প্রকৃত ভালোবাসা // সজীব নন্দী

ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই দেখছি একটা চড়ুই পাখি বাসা বানানোর কাজে ব্যস্ত। আমার ঘরের ভেন্টিলেটরটাই আজ থেকে তার বাসা হিসেবে ব্যবহৃত হবে। গতকাল বিকেলে বেলকনিতে বসে যখন এই ব্যস্ত নগরীর ব্যস্ত মানুষদের দেখায় আমি ব্যস্ত তখনই এই নতুন অতিথীর আগমন ঘটে। নতুন সংসার পেতেছে তাই হয়ত বাসার সন্ধানে বেরিয়েছিল। হয়ত আজ বিকেলের মধ্যেই হাজির হবে চড়ুই দম্পতি। মহান সৃষ্টিকর্তার কি অপূর্ব সৃষ্টি! এই ক্ষুদ্র জীবের মধ্যেও দিয়ে দিয়েছেন ভালবাসা, সাংসারিক জ্ঞান, মাতৃত্ববোধ। ভাবলে বিষ্ময়ের সীমা ছাড়িয়ে যায়। এখন প্রতিদিনই দেখা মেলে চড়ুই দম্পতির সাথে। আচ্ছা কবে, কিভাবে তাদের একে অপরের সাথে পরিচয় ও ভাবের বিনিময় হয়েছিল! কে কে উপস্থিত হয়েছিল তাদের বিয়েতে! এক এক সময় মনে এইসব অদ্ভুত প্রশ্ন জাগে। জানতে ইচ্ছে করে ওদের মধ্যেও কি ঝগড়া হয়? ওরা ও কি অভিমান করে কথা বলা বন্ধ করে? তারপর একজন অন্যজনের রাগ ভাঙায়?

কি আজব এই দুনিয়া! এই ছোট্ট চড়ুই তার ভালবাসার মানুষকে পেল অথচ রেল স্টেশনে সারাদিন ছেড়া ময়লা জামা কাপড় পরা জমির পাগল তার ভালবাসার মানুষকে পেল না। সারাদিন স্টেশনে বসে “অরু অরু” বলে চিৎকার কোরে কান্না করে আর বুক চাপড়ায়। পাগলেরও হয়ত বিষাক্ত অতীত থাকে। কি বেদনাদায়ক গল্প ছিল তার? কেন সে আজ পাগল? কেন সে পেল না তার অরু কে? কেউ কি কোন দিন তা জানতে পারবে! আচ্ছা ভালবাসার সংঘাটা কেন এক না? কেন এর সংঘা একেকজনের কাছে একেক রকম! এই ভালবাসার ও কি প্রকারভেদ আছে! বাইরে ঝিরঝির বৃষ্টি পড়ছে। খুব ইচ্ছে করছে প্রতিটা বৃষ্টির ফোটাকে কনাকে অনুভব করতে, প্রতিটা কনার ভালবাসা গায়ে মাখতে। জানালা খুলে দুহাত প্রসারিত করে দিলাম। এই বৃষ্টিও জনজীবনকে স্থবির করতে পারেনি।

রাস্তায় ছুটে চলা যানবাহন আর ছাতা মাথায় রাজপথে হেটে চলে চলা পথচারীদের দেখে মনে হলো এ জগতে ভালবেসে কেউ সুখি আছে আবার কষ্টে কেউ বা হয়েছে রাত জাগা নির্ঘুম নিশাচর-নিশাচরী পাখি। রাত জুড়ে কেউ ব্যস্ত থাকে সুখের আলাপনে। আবার কেউ বা কষ্টের স্মৃতির মাঝে সুখ হাতড়ে বেড়ায়। এইসব কষ্টে থাকা মানুষ গুলো সুখী মানুষের ভীড়েই ঘুরে বেড়ায় নিজেকে বাস্তবতার কঠিন চাদরে মুড়িয়ে। এদের কাছে দিন মানে নাট্যমঞ্চ আর রাত মানে অভিশাপ। সারাদিনের ব্যস্ত এ শহরে সব থেকেও কিছু একটার কমতি যেন থেকেই যায়। থেকে যায় বুক ভরা কষ্ট, কিছু দীর্ঘশ্বাস, না বলা অনেক কথা। তবুও দিনশেষে মুখে হাসির রেখা টেনে চলতে হয় নতুন এক অজানা পথের সন্ধানে, চলতে হয় অনেক পাওয়া না পাওয়াকে সাথে নিয়ে। প্রত্যেককেই হতে হয় একজন বড়মাপের অভিনেতা-অভিনেত্রী। এই বৃষ্টির মাঝে হেটে চলা প্রাণগুলোও হয়ত জানবে না যে জানালা দিয়ে দূর দীগন্তে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে থাকা এই চোখ জোড়াও তাদেরই মত কোন এক অভিনেত্রীর!

Check Also

আব্দুর রহমান কলেজের বিধিবহির্ভূত এডহক কমিটি বাতিল চেয়ে আবেদন

সূত্র ঃ তারিখ ঃ ২০-১০-২০২৪ ইংবরাবরজেলা প্রশাসকসাতক্ষীরা। বিষয় ঃ বিধিবহির্ভূত এডহক কমিটি বাতিল প্রসঙ্গে। জনাব,যথা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।