অভয়নগরের ভৈরব উত্তর পূর্বাঞ্চলসহ মোবাইলে ফ্রী ফায়ার নামক গেইম খেলে নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থী!

সব্যসাচী বিশ্বাস (অভয়নগর) যশোরঃ

আধুনিকতার সাথে খাপ-খাওয়াতে হাতে স্মার্টফোন ,গাছতলা কিংবা বাগান, বাড়ির ছাদে,পুকুর পাড়, নদীর ধার, যে কোনো নির্জন স্থান। সকাল, দুপুর,বিকেল,সন্ধ্যা কিংবা গভীর রাত। মোবাইলে যে শব্দটি কানে আসে তাতে মনে হয় মহড়া চলছে সেনা বাহিনীর ফায়ারিং স্কোয়ার্ডে। এটি একটি অনলাইন গেইম, একা কিংবা দুইজন অথবা তারও অনেক বেশি প্লেয়ার একসাথে মিলে খেলে চলেছে ৬/৭ বছর বয়সী থেকে শুরু করে ২৫/৩০ বছর বয়সী ছেলে মেয়েরা। স্মার্টফোনের ডিস্পেলের ক্ষতিকর আলো নষ্ট করছে চোখ অপর দিকে বেশি সময় ধরে খেলার জন্য ব্রেইনের উপরে পড়ছে মাত্রাতিরিক্ত চাপ। পর্যাপ্ত ঘুমের ঘাটতি পড়ছে তাদের। লেখাপড়া বাদ দিয়ে তার মূল্যবান সময় নষ্ট করছে এই গেমের পিছনে। যেন আমলে আনছেন না অভিভাবকসমাজ। চায়ের দোকানগুলো আধুনিকায়নের ফলে ওয়াই-ফাই কানেকশন এর পাসওয়ার্ড বিক্রি হচ্ছে সময় ধরে তা দৈনিক অথবা মাসিক চুক্তিতে ১০-১৫০ টাকা পর্যন্ত। বাবার কাছ থেকে নেওয়া পকেটমানি খরচ হচ্ছে এই ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড কিনতে অথবা মোবাইল কোম্পানীর মেগাবাইট প্যাকেজ কিনতে। কেউ কেউ টাকা জোগাড়ে ব্যর্থ হলে নিচ্ছে অন্য পন্থা, যা চুরি, ছিনতাইয়ের মত গর্হিত কাজ। সমাজের সচেতন মহলের কেউ নিষেধ করলে উল্টো অপমানিত হতে হচ্ছে।

গেইমের বাণ্ডেল কিনতে প্রয়োজন টাকা, রিচার্জের এই সকল টাকা জোগাড়ে চলে বিভিন্ন প্রকার অপরাধমূলক পথের অবলম্বন। বখাটেতে পরিণত হচ্ছে ভাল শিক্ষার্থীরা। যাদের ফোন নেই তারা স্মার্টফোনের মালিকদের সময় চুক্তিতে কিছু টাকা ভাড়া নিয়েও খেলে এই গেইম। যেহেতু অনলাইন গেম সেহেতু একে অপরের সাথে কথোপকথনও চালাতে পারে এই গেইম। সারাদিন মোবাইলে বুদ থাকা এই শিশু-যুবকদের নিয়ে চিন্তিত সচেতন মহল।
মাঠে ঘাটে দুপুরের প্রচণ্ড গরমের তাপে লোকালয় জন শুন্য স্থানে বসে টিম তৈরী করে চলে এই গেইম। গাছের ছায়ায়, চায়ের দোকানে, টিন এজার বসে আড্ডা দিতে দেখা যায় হরহামেসে।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। খেয়াল নেই বৈশ্বিক মহামারি করোনার তান্ডবের কথা। খেলার মাঠে ভিড়ছেনা তারা। অথচ অভয়নগরের ভৈরব উত্তর পূর্বাঞ্চলে প্রকাশ্যে মোবাইল প্রযুক্তির বিশেষ মাধ্যমে ফ্রী-ফায়ার খেলার আসর চললেও মাথাব্যথা নেই কারো।
জানাগেছে, এ অঞ্চলে ৫ শতাধিক চায়ের দোকানে প্রতিনিয়ত চলছে মোবাইলে এই গেইমের আসর। আধুনিক প্রযুক্তির অপ-ব্যবহার বিপুল হারে বেড়েছে এই অঞ্চলে।
এ অঞ্চলে ৬০ ভাগ চায়ের দোকানে ওয়াই ফাই সংযোগ। প্রচার রয়েছে চা খাইলে নেট ফ্রি আবার কোথাও কোথাও দৈনিক অথবা মাসিক চুক্তিতে এই নেটের ব্যবহারের অনুমতি নেওয়া যায়।

