ইউনিয়ন প্রতিনিধি ( অভয়নগর) যশোর:
যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার ভৈরব উত্তর-পূর্ব জনপদের মানুষ পল্লীবিদ্যুতের ভেল্কিবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। পল্লী বিদ্যুতের ভেল্কিবাজির কথা এখন, ” টক অব দ্যা ভৈরব উত্তর-পূর্ব জনপদ” রূপ লাভ করেছে।
” আকাশ মেঘলা, বিদ্যুৎ নেই। বৃষ্টি ফোটা পড়েছে, বিদ্যুৎ নেই। গাছের পাতা নড়ছে, বিদ্যুৎ নেই। তারের উপর গাছের পাতা পড়েছে, বিদ্যুৎ নেই। ঝড় বাতাস ছাড়লেতো কথায় নেই। কতদিন পর বিদ্যুৎ পাব তার ইয়ত্তা নেই। বিদ্যুতের লোকজন হাতের কাছে পেতাম যদি বাড়ই শোয়ায় ফেলে দিতাম, তাতেও যেন রাগ মেটবেনা। আর সহ্য করা যায়না। দিনের মধ্যে কয়বার বিদ্যুৎ যেতে পারে? একবার, দুইবার, তিনবার যাক। তা-না দিনির মধ্যি কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ বার বিদ্যুৎ যায়। শান্তিমত কাজ করা তো দুরে থাক, ঘুমানোও যায় না।” গতকাল সকালে এসব কথাগুলো বলছিলেন, ভাটপাড়া এলাকার চায়ের দোকানে চা খেতে আসা লোকজন।তারা প্রত্যেকেই মুখ খিস্তি দিয়ে এসব বলছিলেন।তারা আরো বলছিলেন, ” এতে আমাদের বিদ্যুৎ বিলতো কম হচ্ছেনা বরং আরো বেশি হচ্ছে। বার বার কারেন্ট আসলি গেলি মিটার নাকি ধাক্কা খেয়ে বেশি ঘুরে বিদ্যুৎ বিল বেশি ওঠে। অনেকের ফ্রিজ,টিভি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ছেলে মেয়েদের স্কুল বন্ধ থাকায় তাদের পড়ার টেবিলে বসানো যায়না, যদিও বলে কয়ে বসানো হয় বিদ্যুৎ চলে গেলি আর তাও সম্ভব হয়না।”
গ্রামের মানুষ বিদ্যুতের উপর নির্ভর করে ছোট ছোট কুটির শিল্প গড়ে তুলেছে। যেমন-পোল্ট্রিফার্ম,কাঠশিল্প,রাইসমিল,স’মিল ইত্যাদি।সেখানেও উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটছে। দোকানদারেরা ঠিকমত দোকানদারি করতে পারছেনা। শিক্ষক সব্যসাচী বিশ্বাস বলেন, ” মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকরা বিদ্যুৎ না থাকায় ওয়াই ফাই সংযোগ থাকছেনা ফলে জুম ক্লাস কিংবা অনলাইন ক্লাস নিতেও পারছিনা এবং আপলোড করতে পারছিনা। এ ছাড়াও যে সকল শিক্ষার্থী এ ক্লাস করে তারাও বিদ্যুতের এই অবস্থার কারণে ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারছে না।
সরকরী-বেসরকারী অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ঠিকমত কাজ করতে পারছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারী কর্মকর্তা বলেন, “আমার অফিসে অনলাইনের অনেক কাজ, বিদ্যুতের এমন ভেল্কিবাজির কারণে ঠিকমত কাজ করা যাচ্ছেনা।বিষয়টি জানতে ভাটপাড়া অভিযোগ কেন্দ্রের মোবাইল নাম্বার সকল সময়ই ব্যস্ত দেখায়।
ভৈরব উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের বিদ্যুতের এমন অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে যশোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি -২ এর ডিজিএম আব্দুল্লাহ আল মামুন এ প্রতিবেদককে বলেন, ” এ অঞ্চলে আমাদের ৬০ কি.মি. বিদ্যুৎ সরবরাহ ও দেখভালের ক্যাপাসিটি আছে। শতভাগ বিদ্যুতায়ন করতে গিয়ে ভৈরব উত্তর অঞ্চলে মেইন এবং পার্শ্ব সংযোগসহ সর্বমোট ৪ শত ৫০ কি.মি. বিদ্যুৎ লাইন রয়েছে। যা নিয়ন্ত্রনের জন্য একটি মাত্র সিস্টেম রয়েছে। এটা কোনো লোড শেডিংয়ের জন্য হচ্ছেনা। দীর্ঘ লাইনের কোথাও যদি গাছ বা গাছের পাতা পড়ে কিংবা অন্য কোনো কারণে সমস্যা হয় তাহলে সমস্ত অঞ্চল বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। আমরা বাঘুটিয়ার পাইকপাড়াতে একটা সাব স্টেশন করছি। যার কাজ চলমান।আগামী ১৫/২০ দিনের মধ্যে এটা শেষ হবে বলে আশা করছি। আর তখনই এসব সমস্যা আর থাকবেনা বলে ডিজিএম জানান। আশু এই সমস্যা সমাধান না হলে এলাকার ভুক্তভোগী জনসাধারণের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হতে থাকবে।