পীরগঞ্জে হামলা : মূল হোতা সৈকত কারমাইকেল কলেজের ছাত্রলীগ নেতা

রংপুরের পীরগঞ্জে সংখ্যালুঘুদের বাড়িঘরে হামলা ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনায় র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার সৈকত মন্ডল কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের নেতা। এ ঘটনায় তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

শনিবার ঢাকায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাব জানিয়েছে, রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগে সৈকত মণ্ডল (২৪) নামের এক শিক্ষার্থী নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। পরিতোষ সরকারের দেয়া পোস্ট ফেসবুকে শেয়ার করে বিভিন্ন ধরনের উসকানিমূলক মন্তব্য এবং মিথ্যা পোস্টের মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে স্থানীয় লোকজনকে উত্তেজিত করেন সৈকত। ঘটনার দিন একটি মসজিদ থেকে মাইকিংয়ের মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে স্থানীয় লোকজনকে জড়ো করেন তাঁর সহযোগী রবিউল ইসলাম (৩৬)। এর পরই হামলা চালানো হয়।

র‌্যাব জানায়, সৈকতের বাবার নাম মো. রাশেদুল হক। তার বাড়ি পীরগঞ্জের কসবা বড় করিমপুর এলাকায়। আর রবিউলের বাবার নাম মো. মোসলেম উদ্দীন। তার বাড়িও একই এলাকায়। এর আগে শুক্রবার গাজীপুরের টঙ্গী থেকে সৈকত ম-ল ও রবিউল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর দুজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পীরগঞ্জের বড়করিমপুরে পরিতোষ সরকার ও উজ্জ্বল নামের দুই তরুণের মধ্যে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল। এর জের ধরে পরিতোষের ধর্ম নিয়ে উজ্জ্বল কটূক্তি করেন। পরে পরিতোষ ফেসবুক মেসেঞ্জারে উজ্জ্বলের ধর্ম নিয়ে পাল্টা মন্তব্য করেন। পরিতোষের ওই মন্তব্য ফেসবুকে পোস্ট করেন উজ্জ্বল।

উজ্জ্বলের ওই পোস্ট সৈকত মণ্ডল আবার তার নিজের ফেসবুক পেজে ছড়িয়ে দেন। কুমিল্লার ঘটনার পর থেকেই সৈকত নানা উসকানিমূলক পোস্ট দিচ্ছিলেন। পরিতোষ ও উজ্জ্বলের দ্বন্দ্বের ঘটনাকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছিলেন সৈকত। তার একটি ফেসবুক পেজ আছে। সেখানে তার প্রায় তিন হাজার অনুসারী রয়েছে।

র‌্যাব আরো জানায়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে একটি ‘দুর্বল সময়ের’ জন্য অপেক্ষা করছিলেন সৈকত। পরিতোষের বার্তাকে কেন্দ্র করে সৈকত উসকানি ছড়ানোর পাশাপাশি নেতৃত্ব দিয়ে হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন।

র‌্যাব জানায়, সৈকত জানিয়েছেন যে তিনি রংপুরের একটি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে নিজে থেকে প্রচার করে থাকতে পারেন। তবে এ–সংক্রান্ত কোনো তথ্য–প্রমাণ তিনি দিতে পারেননি। সৈকত বিভিন্ন সময় ফেসবুকে নিজের সম্পর্কে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়েছেন। কোনো কোনো সময় তিনি নিজেকে ছাত্রনেতা দাবি করেছেন। বিভিন্ন দলের কর্মী হিসেবেও নিজেকে পরিচয় দিয়েছেন। তবে এ–সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি।

এদিকে কারমাইকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগ সৈকত মণ্ডলকে ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। কারমাইকেল কলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাইদুজ্জামান সিজার জানান, সৈকত মন্ডল কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের দর্শন বিভাগের সহ সভাপতি ছিলেন। পীরগঞ্জের ঘটনা নিয়ে আপত্তিকর পোস্টের কারণে তাকে ঘটনার দিনই ছাত্রলীগের সকল কার্যক্রম ও পদবি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, ২০১৭-১৮ সেশনে সৈকত কারমাইকেল কলেজে দর্শন বিভাগে ভর্তি হন। এছাড়াও কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জাবেদ আহমেদ স্বাক্ষরিত এক পেস বিজ্ঞপ্তিতে সৈকত মণ্ডলকে দলীয় শৃঙখলাভঙ্গের অভিযোগে দল থেকে অব্যাহতি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। সেখানে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ১৮ অক্টোবর।
দলীয় সূত্র জানায়, কারমাইকেল কলেজ ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে রংপুরে ছাত্রলীগের প্রত্যেকটি কার্যক্রমে তার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল।


Please follow and like us:

Check Also

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তান নিয়ে ট্রেনের নিচে নারীর ঝাঁপ: মারা যান মা-ছেলে

হাজীগঞ্জে এক বছরের সন্তান আব্দুর রহমানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন মা তাহমিনা (২৩)। এতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।