কখনও কখনও দুই দলে বিভক্ত হয়ে পঞ্চাশ থেকে শুরু করে হাজার টাকার বাজি চলে এই খেলায়। স্কুল কলেজ ছুটি করোনার সংক্রমণ ভয়ে,অনলাইন ক্লাস করার অজুহাতে মোবাইলের আড্ডা চলে এই ফ্রী-ফায়ার গেইমের মাধ্যমে।
অভয়নগর উপজেলার ৭ নং শুভরাড়া ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের আমতলা টু নওয়াপাড়া সড়কে রয়েছ ১১ টি চায়ের দোকান রয়েছে মোড়ল মার্কেট। সেখানে সকাল থেকে দুপুর, বিকাল থেকে গভীর রাত অবদি চলে মোবাইলে ফ্রী ফায়ার খেলা। প্রসাসনের লোক আসলেই কিছু বুঝে উঠার আগেই সাবধান তারা। গতকাল সরেজমিনে অভয়নগর উপজেলার আমতলা বাজার,সোনাতলা বাজার,জিয়ের তলা বাজার, শুভরাড়া ইউনিয়নের একাধিক বাজারে ছদ্মবেশে গেলে দেখা যায় ৪ জন,কোথাও তিন বা দুজন মাথানিচু করে বসে আছে।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে পরিবারের বখাটে বনে যাওয়া এ সব যুবকেরা হাস মুরগি নারকেল ছাগল কিংবা কবুতর চুরি করে নেটের টাকা জোগাড় করে থাকে। অনুসন্ধানে জানাগেছে ভূগিলহাট ঋষিপাড়ায় (পোতপাড়ার পাশে) বাগানের মধ্যে ও মল্লিকের হাটে ভরপুর ভাবে চলছে মোবাইলে ফ্রী ফায়ারের আসর। অভিযোগ রয়েছে মোবাইলে এই গেম খেলার জন্য কাউকেই ম্যানেজ করা লাগেনা। এছাড়াও বাঘুটিয়া ইউনিয়নের জয়খোলা গ্রামের উত্তর পাশে এবং শ্রীধরপুর ইউনিয়নের মালাধরা, হরিশপুর বাজারে রাতে বসে মোবাইলে এই আড্ডা।

স্থানীয় দোকানদার ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্যক্তিগণ জানালেন, নড়াইল সদর থানার ১২ নং বিছালী ইউনিয়নের চাকই,মধুরগাতী ও আকবপুর গ্রামে পাল্লাদিয়ে চলে এ আসর। এছাড়াও নড়াইল সদর ও অভয়নগর থানার সীমান্তবর্তী বাজার বর্ণীর মোড়ে ধুমছে চলছে এই গেইম। বিশেষ করে অভয়নগর থানার শুভরাড়া ইউনিয়নের বাশুয়াড়ী বাজার শুকপাড়ার বাজার কানাপুকুরের পাড়ে,শুভরাড়ার খেয়াঘাট, রানাগাতী বালুর মাঠে, সিদ্ধিপাশার নদীর চরে, গোঢাউন ঘাট,শ্মশানঘাটে, জয়রাবাদ, সোনাতলা বাজার, মাছের ঘেরে, বাঘুটিয়া ইউনিয়নের পোতপাড়া ও পাইকপাড়া ঋষিপল্লীতে। শ্রীধরপুর বাওড় এলাকায়,বর্ণি-হরিশপুর বাজারের পূর্ব পাশে, দক্ষিন নড়াইলের বিছালী ইউনিয়নের চাকই,মধুরগাতী, মির্জাপুর (নতুন রাস্তার) বিলের একাধিক ঘেরের পাড়ে, ৯ নং সিংঙ্গাসোলপুর ইউনিয়নের নদীর চরে সহ আরো কয়েকটি পয়েন্টে চলছে বিরাম হীন মোবাইলে এই গেইমের আড্ডা। এর কারনে ইতিমধ্য সমাজে বিশৃংখলা শুরু হয়েছে। সচেতন মহল জানিয়েছেন টিন-এজার এখন মোবাইলে এই গেইমের কারনে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে, তাদেরকে এ অভ্যাস থেকে সরিয়ে আনতে না পারলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নষ্ট হয়ে যাবে।
তারা আরো জানিয়েছেন, এখনই মোবাইল ব্যবহারে যুবসমাজ কে লাগাম টেনে ধরার উপযুক্ত সময়। এলাকার একাধিক ব্যক্তি দ্রুত মোবাইলে এই গেইমের ব্যাপারে অভিভাবকদের সচেতন হতে পরামর্শ দিচ্ছেন।

অভয়নগর এর ভৈরব উত্তরপূর্ব জনপদের পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জগণের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, তাদের জায়গা থেকে যতদূর সম্ভব সচেতন করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং অভিভাবকদের ডেকে তাদেরও বলা হচ্ছে, তাদের ছেলেদের যেন সামলে রাখে।

Check Also

আশাশুনির কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধে ধ্বস।।আতঙ্কিত এলাকাবাসী

আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের রোকন সম্মেলন অনুষ্ঠিতএস,এম মোস্তাফিজুর রহমান(আশাশুনি)সাতক্ষীরা প্রতিনিধি।।আশাশুনি উপজেলা জামায়াতের মাসিক রোকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।