জনবল সংকটে সাতক্ষীরা এল্লারচর চিংড়ি খামারে উৎপাদন ব্যাহত:লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতির আশঙ্কা

আবু সাইদ বিশ্বাস: ক্রাইমবাতা রিপোটঃ সাতক্ষীরা: প্রয়োজনীয় জনবল ও খননকৃত মরিচাপ নদীর গতি ফিরে পেলে প্রাণ ফিরে পাবে সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সাতক্ষীরা এল্লারচর চিংড়ি চাষ প্রদর্শনী খামার। খামারে লোনা পানি প্রবেশ করতে না পারায় গত বছর থেকে কাঁকড়া, পোনা কাকড়া ও কুচিয়ার ১৫টি পুকুর বন্ধ হয়ে যায়। মুখ থুবড়ে পড়ে খামারের স্বাভাবি কার্যক্রম। উন্নত পদ্ধতিতে কার্প-গলদা মিশ্র চাষ ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে উদ্যোক্তাদের আয়বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৯৮৩ সালে দেড়শ বিঘা (৫০ একর) জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় এল্লারচর চিংড়ি চাষ প্রদর্শনী খামার। সাতক্ষীরা শহর থেকে (৪-৫) কিলো দক্ষিণ দিকে গেলে সকলের নজর কাড়ে প্রদর্শনি খামারটি। বিশ্ববাজারের চিংড়ির গুরুত্ব বিবেচনা করে শুরু থেকে খামারটি কিশোর গলদা তৈরি ও বাগদার পোনা উৎপাদন করে আসছে। পরবর্তিতে কাঁকড়া,কুচিয়াও ভেটকিপোনার উৎপাদন শুরু করে।

সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এল্লারচর মৎস্য প্রুশিক্ষণ কেন্দ্রটি ২০১৮ সালের আগস্টে জেলা মৎস্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করেন। সেই থেকে জেলা বাসির কাছে মাইল ফলক হয়ে থাকে প্রদর্শনি খামারটি।

চলতি বছরে কেন্দ্রটি এক হাজার মৎস্য চাষীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এতে চাষিদের মাছে শুরু হয়েছে মৎস্য চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। প্রতি দিন চাষীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে আধুনিক ও বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ শুরু করেছে । গলদা, বাগদা ও কাঁকড়ার উপর তিন দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে মৎস্য চাষে ব্যাপক সফলতার মুখ দেখছে এ খাতে সংশ্লিষ্টরা।

কিন্তু জনবল সংকটের কারণে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি তার স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে চাষীদের প্রশিক্ষণ ও খামার পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে।
মৎস্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে কম পক্ষে ২৫টি পদের চাহিদা রয়েছে। জনবল উত্তরণে কার্যকরি পদক্ষেপে চেয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে চাহিদা ও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সরকারী বিধি মোতাবেক খামারটিতে বর্তমানে ১০টি পদ রয়েছে। কিন্তু ৭ পদেই কোন জনবল নেই। এক জন সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও একজন জুনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও এক জন নৈম্য প্রহরি দিয়ে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। পদ শূন্য রয়েছে একজন দক্ষ ফিশারম্যান,এক জন নাইট গার্ড,৪ জন গার্ড, একজন এমএলএস ও একজন ড্রাইভার। এমনকি যে দুজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আছে তাদেরও পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা নেই। নেই কোন যাতায়াতের বাহন। প্রশিক্ষক পেলে প্রতিদন ২২৫ জনকে বিভিন্ন প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ দেয়া সম্ভব। খামারটি জনবল সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে সাতক্ষীরায় মৎস্য খাতে নব দিগন্তের দ্বার উন্মোচন হবে আশা প্রতিষ্ঠানটির উর্দ্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকতা নাজমুল হুদার। পাশা-পাশি সরকারও এখান থেকে বিপুল পরিমাণে অর্থ জাতীয় রাজস্ব খাতকে সমৃদ্ধ করতে পারবে।

প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছ চাষ করে তালার লিমন,কলারোয়ার হামিদ,দেবহাটার মানিক মিয়া,শ্যামনগরের মাসুমসহ অনেকেই সফল হয়েছেন।

দেবহাটার বদরতলা এলাকার মানিক চন্দ্র বাছাড়া একজন কাঁকড়া চাষী। ২২ শতক জমিতে সে কাঁকড়া চাষ করছে। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তিনি কাঁকড়া চাষ করে আসছেন। এবছর তার খামারের অবস্থা খুব খারাপ। অনেক টাকা ক্ষতি হবে তার। কারণ ঘেরে লোনা পানির সংকট ও বিদেশে কাকড়া রপ্তানি বন্ধ থাকায় তারা পথে বসতে শুরু করেছে।

চিংড়ি চাষ প্রদর্শনী খামার এল্লারচর, সাতক্ষীরা থেকে প্রতিবছর সরকার বিপুল পরিমানে রাজস্ব আয় করে থাকে। জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে চিংড়ি চাষ প্রদর্শনী খামার থেকে ৩ লক্ষ ৯৮ হাজার টাকা, ২০১৯ সালে ১৬ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা, ২০১৮ সালে ১৩ লক্ষ ৪ হাজার টাকা এবং ২০১৭ সালে ১৩ লক্ষ ৮ হাজার টাকার, ২০১৬ সালে ১২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা এবং ২০১৫ সালে ৮ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা রাজস্ব অর্জন করে। যদিও এরাজস্ব অর্জনের পিছুনে সরকার সিংহভাগ খরচ করে।

জেলা মৎস্য অধিদপ্তর জানায়,জেলাতে নিবন্ধিত জেলে আছে ৪৯ হাজার ১৭৫ জন এবং মৎস্যচাষী আছে ৮১ হাজার ৪৩২ জন। ২০১৮-১৯ সালে ২২শ ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাকিসব জেলে,চাষী ও নতুন নতুন মৎস্য খামারিদের প্রশিক্ষণের আওয়তায় আনতে পারলে এখাত একটি লাভ জনক শিল্পে পরিণত হবে। পাশা পাশি লক্ষ বেকারের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিচালক সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: নাজমুল হুদা জানালেন, জনবল সংকট কাটিয়ে উঠতে পারলে এল্লারচর মৎস্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটি দক্ষিণাঞ্চলের একটি মডেল মৎস্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে রূপান্তর হবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মশিউর রহমান জানালেন,এল্লারচর মৎস্য প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দ্রুত জনবল নিয়োগের ব্যাপারে সরকারের উর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।

Check Also

আশাশুনি উপজেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সভাপতি-অধ্যাপক শাহজাহান,সেক্রেটারী বোরহান উদ্দীন মনোনীত এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি প্রতিনিধি।।বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন আশাশুনি উপজেলার দ্বি-বার্ষিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।