প্রফেসর এবনে গোলাম সামাদের ইন্তেকাল, জাতী হারলো এক অমূল্য সম্পদ

রাসেল হোসেনঃ

শতকের শ্রেষ্ঠ সন্তান, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চিন্তাবিদ, কলামিস্ট, বুদ্ধিজীবি,সমাজ সংস্কারক, প্রফেসর এবনে গোলাম সামাদ আজ সকাল সাড়ে দশটায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক প্রফেসর ড. এবনে গোলাম সামাদ গত মাসের (জুলাই) প্রথম দিকে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে ৬ জুলাই নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা পজিটিভ আসে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। অক্সিজেন দিয়ে রাখতে হয়েছিল। ভর্তির পর থেকে তাঁর অবস্থা কখনো সামান্য উন্নতি আবার কখনও অবনতি হয়। বিভিন্ন মহল থেকে তাঁর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়েছিল।

এবনে গোলাম সামাদ বিরল প্রতিভার একজন অনন্য লেখক ও কলামিস্ট ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। বিজ্ঞান তিনি শিখেছেন ও শিখিয়েছেন পদ্ধতিগতভাবে। তার একটি বৈজ্ঞানিক মানস ও স্বকীয় চিন্তারীতি গড়ে উঠেছে। এই বিষয়ে তার সমৃদ্ধ ইউরোপীয় উচ্চশিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতাও রয়েছে।

তিনি লিখেছেন: আমি ছিলাম, ঐ যাকে সাধারণভাবে বলে অভিজ্ঞতাবাদী (Empiricist)। সবকিছু যুক্তি দিয়ে প্রমাণিত হয় না। কেউ যদি বলে, রাজশাহীর বাজারে ১৪০ রকম আম বিক্রি হয়, তবে তার কথাটা সত্য কি না, সেটা জানবার জন্য যেতে হবে রাজশাহীর বাজারে। বিশুদ্ধ যুক্তি দিয়ে এটার সত্য-মিথ্যা প্রমাণ করা যাবে না।

এখান থেকে স্পষ্ট যে তিনি পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণমূলক অভিজ্ঞতাকে সবচাইতে গুরুত্ব দিতেন। আর এখানেই নিহিত রয়েছে তার নৈর্ব্যক্তিক, নির্মোহ, বস্তনিষ্ঠ এবং ব্যবহারিক বৈজ্ঞানিক মানসের উৎস।

তার আরেকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল যা তার লেখার পরতে পরতে দৃশ্যমান ছিল। সেটি হল এদেশের গণমাধ্যমে ও বুদ্ধিবৃত্তির বলয়ে বহুল প্রচলিত যেসব ভাষ্য ও বয়ান পুনরাবৃত্তির মধ্য দিয়ে কর্তৃত্ব করছে তিনি সেগুলিকে তার নিজস্ব পড়াশুনা, জ্ঞান ও বিচার-বিশ্লেষণ দিয়ে যাচাই বাছাই করে নেন। তিনি এমন কোন দল বা পক্ষ অবলম্বন করেননি, যেখানে তথ্য ও সত্যের চাইতে রঙ মাখানো প্রচার-প্রপাগাণ্ডাই মুখ্য। একারণে তাকে এদেশে বহুল প্রচলিত ও প্রচারিত মোটা দাগের বোকা বোকা বয়ানগুলো পুনরুৎপাদন করতে দেখা যায়নি। বরঞ্চ তিনি নিঃস্বার্থভাবে ও নির্মোহভাবে তার জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে প্রতিটি বিষয়কে দেখতে, বুঝতে ও বোঝাতে চেয়েছেন।

তার মৃত্যুতে দেশপ্রেমিক জনতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহল শোক প্রকাশ করেছেন।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

Check Also

৩০ জুলাই পর্যন্ত অনেক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, সংগ্রামে যুক্ত হবে কি না: সারজিস আলম

জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।