কাবুল বিমানবন্দরে তালেবান মুখপাত্র, ‘এই বিজয় সকলের’

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন নেতৃত্বের বহুজাতিক বাহিনীর প্রত্যাহারকে দেশটির বিজয় হিসেবে উল্লেখ করে তালেবান মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেছেন, এই বিজয় আফগানিস্তানের সকলের। মঙ্গলবার কাবুলের হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই কথা বলেন তিনি।

এর আগে সোমবার মধ্যরাতের আগে আফগানিস্তান থেকে সর্বশেষ মার্কিন সৈন্যকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।

মার্কিন বাহিনীর প্রত্যাহারের পর তালেবান যোদ্ধারা বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনে জবিউল্লাহ মুজাহিদ ২০ বছর দখলদারিত্বের পর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীর প্রত্যাহারকে ‘এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, আফগানিস্তান এখন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র।

তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো সন্দেহ নেই আফগানিস্তান ইসলামী আমিরাত স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি। যুক্তরাষ্ট্র সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের লক্ষ্য এখান থেকে অর্জন করতে পারেনি।’

সংবাদ সম্মেলনে মুজাহিদ প্রতিজ্ঞা করেন, আফগানরা তাদের স্বাধীনতা, মুক্তি ও ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষা করবে।

জবিউল্লাহ মুজাহিদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পাশ্চাত্যের সাথে কূটনীতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় আফগানিস্তান চেষ্টা চালিয়ে যাবে।

২০০১ সালে নাইন-ইলেভেনের সন্ত্রাসী হামলার জেরে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ হামলার জন্য আলকায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে দায়ী করেন। ওই সময় আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালেবান সরকারের কাছে তাদের আশ্রয়ে থাকা ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন প্রশাসনের হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানান বুশ।

তালেবান সরকার ওসামা বিন লাদেনকে তুলে দেয়ার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে মার্কিনিদের কাছে প্রমাণ চায়। প্রমাণ ছাড়া তারা ওসামা বিন লাদেনকে মার্কিন প্রশাসনের কাছে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানায়।

বুশ প্রশাসন ও তালেবানের মধ্যে বিরোধের জেরে ২০০১ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানে আগ্রাসন শুরু করে মার্কিন বাহিনী। অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসজ্জ্বিত মার্কিন সৈন্যদের হামলায় তালেবান সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়।

তবে একটানা দুই দশক যুদ্ধ চলতে থাকে দেশটিতে।

এরইমধ্যে আফগান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো জোটের সদস্য দেশগুলোও যুক্ত হয়। মার্কিনিদের সমর্থনে নতুন প্রশাসন ও সরকার ব্যবস্থা গড়ে উঠে দেশটিতে।

২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে মার্কিন সৈন্যদের এক ঝটিকা অভিযানে নিহত হন ওসামা বিন লাদেন। ২০১৩ সালে অজ্ঞাতবাসে তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের মৃত্যু হয়।

তা স্বত্ত্বেও তালেবান যোদ্ধারা আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখে।

দীর্ঘ দুই দশক আফগানিস্তানে মার্কিন নেতৃত্বের বহুজাতিক বাহিনীর দখলের পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের দোহায় এক দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করতে সম্মত হয় যুক্তরাষ্ট্র। এর বিপরীতে আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে তালেবান সম্মত হয়।

চলতি বছরের মে মাসে সম্পূর্ণ সৈন্য প্রত্যাহারের কথা থাকলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এপ্রিলে এক ঘোষণায় ১১ সেপ্টেম্বরে নাইন-ইলেভেনের ২০তম বার্ষিকীতে সৈন্য প্রত্যাহার শেষ করার কথা জানান। পরে জুলাই সময়সীমা আরো কমিয়ে এনে ৩১ আগস্টের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন তিনি।

তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই সোমবার আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেয়া হলো।

মার্কিনিদের সাথে চুক্তি অনুসারে ক্ষমতাসীন থাকা মার্কিন সমর্থনপুষ্ট আফগান সরকারের সমঝোতার জন্য তালেবান চেষ্টা করলেও দুই পক্ষের মধ্যে কোনো সমঝোতা হয়নি। তালেবানের অভিযোগ, আশরাফ গনির নেতৃত্বাধীন আফগান সরকার দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মে মাসে বহুজাতিক বাহিনীর প্রত্যাহারের মধ্যেই পুরো দেশের নিয়ন্ত্রণে অভিযান চালানো শুরু করে তালেবান।

৬ আগস্ট প্রথম প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে দক্ষিণাঞ্চলীয় নিমরোজ প্রদেশের রাজধানী যারানজ দখল করে তারা। যারানজ নিয়ন্ত্রণে নেয়ার ১০ দিনের মাথায় ক্ষমতাচ্যুৎ হওয়ার ২০ বছর পর কেন্দ্রীয় রাজধানী কাবুলে প্রবেশ করে তালেবান যোদ্ধারা।

সূত্র : আলজাজিরা

Check Also

বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন

দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।