তালেবানদের সঙ্গে মার্কিন সেনাদের গোপন বোঝাপড়া। তার ভিত্তিতেই কাবুল বিমানবন্দরের গেট পর্যন্ত মার্কিনি এবং পাসপোর্টধারীদের নিরাপত্তা প্রহরা দিয়ে পৌঁছে দিয়েছে তালেবানরা। দু’জন প্রতিরক্ষা বিষয়ক কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন। এর মধ্যে একজন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ অপারেশন ফোর্স ওই বিমানবন্দরে একটি ‘সিক্রেট গেট’ বা গোপন গেট তৈরি করে। প্রতিষ্ঠা করে একটি ‘কল সেন্টার’। সেখান থেকে মার্কিনিদের উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছিল। একজন সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, তালেবানদের সঙ্গে এই বোঝাপড়া চমৎকারভাবে কাজ করেছে। অনানুষ্ঠানিক ওই নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল মার্কিনি এবং ঝুঁকিতে থাকা আফগানদের সাহায্য করার জন্য।
কিন্তু শুরুতে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। মার্কিন নাগরিক এবং আইনগত স্থায়ী অধিবাসীদের প্রথম দিকে ওই গেট দিয়ে প্রবেশে বাধা দিচ্ছিল তালেবানরা।
প্রতিরক্ষা বিষয়ক দুই কর্মকর্তা বলেছেন, বিমানবন্দরের কাছেই আগে থেকে প্রতিষ্ঠা করা একটি ‘মাস্টার পয়েন্টে’ মার্কিনিদের জড়ো হওয়ার জন্য নোটিশ করা হয়েছিল। সেখানে তাদের পরিচয় ও কাগজপত্র চেক করে তালেবানরা। এরপর অল্প দূরেই স্থাপন করা ওই ‘সিক্রেট গেট’-এ তাদেরকে পৌঁছে দেয়া হতো। এসব গেটের প্রহরায় ছিল মার্কিন সেনারা। আফগানরা যখন বিপুল সংখ্যায় ভিতরে প্রবেশের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন, তখন মার্কিনিদের সরিয়ে নেয়ার জন্য এই গোপন ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়। ওই গেটে তালেবানরা প্রহরা দিয়ে মার্কিনিদের পৌঁছে দিচ্ছে, এ দৃশ্য দেখতে পেতো মার্কিন সেনারা।
তবে যুক্তরাষ্ট্রে এমন অনেক সূত্র আছে, যারা আফগানিস্তান থেকে পলায়নরতদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন। তারা বলেছেন, কাবুলে মার্কিন নাগরিক এবং পাসপোর্ট ধারীদের মধ্যে অবিশ্বাস ছিল যে, তাদেরকে তালেবানদের কবল থেকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হবে। অনেকে মনে করছেন তাদেরকে ভুল নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।
তবে এই তালেবানদের সঙ্গে গোপন সমঝোতার বিষয়টি এখন পর্যন্ত প্রকাশিত হয়নি। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র উদ্বেগে ছিল যে, এ বিষয় প্রকাশ হলে তালেবানদের মধ্যে বিপরীত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে আইএস-কে যদি বুঝতে পারে তালেবানরা মার্কিনিদের প্রহরা দিয়ে পৌঁছে দিচ্ছে, তাহলে হামলার ঝুঁকি বেড়ে যেতো। ফলে বিষয়টি অতিমাত্রায় স্পর্শকাতর ছিল বলে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিষয়ক ওই দুই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। এ কারণে তারা নাম প্রকাশ করতে চান না। ওদিকে তালেবানদের বিরুদ্ধে শপথ নেয়া শত্রু হলো আইসিস বা আইএস। তারা গত বৃহস্পতিবার কাবুল বিমানবন্দরের গেটে আত্মঘাতী বোমা হামলার দায় স্বীকার করেছে। ওই হামলায় ১৪ মার্কিনি সহ কমপক্ষে ২০০ জন নিহত হয়েছেন।
সিএনএন বলেছে, তালেবানদের সঙ্গে সামরিক ও কূটনৈতিক যোগাযোগ কয়েক বছর ধরে চলমান যুক্তরাষ্ট্রের। এই যোগাযোগ রাজনৈতিক এবং যুদ্ধ বন্ধ বিষয়ক। কিন্তু উদ্ধার অভিযানে তালেবান এবং মার্কিন সেনাদের মধ্যে গোপন বোঝাপড়া অপ্রত্যাশিত এক কৌশলগত সহযোগিতা। গত সপ্তাহে কাবুল সফর করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিচালক উইলিয়াম বার্নস। এ সময়ে তিনি সাক্ষাত করেছেন তালেবান নেতা আবদুল গণি বারাদারের সঙ্গে। তার এ অস্বাভাবিক সফরের সঙ্গে তালেবান-মার্কিন গোপন বোঝাপড়ার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।
পুরো উদ্ধার অভিযানে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা মনে করেছেন, তালেবানরা সহযোগিতা করছে। সিনিয়র কর্মকর্তারা বার বার জোর দিয়ে বলেছেন, মার্কিনিদের জন্য ‘নিরাপদ সুযোগ’ করে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তালেবানরা। একজন কর্মকর্তার মতে, তালেবানদের এই গোপন প্রহরায় গেট পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার ঘটনা দিনে বেশ কয়েকবার করে ঘটেছে। যেসব স্থানে মার্কিনিদের জড়ো করা হতো তাকে বলা হয় মাস্টার পয়েন্ট। এমন একটি মাস্টার পয়েন্ট ছিল কাবুল বিমানবন্দরের ঠিক বাইরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফলে মার্কিন সেনারা মার্কিনিদের গতিবিধি কি হচ্ছে তা পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হতেন।