যাকাতের মতো জমিতে উৎপাদিত ফসলেও রয়েছে ভূমিহীন ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার। যাকাতের ন্যায় ফসলের উশর আদায়কে সমানভাবে গুরুত্ব দিলে অর্থনৈতিক বৈষম্য সিংহভাগ কমে যেতো। ফসলের যাকাত আদায় করা ফরজ। এ বিষয়টি পবিত্র কুরআন দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণিত। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-“তার ফসল উৎপাদিত হলে তা তোমরা খাও এবং ফসল কাটার দিনই তার হক আদায় কর” (সূরা আনআম : আয়াত-১৪১)। উক্ত আয়াতে ‘ফসল কাটার দিনই তার হক আদায় কর’-এখানে ‘হক’ দ্বারা যাকাতকে বুঝানো হয়েছে। আর ফসলের যাকাত হচ্ছে ‘উশর’।
বাংলাদেশের জনগণ কৃষি নির্ভর। আমাদের দেশটি কৃষি প্রধান হওয়া সত্ত্বেও এবং আমাদের পর্যাপ্ত কৃষি জমি ও জনশক্তি থাকার পরও আজও আমাদের খাদ্য আমদানি করে চলতে হচেছ। তাই কৃষি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন আবশ্যক। কৃষি বিজ্ঞানের উন্নয়নে মুসলিমদের ইতিহাস স্বর্ণোজ্জ্বল। যুগে যুগে মুসলিম খলিফারা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে কৃষির প্রতি যথেষ্ট মনোযোগী ছিলেন। সাহাবায়েকেরাম চাষাবাদ করেছেন। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ স. নিজে কৃষি কাজ করেছেন। কৃষিকজের প্রশংসাও করেছেন তিনি স.। পবিত্র কোরআনের অনেক আয়াতে কৃষিপ্রসঙ্গ এসেছে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘তোমরা যে বীজ বপন করো, সে সম্পর্কে ভেবে দেখেছ কি? তোমরা তাকে উৎপন্ন করো না আমি উৎপন্নকারী?’ (সূরা ওয়াকিয়া : ৬৩-৬৪)।
কৃষি কাজের জন্য পানি একটি অপরিহার্য উপাদান। পানি ব্যতীত এ জমিনে কোনো কিছু উৎপন্ন করা সম্ভব নয়। এ প্রসঙ্গে তিনি (আল্লাহ) বলেন, ‘তিনিই (আল্লাহ) আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন। অতঃপর আমি এর দ্বারা সব ধরনের উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি। অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙুরের বাগান, জয়তুন ও আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যবিহীন (উৎপন্ন করি)। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য করো যখন সেগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্বতার প্রতি লক্ষ করো। নিশ্চয়ই এগুলোতে নিদর্শন রয়েছে বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য।’ (সূরা আনআম : ৯৯)।
অন্য আয়াতে বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি আকাশ-জমিন সৃজন করেছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য বিভিন্ন ফলফলাদি রিজিক হিসেবে উৎপন্ন করেছেন।’ (সূরা ইবরাহিম : ৩৩)। ভূমি যেন পতিত অবস্থায় না থাকে, সেজন্য নবীজি স. বলেন, ‘যার কোনো জমি আছে সে যেন তা চাষাবাদ করে। অথবা অন্য ভাইকে দান করে দেয়। (তবুও যেন অনাবাদি না থাকে)।’ (সহীহ বুখারি : ২৪৯৩)।
সালফে সালেহিন ও খলিফাদের কৃষির প্রতি গুরুত্ব :
সালফে সালেহিন তথা সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈন কৃষি উন্নয়নে খুব মনোযোগী ছিলেন। হজরত ওসমান র. কে একবার জিজ্ঞেস করা হলো, আপনি বৃদ্ধ বয়সে বৃক্ষরোপণ করছেন কেন? তিনি উত্তর দিলেন, সৎকর্মরত অবস্থায় আমার মৃত্যু হওয়া ফাসাদরত অবস্থা থেকে উত্তম। একবার আবু দারদা র. আখরোট গাছ রোপণ করছিলেন। তখন তাকে বলা হলো, আপনি বৃদ্ধ বয়সে এটা কেন লাগাচ্ছেন? অথচ এর ফল পেতে ২০ বছর (অর্থাৎ অনেক) সময় লাগবে। তিনি উত্তর দিলেন, আজর তথা প্রতিদান ব্যতীত আমার অন্য কোনো চাহিদা নেই। (নুজহাতুল আনাম, পৃ : ১৮৫)।
অথচ পরিতাপের বিষয়, আজকের নতুন প্রজন্ম কৃষিকে নিম্নমানের পেশা হিসেবে গণ্য করে। যে কর্মের ওপর ভিত্তি করে মানবসভ্যতা টিকে আছে তাকে অবজ্ঞা করে। ফলে মুসলিম দেশগুলোর ভূমি চাষাবাদের জন্য সবচেয়ে উর্বর হওয়া সত্ত্বেও খাদ্যপণ্যে আমাদের অন্যদের ঘরে হাত পাততে হয়। তাদের থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হচ্ছে। এ পরনির্ভরতা কবে শেষ হবে?
