কোপা আমেরিকার বহুলকাঙ্ক্ষিত ফাইনালে ব্রাজিলের মারাকানা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছে ফুটবলের দুই পরাশক্তি আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল। আর প্রথম একাদশে চমক হিসেবে নামা পিএসজি ফরোয়ার্ড আনহোল ডি মারিয়ার দুর্দান্ত এক গোলে ব্রাজিলকে হারাল আর্জেন্টিনা।
সেলেকাওদের ১-০ তে হারিয়ে কোপা আমেরিকার শিরোপা ঘরে তুলল আলবিসেলেস্তেরা। দেশের হয়ে শিরোনা পা পাওয়ার খরা মিটল লিওনেল মেসির।
আগের কয়েক ম্যাচে বদলি নেমে দুর্দান্ত খেলা আনহেল ডি মারিয়াকে আজ প্রথম একাদশে সুযোগ দেন কোচ স্কালোনি। আর সুযোগ পেয়েই নিজের জাত চিনিয়ে দেন ডি মারিয়া। তার গোলেই ব্রাজিলের বিপক্ষে কোপা আমেরিকার ফাইনালে লিড নিয়েছে আর্জেন্টিনা।
তবে দ্বিতীয়ার্ধে ফিরেই আর্জেন্টিনার জালের ঠিকানা খুঁজে নিয়েছে সেলেকাওরা। কিন্তু অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে গেছে সেই গোল। ফলে ম্যাচের ৫৩ মিনিট শেষেও ১-০ গোলে এগিয়ে থাকে আর্জেন্টিনা।
স্বস্তির নিঃশ্বাস বয়ে যায় আর্জেন্টাইন শিবিরে।
দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেই একের পর এক জোরাল আক্রমণ করতে থাকে ব্রাজিল। ৫২ মিনিটে সফলও হয়। ডি-বক্সের মধ্য থেকে আলবিসেলেস্তেদের জালে বল জড়িয়ে দেন রিচার্লিসন। কিন্তু আক্রমণের শুরুতে তিনি অফসাইডে থাকায় বাতিল করে দেন রেফারি উরুগুয়ান রেফারি এস্তেবান ওস্তোজিচ।
ম্যাচের শুরুতেই হলুদ কার্ড দেখেছেন ব্রাজিলের ফ্রেড। ম্যাচের ৩ মিনিটের মাথায় মন্তিয়েলকে ফাউল করার জন্য রেফারি কার্ড দেখিয়ে সতর্ক করেন তাকে।
১০ মিনিটের মধ্যে বেশ কয়েকটা কড়া ট্যাকল চোখে পড়ে। উভয় দলই একে অপরকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে নারাজ।
১৩ মিনিটের মাথায় বক্সে নেইমারের দিকে বল বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন রিচার্লিসন। তবে বাধা দেন ওতামেন্দি।
পেনাল্টি স্পটের কাছে পেয়ে ঠিকমতো শট নিতে পারেননি নেইমার। ওতামেন্দির পায়ে প্রতিহত হয় তা। এই ১৩ মিনিটে বারবার খেই হারাতে দেখা গেছে নেইমারকে।
২২ মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত এক গোলে আর্জেন্টিনাকে ১-০ এগিয়ে নেন ডি মারিয়া। ফাইনালের প্রথম একাদশে ডি মারিয়াকে ফিরিয়ে তার উপর আস্থা রেখেছিলেন আর্জেন্টিনা কোচ। আস্থার যথাযথ মর্যাদা রাখেন তিনি।
মাঝমাঠ থেকে দি পলের বাড়ানো বল ধলে ব্রাজিল গোলরক্ষক এডারসনের মাথার উপর তা জালে জড়িয়ে দেন ডি মারিয়া।
এক্ষেত্রে ব্রাজিল ডিফেন্ডার রেনান লোদির সামনে সুযোগ ছিল ডি মারিয়াকে প্রতিহত করার। যদিও তিনি ব্যর্থ হন। তার ভুলের সুযোগে আর্জেন্টিনা ম্যাচে লিড নিয়ে নেয়।
২০০৪ সালে সিজার দেলগাদোর পর ডি মারিয়া প্রথম আর্জেন্টাইন ফুটবলার, যিনি কোপার ফাইনালে গোল করলেন।
এছাড়া ২০০৫ কনফেডারেশন্স কাপের ফাইনালের পর এই প্রথম কোনো ফাইনালে গোল পেল দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
গোলটি দেখুন –
২৬ মিনিটের মাথায় ক্যাসেমিরোর শটকে ঠেকিয়ে দেন আজেন্টাইন গোলরক্ষক মার্তিনেজ। ৩০ মিনিটের খেলা শেষ হয়ে গেলেও ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমারকে সেভবে সক্রিয়ে দেখা যায়নি। ৩২ মিনিটে মেসির শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
২৫ গজের বিপজ্জনক জায়গা থেকে ফ্রি-কিক পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি ব্রাজিল। ৩৪ মিনিটে নেইমারের ফ্রি-কিক দেওয়ালে প্রতিহত হয়।
২৯তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে বাঁকানো শট নেন দি মারিয়া। সেই শট থামিয়ে দেন ব্রাজিল অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা। চার মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট লক্ষ্যে রাখতে পারেননি মেসি।
