এইতো ভোর বেলা, আযানের পূর্বক্ষনে দাদু কইলো-
তোমার মতো আমিও রাত জাগতাম, ভোর করতাম জারি সারি যাত্রাপালায়।
দিনের পর দিন কলকেতে তামাক সাজিয়ে কতোই না হুকোটান সুখটান দিতাম, বনবাদাড়ে ঘুরে মেলায়-খেলায় কতো সময় যে হেলায় কাটিয়েছি তার ইয়াত্তা নেই।
তখন সময় ছিলো অফুরান, গতরে ছিলো উন্মাদনা, ছিলো লাঠিয়াল! শক্তি আর ক্ষমতার মহড়া দিয়েছি কতো…। জল্লাদও হার মানতো, ভীত সন্ত্রস্ত বিহ্বল থাকতো মানুষ। মদ-নারী ছিলো বাদী-দাসীর মতো!
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বুঝেছিলাম যৌবন শক্তি ক্ষমতা দম্ভ সবই সময়ের পালাবদলের ন্যায় নিজেকে বদলায়।
সেই নিষ্পেষিত বঞ্চিত লাঞ্ছিতরাই প্রকৃতির সাথে সাথে নিজেরাও বদলালো, শক্তি ক্ষমতা তাদের হাতে চলে গেলো। জীবন সূর্যটা সাগর গহ্বরে ডুবলো। অহমের পরাজয় ঘটলো।
এক সময় এদেশে মুসলিমলীগ দাপুটে পার্টি ছিলো, নিরীহ নিরস্ত্র স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীদের ওপর নির্যাতন দমন পীড়ন চালাতো… তাদের চ্যালাব্যালারা নিজেদের অহংকার অহমিকায় সাধারণকে বঞ্চিত করতো। তাদের মিলিটারি, সহযোগী দোসররা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাপিয়ে পড়তো..
নিহত-আহত করতো, মা-বোনের ইজ্জত নিতো।
আজ কোথায় তারা!
কোথায়??
একজন মুসলিমলীগ কর্মী কি খুঁজে পাওয়া যায় কোনো গ্রামে, শহরে?
এভাবে শত বছরের ব্যবধানে আজ আমিও মহাকালের সারথি।
এখানে সময় মাপার যন্ত্র নেই, ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড নেই। সবাই অসহায় এই মহাকালের আঁধারে। দু’শ বছর পর কেউ মনেও করবে না আমাদের, হাত তুলবে না কেউ খোদার কাছে প্রার্থনার জন্য।
গহীন অন্ধকারে একাকিত্ব নির্জন বিরানভূমিতে কালের স্রোতে ভেসে ভেসে একদিন পৌঁছে যেতে হবে বিচারের কাঠগড়ায়।
এখন হাজতখানায় আছি, শিঙার ফুঁকের অপেক্ষায় কাটছে সময়। কী নিয়ে দাঁড়াবো শেষ বিচারের দিন মহা ক্ষমতাধর স্রষ্টার সামনে?
সবই সাঙ্গ হবে, এই দুনিয়ার তখত, চুনোপুঁটির লাফালাফি সব শেষ হবে। তোমার নামটি জপার মতো একটা পিঁপড়াও খুঁজে পাবে না।
একমাত্র তোমার সাথী হবে তোমার ভালো কাজগুলো। তোমার নেক সন্তান, তোমার উপকারি জ্ঞান- যা তুমি দুনিয়াতে রেখে এসেছো।
দাদুর কথা শুনতে শুনতে হঠাৎ ফজরের আযান হলো। ঘুম ভাঙলো। কিন্তু এরপর সেই মধুঘুম আর আসে না, কোনো কাজে মন বসে না, দুনিয়াটা মরিচীকা মনে হয়, এটা দুনিয়া নয়- মুসাফিরখানা।
এইতো জীবন!