কৃষি উন্নয়নে খলিফা-আমিরদের অবদান :
হিজরি প্রথম শতকে ইসলামী সাম্রাজ্য অর্ধজাহানে বিস্তৃত হয়। এরপর থেকে সুদীর্ঘকাল ধরে উমাইয়া, আব্বাসিয়া, উসমানিয়া খলিফারা পৃথিবী শাসন করেছেন। এসব খেলাফতের আমির সর্বদা কৃষি উন্নয়নে সুনজর দিয়েছেন। কীভাবে মুসলিমদের অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধি করা যায়, সে চিন্তায় বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছেন। কৃষক ও চাষাবাদের সুবিধাকল্পে বহুমুখী প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। খালবিল খনন, সাঁকো ও বাঁধ নির্মাণ, মাজরা তথা পানি নিষ্কাশন পথ পরিষ্কারকরণ, ভূগর্ভ থেকে সহজে পানি উত্তোলন মেশিন স্থাপনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। শুধু বসরা নগরীতেই নাকি ১ লাখ ছোটবড় নালা ছিল। যেগুলো দিয়ে সহজে পানি প্রবাহিত হতো। অনেক নালা খননকারীর নামে নামকরণ করা হতো। খলিফা হারুনুর রশীদের স্ত্রী কর্তৃক খননকৃত ‘নহরে যুবাইদা’ ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছে।
এসব কাজে প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়। কৃষক-বণিকদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হজরত সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস রা. ‘নহরে সাদ’ খননের প্রস্তুতি নেন। এজন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করা হয়। খননকার্য কিছুদূর এগুনোর পর বিশাল এক পাহাড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তখন খননকার্য বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী হাজ্জাজ বিন ইউসুফ আস সাকাফি (তার যুগে) আবার খননকার্য শুরু করেন। তিনি এবার তত্ত্বাবধায়কদের নির্দেশ দিলেন যে, তোমরা দেখো খননকর্মীদের দৈনিক খাবারের মূল্য কত? যদি খাদ্যের ওজন একজন শ্রমিকের খননকৃত পাথরের ওজনের সমপরিমাণও হয় তবুও তোমরা খননকার্য বন্ধ করবে না। (সেই পরিমাণ মূল্য আমি দেব) পরবর্তী সময় বিশাল অর্থ ব্যয় করে নহরটি খনন করা হয়। (মুজামুল বুলদান : ৫/৩২১)।
প্রাকৃতিক নালার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে কৃত্রিম নালা ছিল। যেগুলোর মাধ্যমে কৃষক সহজে ক্ষেত সিঞ্চন করতে পারতেন। মধ্যযুগে খলিফাদের এসব কর্ম আধুনিক পানি-বিশেষজ্ঞদের বিস্ময়ান্বিত করেছে।
কৃষককে সম্মান প্রদান :
