ই-কমার্স প্রতারণা ঠেকাতে নজরদারি বাড়ানো দরকার – বিলাল মাহিনী

করোনা অতিমারিতে ই-সেবা বেড়েছে। আর প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে ই-কমার্স কারবারীরা। পণ্য অর্ডারের দুইমাস অপেক্ষার পরও (কোম্পানির নিয়ম-নীতির শর্ত অনুযায়ী) তা না পাওয়াকে অথবা নিম্নমানের পণ্য প্রাপ্তিকে ই-কমার্স প্রতারণা বলা হয়ে থাকে। বর্তমানে সরকারও ই-কমার্স প্লাটফর্মকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বেশ কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ই-কমার্স মানুষের আস্থার প্রতিদান দিতে অনেকটাই ব্যর্থ হচ্ছে। চলতি বছর জুলাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ই-কমার্স সংক্রান্ত একটি নীতিমালা জারি করেছে। সেই নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনলাইনে কেনার সময়ই বিক্রেতাকে বলতে হবে যে, ক্রেতা শহরের হলে ৪দিনের মধ্যে ও গ্রামাঞ্চলে হলে ১০ দিনের মধ্যে পণ্য পৌঁছাতে হবে। ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছানোর রিসিভিং রিসিট অনলাইনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে, তারা বিক্রেতাকে টাকা দেবে, তার আগে নয়। বোঝা গেলো সরকার ই-কমার্স সম্পর্কে সজাগ হয়েছেন। এর আগে সরকার সজাগ-সচেতন, এমনটা কখনোই বোঝা যায়নি বা দেখিনি। এজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ধন্যবাদ পেতেই পারে।
ইতিমধ্যে এই বর্ধিষ্ণু ডিজিটাল  বাণিজ্য বিশেষ করে ই-কমার্স খাত নিয়ে বেশ সমালোচনাও উঠেছে। কিছু কিছু ই-কমার্স কোম্পানির পণ্য কিনে ভোক্তাদের ঠকে যাওয়া, বিক্রেতা কর্তৃক নিম্নমানের পণ্য প্রদান, টাকা নিয়ে পণ্য না দেয়া, পণ্য বিক্রির পরেও গ্রাহক কর্তৃক পণ্য গ্রহণ না করা বা ফিরিয়ে দেয়াসহ কিছু ই-কমার্স কোম্পানির অনেকটা ব্যাংকের মতো আচরণ করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।
পণ্য কিনে অনেক ক্রেতার প্রতারিত হওয়ারও অভিযোগ এসেছে। অনলাইনে এক ধরনের পণ্য প্রদর্শন করে ডেলিভারি দিচ্ছে নিম্নমানের বা অন্য পণ্য। অনেক সময় অর্ডার নিয়ে পেমেন্ট পাওয়ার পর পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে ফেসবুক পেজ বা ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়। ফলে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছে এবং অনলাইনে কেনাকাটায় আগ্রহ হারাচ্ছে।

১৯ সেপ্টেম্বর দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত যথাযথ আইনি কাঠামোতে আনা দরকার, যাতে কোনো প্রতিষ্ঠান প্রতারণার আশ্রয় নিলেও সহজে গ্রাহকের ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যায়।’
ই-কমার্সের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক অনলাইন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়্যার হাউজ থাকতে হবে। থাকতে হবে ডেলিভারি ভ্যান ও দক্ষ কর্মীবাহিনী, যারা ঢাকা মহানগর ও দেশের সব শহর ও উপজেলা পরযায়ে পণ্য যথাসময়ে ডেলিভারি দিতে পারে। আমরা বলবো, সরকার যদি সত্যই ই-কমার্সের উন্নতি চান, তাহলে এর পূর্ণাঙ্গ নীতিমাল,যা হবে যুগোপযোগী ও অগ্রগামী চিন্তার, তা বাস্তবায়ন করতে হবে। এখনই এই ই-কমার্স-এর লাগাম টেনে ধরা জরুরি। নীতিমালার বাইরে, এদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে হবে। বাকি সব অনলাইন বিজনেস স্থগিত করে নতুন নীতিমালার আলোকে তাদের পুনরায় তাদের বিজনেস চালু করার অনুমতি দেয়া যেতে পারে।
ই-কমার্সের নামে প্রতারণা বন্ধ হোক। কেননা, প্রতারণা প্রমাণিত হলে ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় আইনে শাস্তির বিধান রয়েছে। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নিয়ম-নীতির যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে ই-কমার্স এগিয়ে যাক, এই প্রত্যাশায়।

বিলাল মাহিনী, কবি, কলামিস্ট ও সাংবাদিক। নির্বাহী সম্পাদক : ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র, যশোর।

Check Also

সাতক্ষীরায় বিজিবির অভিযানে দশ লাখ টাকার মালামাল আটক

সাতক্ষীরা ও কলারোয়া সীমান্তে চোরাচালান বিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে মাদকদ্রব্যসহ প্রায় দশ লক্ষ টাকার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।