অধিকাংশ মার্কিন সেনা দেশে ফিরে গেছে। ন্যাটোর বাহিনীও আর নেই। এই অবস্থায় আফগানিস্তানজুড়ে আক্রমণ জোরদার করেছে তালেবান।
ইতোমধ্যেই অনেকগুলো জেলার দখল নিয়ে নিয়েছে। সদ্য দখল করা এসব অঞ্চলে ব্যাপক লুটতরাজ চালাচ্ছে বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি।
কোথাও কোথাও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ভয়ে-আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে অধিবাসীরা। এমনটাই জানাচ্ছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। খবর এএফপির।
চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব বিদেশি সেনার আফগানিস্তান ছাড়ার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বেশিরভাগ (৯০ শতাংশ) সেনা আফগানিস্তান ছেড়েছে। ঘরে ফিরেছে জার্মান ও ইতালির সেনারাও। সর্বশেষ ব্রিটেনের অধিকাংশ সেনাই আফগানিস্তান ছেড়ে দেশে ফিরেছে বলে বৃহস্পতিবার এক ঘোষণায় জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
খবরে বলা হয়েছে, সেনা প্রত্যাহারের আগেই তালেবান দেশটির এক তৃতীয়াংশ এলাকা দখল করে নিয়েছে। পুরোপুরি প্রত্যাহার হলে তারা আবার ক্ষমতা দখল করতে পারে বলে জোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও আফগান সরকার দাবি করে আসছে, সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনী তালেবান দমনে সক্ষম। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। তালেবানের বিপক্ষে লড়তে আফগান বাহিনী হিমশিম খাচ্ছে। তালেবানের হামলা মুখে দেশ ছেড়ে আফগান বাহিনীর পালানোর ঘটনাও ঘটেছে। সম্মুখ অভিযানের ধারাবাহিকতায় বুধবার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বাঘদিস প্রদেশের রাজধানী কালা-ই-নও ঘিরে ফেলে হামলা শুরু করে তালেবান। তারা শহরের কিছুটা ভেতরে ঢুকেও পড়েছে। কয়েক ঘণ্টার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরও দখল করে নেয় তারা। তালেবান যোদ্ধাদের মোকাবিলায় পালটা হামলা চালাচ্ছে আফগান কমান্ডো বাহিনী। হামলা ও পালটা হামলায় রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে কালা-ই-নও। হামলার দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার শহরে কয়েকশ’ কমান্ডো যোদ্ধা মোতায়েন করে কর্তৃপক্ষ। দুপক্ষের মধ্যে তুমুল লড়াই অব্যাহত রয়েছে। আফগান সেনাবাহিনীর তরফ থেকে জানানো হয়েছে, তালেবানের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বেশ কিছু সেনারও মৃত্যু হয়েছে। লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকও আহত হয়েছে। বাঘদিস স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অন্তত ১০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর আগে গত মাসের (জুন) শেষের দিকে উত্তরাঞ্চলের কুনদুজ প্রদেশে হামলা করে তালেবান। এ সময় বহু সাধারণ নাগরিককে তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে এর যোদ্ধারা। সেইসঙ্গে চালায় লুটপাট। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, কুনদুজ প্রদেশের বাগ-ই শেরকাতের বাসিন্দা অভিযোগ করেছে, হামলার আগে লাউডস্পিকারে ঘোষণা দিয়ে অধিবাসীদের দুই ঘণ্টার মধ্যে ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় তালেবান যোদ্ধারা।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে প্রায় ছয়শ’ পরিবারকে ভিটে-মাটি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। এরপরই তাদের ঘরবাড়িতে লুটপাট চালানো হয় ও আগুন দেওয়া হয়। অধিবাসীরা জানিয়েছেন, আফগান সরকারের প্রতি সমর্থন দেওয়ায় বেসামরিক নাগরিকদের নানাভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে তালেবান। এ ব্যাপারে এক সাক্ষাৎকারে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সহযোগী পরিচালক প্যাট্রিসিয়া গসম্যান বলেছেন, সরকারের সমর্থন করায় নিরীহ নাগরিকদের ওপর প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে তালেবান। যোদ্ধাদের হাতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধ করার ক্ষমতা এর নেতাদের রয়েছে। কিন্তু সেটা করার কোনো ইচ্ছাই তারা দেখাচ্ছে না।’