৪২ মিনিটের মাথায় এভার্টনের আক্রমণ প্রতিহত করেনি এমি. মার্তিনেজ।
৪৩তম মিনিটে রিশার্লিসনের ক্রসে মাথা ছোঁয়াতে পারেননি লুকাস পাকুয়েতা।
৪৪ মিনিটে নেইমারের কর্ণার থেকে বল ধরে আক্রমণ শানান রিচার্লিসন। যদিও তা মাঠের বাইরে চলে যায়।
প্রথমার্ধে ১ মিনিট সময় সংযোজিত হয়। তাতে সমতায় ফিরতে পারেনি তিতের শিষ্যরা। ডি মারিয়ার গোলে বিরতিতে ১-০ এগিয়ে আর্জেন্টিনা।
এক গোল পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে ব্রাজিল। প্রথমার্ধে আশানুরুপ না খেলায় ফ্রেডের পরিবর্তে রবার্তো ফিরমিনোকে মাঠে নামান ব্রাজিল কোচ তিতে।
৪৮ মিনিটের মাথায় রিচার্লিসন আর্জেন্টিনার বিপজ্জনক জায়গায় বল নিয়ে ঢুকে পড়েন। যদিও তা ফলপ্রসূ হয়নি।
৫১ মিনিটের মাথায় নেইমারকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন অর্জেন্টিনার লো সেলসো। ৫২ মিনিটের মাথায় আর্জেন্তিনার জালে বল জড়ান রিচার্লিসন। তবে অফসাইডের জন্য গোল বাতিল হয়।
৫৪ মিনিটের মাথায় পারেদেসকে তুলে নিয়ে রদরিগেজকে মাঠে নামান আর্জেন্টাইন কোচ স্কালোনি।
৫৫ মিনিটের মাথায় রিচার্লিসনের আক্রমণ প্রতিহত করেন আর্জেন্টিনার মহাপ্রাচীর মার্তিনেজ। ৬৩ মিনিটে এভার্টনকে তুলে নিয়ে ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে মাঠে নামায় ব্রাজিল। একই সময়ে লো সেলসোকে তুলে নিয়ে তাগলিয়াফিকোকে মাঠে নামায় আর্জেন্টিনা।
এরপর বেশ কয়েকটি ফাউলের দেখা মেলে।
৬৮ মিনিটের মাথায় নেইমারকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ডি পল।
৭০ মিনিটের মাথায় ডি পলকে ফাউল করে হলুদ কার্ড দেখেন ব্রাজিলের রেনান লোদি। ৭১ মিনিটে পাকুয়েতার শট নেন, যদিও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
এদিকে সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে ব্রাজিল। চারিদিকে যুদ্ধাংদেহী অবস্থা। ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ম্যাচ। ৭২ মিনিটের মাথায় তাগলিয়াফিকোকে ফাউল করার জন্য রেফারি হলুদ কার্ড দেখান ব্রাজিলের পাকুয়েতাকে।
৭৬ মিনিটে রেনান লোদি ও পাকুয়েতাকে তুলে নিয়ে ব্রাজিল মাঠে নামায় এমারসন ও বারবোসাকে।
৭৯ মিনিটে একসঙ্গে তিনটি পরিবর্তন আনেন স্কালোনি। রোমেরো, ডি মারিয়া ও এল মার্টিনেজকে তুলে নিয়ে মাঠে নামান পেজেল্লা, পালাসিয়স ও গঞ্জালেজকে।
৮১ মিনিটের মাথায় ক্ষিপ্রগতিতে বল এগিয়ে নিয়ে যান নেইমার। কিন্তু দৌড়ে এসে সামনে থেকে তাকে ফাউল করেন ওতামেন্দি। শাস্তি হিসেবে হলুদ কার্ডও দেখেন।
নেইমারকে এভাবে ফাউল করে ফেলে দেওয়ায়া আগ্রাসী আচরণের জন্য ৮২ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন ব্রাজিলের মারকিনহোস।
৮৩ মিনিটে পেজেল্লার আক্রমণে ওঠেন। তাকে ব্যর্থ করেন ভিনিসিয়াস।
৮৩ মিনিটের মাথায় ২৫ গজ দূর থেকে একটি চেষ্ট করেন দানিলো। শট ক্রসবারের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে উড়ে যায়।
৮৫ মিনিটের মাথায় কর্ণার পায় নেইমার। টানটান উত্তেজনার দেখা দেয়। কিক নেন নেইমার। এবার হেডে আর্জেন্টিনার জালে বল জড়ানোর চেষ্টা করেন থিয়াগো সিলভা। তবে হেড লক্ষ্যে রাখতে পারেননি সিলভা। বল ক্রসবারের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে চলে যায়।
৮৭ মিনিটের মাথায় বারবোসার শটও প্রতিহত করে দেন আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক মার্তিনেজ। ৮৯ মিনিটের মাথায় হলুদ কার্ড দেখেন আর্জেন্টিনার মন্তিয়েল।
গোটা ম্যাচজুড়েই সেভাবে ছন্দ ছিলেন না মেসি। ৮৯ মিনিটের মাথায় গোলের সহজ সুযোগ পান মেসি। ব্যবধান ২-০ তে বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ ছিল। ৬ গজ দূরত্ব থেকে ব্রাজিলের গোলরক্ষক এদারসনকে পরাস্ত করলেই জালের দেখা পেতেন মেসি। কিন্তু ব্যর্থ হন তিনি।