রেলের দুর্নীতি নিয়ে অনেক কথা হয়েছে, পত্রপত্রিকায় লেখা হয়েছে প্রচুর। কিন্তু সেসব কথাবার্তা বাতাসে মিলিয়ে গেছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং হয়েছে উল্টোটা। রেলের দুর্নীতির সেই ‘কালোবিড়াল’ শুধু বহাল তবিয়তেই নেই, সেটা আরও মোটাতাজা হয়েছে। গতকালের যুগান্তরে শীর্ষ সংবাদ হিসেবে ছাপা হয়েছে রেলের দুর্নীতির খবর।
তাতে জানা যাচ্ছে- তালা, বাঁশি, বালতি ও ঝাণ্ডাসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনাকাটায় দুর্নীতির সঙ্গে রেলের ১৭ কর্মকর্তা জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তাদের মধ্যে চারজনকে বরখাস্তসহ বিভাগীয় ও ফৌজদারি মামলার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ১৩ জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। আশ্চর্য বৈকি, রেলের জন্য ১৩৩ টাকার তালা কেনা হয়েছে ৫৫০০ টাকায়, ২০০ টাকার বালতি ১৮৯০ টাকায়, ৫০ টাকার বাঁশি ৪১৫ টাকায় এবং ৭৫ টাকার ঝাণ্ডা কেনা হয়েছে ১৪৪০ টাকায়। একইভাবে অন্যান্য পণ্যও কেনা হয়েছে বাজারমূল্যের চেয়ে ১৫ থেকে ৩৩ গুণ বেশি দরে। বলা বাহুল্য, এই বেশি দামে পণ্য কেনার কারণে সরকারের ক্ষতি হয়েছে বিপুল অঙ্কের টাকা। শুধু কেনাকাটায় নয়, কখনও কখনও উন্নয়নের নামে যেসব প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, সেখানেও হয়েছে বড় ধরনের দুর্নীতি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কেনাকাটায় তালিকাভুক্ত ১৬৬ ঠিকাদারের মধ্যে মাত্র ছয়জনের কাছে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়েছে, যা গুরুতর আর্থিক অনিয়ম-দুর্নীতি হিসেবেই বিবেচিত।
কেনাকাটায় দুর্নীতির চেয়ে প্রকল্পগুলোর দুর্নীতি আরও মারাত্মক। অতীতে দেখা গেছে, জনগুরুত্বপূর্ণ ও অর্থনীতির জন্য সুফলদায়ক বিবেচনায় রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সেগুলো একদিকে যেমন উপযোগিতা হারিয়েছে, অন্যদিকে সরকারি অর্থের অপচয় ঘটেছে। এতে কেবল রাষ্ট্রই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গেও ভুল বোঝাবুঝির ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা না গেলে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের অর্থ পকেটস্থ করার সুযোগ তৈরি হয়। রেলে বিরাজমান এ দুর্নীতির লাগাম এখনই শক্ত হাতে টেনে ধরা দরকার, তা না হলে রেলওয়েকে যুগোপযোগী করার আশা দুরাশায় পরিণত হবে।
দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আলাদা রেলওয়ে মন্ত্রণালয় করা হলেও এতে বিশেষ কোনো লাভ হয়েছে বলে মনে হয় না। সুলভ ও নিরাপদ বাহন হিসেবে মানুষ রেলভ্রমণে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। লাগামহীন চুরি ও দুর্নীতি ছাড়াও নানা ধরনের অব্যবস্থাপনায় নিমজ্জিত রেল বিভাগের এ নিয়ে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। বস্তুত রেল কর্তৃপক্ষ গণমানুষের চাহিদা পূরণে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। অতীতে রেল নিয়ে নানা ধরনের পরিকল্পনা ও উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যায়নি, বরং প্রতি বছর রেলওয়েকে লোকসান গুনতে হচ্ছে শত শত কোটি টাকা। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটানো অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা মনে করি, চুরি-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কঠোর হাতে দমন করা গেলে রেলের সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটতে । যুগান্তর।