তবে দিলীপের মতামত ও প্রতিক্রিয়া জানা গেছে।

দিলীপ বলেছেন- বিয়ে করে ভালোই লাগছে। সবাই আশীর্বাদ করবেন যেন সুখে-শান্তিতে সংসার করতে পারি।

কনে বলেন, খালকোর সঙ্গে যেন বাকি জীবনটা ভালোভাবে কাটাতে পারি সেই আশীর্বাদ করবেন। আমার সন্তানের জন্যও আশীর্বাদ দিবেন।

সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, উচ্চ আদালত থেকে দিলীপের বিয়ে সম্পন্ন করার নির্দেশ আসে। তিন দিন আগে আদেশের কপি পাওয়ার পরই দুই পক্ষকে ডাকি। সুষ্ঠুভাবে বিয়েও সম্পন্ন হল শনিবার দুপুরে। এখন যত দ্রুত সম্ভব বিয়ের কাগজপত্র উচ্চ আদালতে পাঠানো হবে। এরপর দিলীপ খালকোকে কারাগার থেকে ছেড়ে দেয়া হবে।

জানা গেছে, দিলীপ কুমার এবং ভিকটিম সম্পর্কে খালাতো ভাইবোন। তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক ছিল। এর সূত্র ধরে ভিকটিমকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সঙ্গে ২০১১ সালে দৈহিক মেলামেশা করেন দিলীপ। এতে ভিকটিম গর্ভবতী হয়ে পড়েন কিন্তু দিলীপ আর বিয়ে করতে রাজি হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে সালিশ করার কথা বলে সময়ক্ষেপণ করা হয়। শেষপর্যন্ত সালিশ বৈঠক না হওয়ায় ভিকটিম ওই বছরের ২৩ অক্টোবর প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করেন। এরপর ২৫ অক্টোবর গোদাগাড়ী থানায় হাজির হয়ে দিলীপ খালকোর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেন।

মামলায় আসামির বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠন করা হয়। এরপর বিচার শেষে ওই বছরের ১২ জুন এক রায়ে দিলীপ খালকোকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন আদালত।

আদালতের রেকর্ড অনুযায়ী যখন ভিকটিম ধর্ষণের শিকার হন তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। কিন্তু সেই বয়সেই তার কোলে আসে ছেলেসন্তান। মেয়েটির আর পড়াশোনা করা হয়নি। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা আদিবাসী ক্যাথলিক খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এই মেয়েটি কৃষিশ্রমিক হিসেবে নতুন জীবন শুরু করেন। দিনে দিনে বড় হতে থাকে তার সন্তান। তার সন্তানের বয়স এখন আট বছর।

দিলীপেরও আট বছর জেল খাটা হয়ে গেছে। এতদিন পর দুই পরিবারের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। কনের সম্মতিতেই আদালত তাদের বিয়ের আদেশ দেন। এখন বিয়ের কাগজপত্র উচ্চ আদালতে গেলে মুক্তি পাবেন দিলীপ খালকো। আদালত তার সাজা মওকুফ করে দেবেন।

Check Also

সাতক্ষীরায় পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন

ক্রাইমবাতা রিপোট, সাতক্ষীরা:   ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।