খলিফারা কৃষককে আর্থিক সচ্ছলতার জন্য অনুদান দিতেন। কৃষি উৎপাদন করতে গিয়ে যেন অর্থ সংকটে না পড়তে হয় এজন্য কর মওকুফ করে দিতেন। অনেক স্থানে শস্য ঘরে তোলার পর কর আদায় করা হতো। হজরত ওমর রা. বলতেন, তোমরা কৃষকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। (অর্থাৎ তাদের প্রতি জুলুম করো না)। হজরত আলী রা. কর্মচারীদের প্রতি নির্দেশনা প্রেরণ করেন যে, তোমরা এক দিরহাম করের জন্য কৃষককে প্রহার করো না। খলিফা জিয়াদ বিন আবিহ কর্মচারীদের বলেন, তোমরা কৃষকের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে। কেননা তারা যতদিন মোটাতাজা থাকবে তোমরাও ততদিন মোটাতাজা থাকতে পারবে। (অর্থাৎ সুখে থাকবে)। (তাসহিলুন নজর, পৃ. ১৫৯)।
অনেক খলিফা কৃষকের ফসল উৎপাদনের আগেই অগ্রিম আর্থিক অনুদান দিতেন। যেন তারা সহজে চাষাবাদ করতে পারে। (মুজামুল বুলদান : ২/২৭৪)। যুদ্ধকালীন মুসলিম সেনাপতি সৈন্যদের কঠোরভাবে নিষেধ করতেন যেন তারা কোনো ফসলি জমিন নষ্ট না করে। ক্ষেতখামারে অগ্নিসংযোগ না করে। একজন কৃষক যে ধর্মেরই হোক না কেন, তাকে যেন আক্রমণ না করা হয়।
খলিফা-আমিরদের এমন সহযোগিতায় কৃষক আনন্দচিত্তে চাষাবাদ করত। খলিফারা অনুভব করতে পেরেছিলেন যে, কৃষকের উৎপাদন যত বৃদ্ধি পাবে দেশের অর্থনীতি তত চাঙ্গা হবে। বায়তুল মালে বেশি অর্থভা-ার সঞ্চয় হবে। পূর্বসূরিদের কৃষিকর্মে এত মনোযোগিতার ফলশ্রুতিতে আমরা দেখতে পাই, তাদের দৈনন্দিন খাবারের জোগান নিজেরাই উৎপাদন করতেন। মুসলিম বিশ্বের খাদ্যচাহিদা নিজেদের ভূমিতেই যথেষ্ট ছিল। জনৈক ইতিহাসবিদ বলেন, ‘তদানীন্তন মুসলিম বিশ্ব বাইরে থেকে খাদ্যসামগ্রী আমদানি করেছিল, এ তথ্য আমি কোথায় খুঁজে পাইনি।’ (আহমদ আমিন, জহরুল ইসলাম : ২/২৪৬)।
এছাড়াও ততকালীন মুসলিম প-িতরা চাষাবাদ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বই লিপিবদ্ধ করেছেন। মানুষের আগ্রহের কারণে এটি একটি স্বতন্ত্র বিদ্যায় পরিণত হয়, যা ‘ইলমুজ জিরাআহ’ (কৃষিবিদ্যা) নামে পরিচিতি লাভ করে। মাটির প্রকারভেদ, শস্যবীজ উৎপাদন পদ্ধতি, ভূগর্ভস্থ থেকে পানি উৎসারণ পদ্ধতি, বিভিন্ন শস্য, শাকসবজি ও ভেষজ ফলের পরিচয়সহ চাষাবাদের নিয়মকানুন নিয়ে প্রচুর গ্রন্থ রচিত হয়। উমাইয়া-আব্বাসি যুগের গ্রন্থভান্ডার এর সাক্ষী।
এই ছিল আমাদের পূর্বসূরিদের সোনালি যুগে সোনালি ফসল উৎপাদনে অবিস্মরণীয় অবদান। আল্লাহর দেয়া জমিন থেকে নিজেরাই নিজেদের খাদ্যসামগ্রী উৎপাদন করতেন। অমসুলিমদের ঘরে হাত পাততে হতো না। কিন্তু আমরা সেসব ভুলে গেছি। আধুনিক প্রযুক্তি যত মহাকাশে পৌঁছুক, শিল্পকারখানা যত উন্নত হোক, আবাসন ব্যবস্থা ও ঘরের আসবাবপত্র যতই সুন্দর হোক না কেন, দৈনিক তিনবেলা পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য কিন্তু ঠিকই একমুঠো ভাতের প্রয়োজন হবে। জমিনের উৎপন্ন খোরাকেই কিন্তু আমাদের জীবন টিকে আছে। তাই চাষাবাদকে উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু আধুনিক মুসলিম সমাজে কৃষি বিজ্ঞানে তেমন উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার ও অর্জন আছে কী?
