সাগরের মাঝে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশ্যে মুগ্ধ পর্যটকরা:সাড়ে ৩ কোটি টকার রাজস্ব আদায়ের টার্গেট
আবু সাইদ বিশ্বাস: সুন্দরবনের দুবলার চর থেকে ফিরে: সৌন্দর্য্য আর বৈচিত্রে ভরপুর সুন্দরবনের দুবলার চর। জেলে পল্লী হিসেবে পরিচিত চরটি বর্তমানে শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে আজ থেকে জমজমাট হতে শুরু করেছে। সুন্দরবন ঘেঁষা কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে প্রায় ৮১ বর্গমাইলের বিচ্ছিন্ন এই চরের নাম ‘দুবলা’। চরটিকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার হানছানি পাচ্ছে বাংলাদেশ। সুন্দরবনের গহীন অরণ্যের পাশে সাগরের মাঝে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মনোমুগ্ধকর দৃশের দেখা মেলে এখান থেকে। ধু-ধু বালুকাময় এই চর সংলগ্ন বনে শত শত চিত্রা হরিণের অবাধ এবং অন্যদিকে সমুদ্রের তরঙ্গমালার হাতছানি যেকোন পর্যটককে বিমুগ্ধ ও আনমনা করে তোলে। শুরু হয়েছে পুরোদমে শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ। বঙ্গোপসাগর উপকূলে দুবলারচর, আলোরকোল, নারকেল বাড়ীয়া, শেলারচর ও মেহেরআলীর চর নিয়ে সুন্দরবনের সর্ববৃহৎ সামুদ্রিক মাছ শুঁটকি পল্লী কেন্দ্র দুবলার অবস্থান। চলতি শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে ভীষণ জমজমাট হয়ে উঠেছে সুন্দরবনের দুবলার চরের জেলে পল্লী। সমুদ্র থেকে মাছ এনে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরি করছেন হাজার হাজার জেলেরা। মাছ ধরার এ মৌসুম আজ থেকে শুরু হয়ে চলবে ৩১ মার্চ পর্যন্ত।
সাগর থেকে মাছ ধরে জেলেদের ফিরে আসার দৃশ্য ও শুঁটকি তৈরি এবং বেচা বিক্রির দৃশ্য সত্যিই মনোলোভা ও উপভোগযোগ্য। বর্ণনাতীত এ অপার্থিব দৃশ্য সুন্দরবনের দুবলার চরের জেলে পল্লী ছাড়া আর কোথাও মেলা ভার! সরেজমিনে দেখে গেছে, সুন্দরবনের দক্ষিণে অবস্থতি দুবলার চরের অস্থায়ী শুঁটকি পল্লীর ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছে ছোন ও বাঁশ দিয়ে। সাগর থেকে ধরে আনা মাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি উৎপাদনের ধুম পড়েছে এ পল্লীতে। বাঁশের মাঁচা করে ও পাটিতে খোলা আকাশের নিচে রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় শুঁটকি। এখানে ভ্রমণে আসা পর্যটকরা ভীষণ মুগন্ধতা নিয়ে শুঁটকি কিনে নিয়ে যায় নিজ নিজ গন্তব্যে।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শুটকি খাত থেকে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট ধরা হয়েছে সাড়ে ৩ কোটি। গত ২০১৮-১৯ শুঁটকি আহরণ মৌসুমে জেলেদের আহরিত ৪১ হাজর ৫৪ কুইন্টাল শুঁটকি থেকে বনবিভাগ ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ও ২০১৯-২০ মৌসুমে ৪৪ হাজর ৭১৩ কুইন্টাল শুঁটকি থেকে বনবিভাগ ৩ কোটি ১৭ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। জেলেরা জানান, দক্ষিণাঞ্চলের সাতক্ষীরা, খুলানা, পাইকগাছা, পিরোজপুর, বরগুনা, মোংলা ও রামপালের বিভিন্ন এলাকা থেকে শুঁটকি তৈরিতে দুবলা জেলে পল্লীর অধীনে এসব চরে এসে অস্থায়ী বসতি গড়েন। আগামী পাঁচ মাস তারা এখানে শুঁটকি তৈরি করবেন। এই শুঁটকি ছাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রফতানি হবে।
জেলে পল্লীর ব্যবসায়ী ও জেলেরা জানান, দুবলার চরের প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় রাসমেল। আর সে সময় বেশি শুঁটকি বিক্রি হয়। কিন্তু এবার করোনার কারণে শুধু রাস উৎসব হবে। মেলা না হওয়ায় লোক সমাগম কম হবে এতে শুঁটকি বিক্রিও কমে যাবে। মাছ শুকানোর সময় কথা হয় শুঁটকি তৈরির কারিগর রহমান নামের এক জেলের সাথে। তিনি জানান, কার্তিক মাসে এখানে আসেন। আর চৈত্র মাসে চলে যান। সাগর মোহনায় তারা মাছ শিকার করেন। তারপর তা রোদে শুকিয়ে শুঁটকি প্রক্রিয়া করা হয়।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন বলেন, দুবলার চরে গত বছরের ন্যায় এবারও শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব বা রাস মেলা অনুষ্ঠিত হবে না। তবে সনাতন ধর্মালম্বীদের রাস পূর্ণিমার পূজা ও পুণ্যস্নান অনুষ্ঠিত হবে। তিসি বলেন, এবারের রাস পূর্ণিমার পূজা ও পুণ্যস্নানে অংশ নিতে ১৭ নভেম্বর সকালে মোংলা থেকে সুন্দরবনের আলোরকোলের দুবলার চরের উদ্দেশ্যে নৌযানে করে সুন্দরবন বিভাগের অনুমতিপত্র নিয়ে যাত্রা করবেন আয়োজকরা। শুধু সাতক্ষীরা ও খুলনার নির্দিষ্ট নৌপথ ব্যবহার করে সেখানে যেতে পারবেন সনাতন ধর্মের পুণ্যার্থীরা।তিনি আরো জানান, সুন্দরবন অভ্যন্তরের ১৩টি মাছ সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্র নিয়ে গঠিত দুবলা জেলে পল্লী । এবারের জেলে পল্লী থেকে রাজস্ব আদায় বেশি হবে।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …