গবেষণা প্রবন্ধে জালিয়াতির অভিযোগে পদাবনতির শাস্তি পাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাননি বলে দাবি করেছেন।
তিনি বলেন, আমাকে ষড়যন্ত্র করে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছে– ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে কঠোর নির্দেশ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতির কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন এ শিক্ষক। বিষয়টি নিয়ে তিনি আইনিব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যেও আছেন বলে জানিয়েছেন।
সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে সামিয়া রহমান এসব কথা বলেন।
এ সময় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ এবং আইনজীবী তুরিন আফরোজ উপস্থিত ছিলেন।
সামিয়া রহমান বলেন, যে গবেষণার লেখার জন্য তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেটা তিনি লেখেননি, জমাও দেননি। এ সংক্রান্ত প্রমাণও তার কাছে আছে বলে দাবি করেন।
এ ‘ষড়যন্ত্রের’ পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কেউ কেউ এবং কিছু শিক্ষক জড়িত রয়েছেন বলে মনে করেন তিনি। তবে তাদের নাম তিনি না বলে এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে তা বের করতে সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ জানান।
এ ঘটনার জন্য জার্নালের রিভিউয়ার ও বোর্ডের শাস্তির সুপারিশ ছিল উল্লেখ করে ঢাবির এ শিক্ষক বলেন, তাদের শাস্তি হয় না।কারণ তারা প্রতিষ্ঠিত বলে বিশ্ববিদ্যালয় তা সুকৌশলে এড়িয়ে যায়, আর বলির পাঁঠা হই আমি। প্রতিহিংসা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাজনীতির নোংরামির চরম শিকার হলাম আমি।
প্রসঙ্গত ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান ও অপরাধ বিজ্ঞান (ক্রিমিনোলজি) বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’র ডিসেম্বর সংখ্যায় ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্টাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’- শীর্ষক একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন।
কিন্তু প্রকাশিত ওই প্রবন্ধের বিরুদ্ধে ‘চৌর্যবৃত্তি’র অভিযোগ আনে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস।
এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে দুটি কমিটি গঠন করে। কমিটির তদন্তে সামিয়া ও মারজানের গবেষণায় চৌর্যবৃত্তির প্রমাণ পাওয়া যায়।
কিন্তু তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে কোনো শাস্তির সুপারিশ করা হয়নি। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী এএফএম মেজবাহ উদ্দীনকে প্রতিবেদনটি দেওয়া হয় সুপারিশের জন্য।
২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর তিনি বিষয়টি সিন্ডিকেটে নিয়ে আসেন। এর পর তাদের শাস্তি নির্ধারণে ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক রহমতুল্লাহকে প্রধান করে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের সুপারিশের ভিত্তিতে সামিয়া রহমানকে সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে অবনমন এবং অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানকে শিক্ষা ছুটি শেষে চাকরিতে যোগদানের পর দুই বছর লেকচারার থাকার সিদ্ধান্ত দেয় সিন্ডিকেট।