কৃষি জমির যাকাত আদায়ের গুরুত্ব :
শরীয়তের পরিভাষায়-ফসলের যাকাতকে ‘উশর’ ও ‘খিরাজ’ বলে। অর্থাৎ জমি উশরী হলে যা আদায় করতে হবে তা ‘উশর’ এবং জমি খিরাজী হলে যা আদায় করতে হবে তা ‘খিরাজ’। মুসলমানের মালিকাধীন ভূমিই হচ্ছে উশরী ভূমি। ‘উশর’ এর অভিধানিক অর্থ হচ্ছে-একদশমাংশ। মুসলমানের মালিকানাধীন ভূমি থেকে উৎপাদিত ফসলের একদশমাংশ বা দশ ভাগের এক ভাগ অথবা একদশমাংশের অর্ধেক তথা বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দেয়াকে ‘উশর’ বলে। অর্থাৎ মুসলমানের মালিকানাধীন যেসব জমিকে বৃষ্টির পানি এবং নদীর পানি সিক্ত করে কিংবা স্বভাবতই সিক্ত থাকে-এমন জমি থেকে উৎপাদিত ফসলের দশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে এবং যেসব জমিকে সেচের মাধ্যমে সিক্ত করা হয়-এমন জমি উৎপাদিত ফসলের বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে। অন্যান্য সম্পদের যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে নিসাব পরিমাণ সম্পদ পূর্ণ এক বছর মালিকানাধীন থাকা শর্ত কিন্তু ফসলের যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে সেই ফসল এক বছর মালিকানাধীন থাকা শর্ত নয়। বরং যখনই ফসল হস্তগত হবে তখনই উশর আদায় করতে হবে। এমনকি বছরে যতবার ফসল উৎপাদন হবে ততবারই ফসলের দশভাগের এক ভাগ যাকাত হিসেবে আদায় করতে হবে।
‘উশর’ এর যাকাত সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বর্ণিত হাদীসে রাসূল স. ইরশাদ করেন-‘যে জমিকে বৃষ্টির পানি অথবা নদীর পানি সিক্ত করে অথবা স্বভাবতই সিক্ত হয় তাতে ‘উশর’ অর্থাৎ দশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে। আর যে জমিকে সেচের মাধ্যমে সিক্ত করা হয় তাতে ‘অর্ধ উশর’ অর্থাৎ বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে (বুখারী-১ম খ- : পৃষ্ঠা-২০১, মিশকাত শরীফ : পৃষ্ঠা-১৫৯)।
ফসলের যাকাত আদায় করা ফরজ। এ বিষয়টি পবিত্র কোরআন দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণিত। ইরশাদ হচ্ছে-“তার ফসল উৎপাদিত হলে তা তোমরা খাও এবং ফসল কাটার দিনই তার হক আদায় কর” (সূরা আনআম : আয়াত-১৪১)। উক্ত আয়াতে ‘ফসল কাটার দিনই তার হক আদায় কর’-এখানে ‘হক’ দ্বারা যাকাতকে বুঝানো হয়েছে। আর ফসলের যাকাত হচ্ছে ‘উশর’। তাই উক্ত আয়াতের মর্মানুযায়ী ‘উশর’ আদায় করা ফরজ প্রমাণিত হল। অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে-“হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন কর এবং আমি যা ভূমি থেকে তোমাদের জন্য বের করে দেই তন্মধ্যে যা উৎকৃষ্ট তা ব্যয় কর” (সূরা বাকারা : আয়াত-২৬৭)। উক্ত আয়াতেও বাধ্যতামূলকভাবে ফসলের যাকাত তথা ‘উশর’ আদায় করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইমাম আবু হানিফা, আবু ইউসুফ, মুহাম্মাদ আল শায়বানী, ইমাম মালিক, সাঈদ ইবনুল মুসাইয়েব, তাউস, কাতাদাহ ও দাহহাকসহ বেশির ভাগ মনীষীর মতে, এ আয়াতে আল্লাহর হক বলতে ফসলের জাকাত উশরকে বুঝানো হয়েছে।
উশরের নিসাব কী? উল্লিখিত হাদিসের ভিত্তিতে ইমাম মালিক, শাফেয়ি, আহমদ ইবনে হাম্বল, আবু ইউসুফ, মুহাম্মদসহ বেশির ভাগ আলেম মত প্রকাশ করেছেন, পাঁচ ওয়াসাকের পরিমাণে কোনো জাকাত হবে না। ‘পাঁচ ওয়াসাক’ বলতে কী পরিমাণ বুঝাবে এ ক্ষেত্রে কিছুটা মতভেদ আছে। ৬০ ছা-এ এক ওয়াসাক হয়ে থাকে। মতভেদের কারণ হচ্ছে ছা-এর পরিমাণ। এ প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনার পর ড. ইউসুফ আল কারজাভি মত দিয়েছেন, পাঁচ ওয়াসাক সমান ৬৫৩ কিলোগ্রাম অর্থাৎ ১৮ মণের মতো। অর্থাৎ, ১৮ মণের বেশি ফসল হলেই উশর প্রদান করতে হবে।
বস্তুত: সমাজে কেউ আয়েশি জীবন যাপন করবে আর কেউ অনাহারে থাকবে, এটা ইসলাম সমর্থিত নয়। তাই যাকাত ও ফসলের উশর আদায়কে সমান গুরুত্ব দিতে পারলে এবং ভূমিহীন অনাহারীরর মাঝে সমবন্টন করতে পারলে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীভূত হবে। ইন-শা-আল্লাহ।
লেখক : বিলাল মাহিনী, প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, অভয়নগর, যশোর।
প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী সম্পাদক : সিংগাড়ী আঞ্চলিক গণগ্রন্থাগার ও ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র, অভয়নগর, যশোর।
আজীবন সদস্য : নওয়াপাড়া ইনস্টিটিউট।