ইউনিয়ন প্রতিনিধি,অভয়নগর, যশোরঃ
যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত জুলাই-আগষ্ট মাসে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার ঊর্ধ্বগামী ভাবটা জনমনে ভীতির সঞ্চার করছে। আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সী মানুষ।
চলমান আগষ্ট মাসের ২৩ তারিখ সোমবার পর্যন্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছিল ১৫ জন। হঠাৎ ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে আর তা সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। নওয়াপাড়া পৌরসভাধীন এলাকায় মশক নিধন কর্মসূচি চলমান থাকলেও এই পরিস্থিতিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে মশক নিধন কার্যক্রম হাতে নেয়া অত্যন্ত জরুরী।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৪ জন, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে ১ জন করে ২ জন, এপ্রিল, মে ও জুন মাসে ১ জন করে ৩ জন, জুলাই মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৭ জন এবং চলতি আগষ্ট মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত ভর্তি করা হয়েছে ৮ জনকে। বিগত কয়েক মাসে চিকিৎসা নিয়েছেন মোট ২৪ জন ডেঙ্গু রোগী।
তবে জুলাই ও আগষ্ট মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি। এখনও পর্যন্ত চিকিৎসারত আছেন ১ জন। বাকি রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মৃত্যু হার শুণ্য। পৌরসভাধীন এলাকায় কম হলেও গ্রামীন পর্যায়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
নওয়াপাড়া পৌরসভার মেয়র সুশান্ত কুমার দাস শান্ত বলেন, মশক নিধনকল্পে নওয়াপাড়া পৌরসভার কার্যক্রম চলমান। জনসচেতনতার পাশাপাশি চলতি আগষ্ট মাসের শুরু থেকে আজ-অবধি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মশক নিধন প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। পৌরবাসীর সেবায় পৌরসভা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে।
বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর কোন ইউনিয়নে মশক নিধন কার্যক্রম করা হয়নি। যে কারণে মশার কামড়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গ্রাম অঞ্চলে বেশি। ইউপি চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে মশক নিধণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। উপজেলার শ্রীধরপুর ইউনিয়নের শংকরপাশা গ্রামবাসীর অভিযোগ, পৌর এলাকায় মশক নিধন করা হলেও ইউনিয়ন পর্যায়ে মশক নিধনের ব্যাপারে উপজেলা কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না? সিদ্ধিপাশা ইউনিয়নের আমতলা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, গ্রাম হবে শহর, এই পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাহলে গ্রামের মানুষ সরকারিভাবে মশক নিধন কার্যক্রমের আওতায় আসছে না কেন?
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস এম মাহমুদুর রহমান রিজভী জানান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা। আমরা নিজেরাই পারি ডেঙ্গু মশার বিস্তার প্রতিরোধ করতে। সেক্ষেত্রে নিজ বাড়ির চারিপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং জমে থাকা পানি অপসারণ করতে হবে। এরপরও যদি তীব্র জ্বরের সঙ্গে শরীরের প্রচন্ড ব্যাথা, ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর, পেটে ব্যাথা, শরীরের বিশেষ হাড়, কোমড়, পিঠসহ অস্থি সন্ধি এবং মাংসপেশীতে তীব্র ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা অনুভব হয় তাহলে দ্রুত নিকটস্থ সরকারি হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় ডা. এস এম মাহমুদুর রহমান রিজভী নিজে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান। তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুর রহমান মুঠোফোনে জানান, ইউনিয়ন পর্যায়ে মশক নিধনের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে কোন প্রস্তাব এখনও আসেনি। দ্রুত সময়ের মধ্যে ইউনিয়ন পর্যায়ে মশক নিধন করার বিষয়ে তিনি কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন ।