আব্দুর রহমান: সাতক্ষীরা শহরের যানজট নিরসন ও পথচারীদের চলাচলের ভোগান্তি কমাতে ১৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাইপাস সড়কের কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছে না সাতক্ষীরাবাসী। অধিকাংশ পন্যবাহী পরিবহনসহ অন্যান্য যানবাহন পূর্বের মত শহরের মধ্যদিয়ে প্রবেশ করায় সব সময় সড়কে লেগে থাকছে যানজট। প্রতিদিন সকাল থেকে শহরের বাসটার্মিনাল থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত তীব্র যানজটের কবলে পড়তে হয়। অনুসন্ধানে জানাযায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ থেকে বিনেরপোতা বিসিক শিল্পনগরী পর্যন্ত ১২.৩০ কিলোমিটার বাইপাস মহাসড়ক নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ২০১৭ সালের ১৭ মার্চ সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি সড়কটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করেন। এরপরই শুরু হয় সড়কটির নির্মাণ কাজ।
২০১৯ সালের ১৬ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সড়ক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বপ্নের বাইপাস সড়ক উদ্বোধন হলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যে সড়কটির দুপাশ দিয়ে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাক বাইপাস সড়ক ব্যবহার না করে শহরের ভেতর দিয়ে চলাচল করছে। ফলে শহরের সেই যানজট সমস্যা রয়ে গেছে আগের মতোই।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাইপাস সড়কের দুধারে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গড়ে তোলা হচ্ছে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ইটভাটা, মাছ বাজার, হোটেল-রেস্তোরাসহ সড়কের দুপাশে শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে শহরের সংযোগস্থলগুলোতে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন জেলার সচেতন মহল।
স্থানীয়রা জানান, সাতক্ষীরাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি শহরের বাঁকাল চেকপোস্ট থেকে বাইপাস সড়ক করার কথা থাকলেও নকশায় পরিবর্তন এনে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজের সামনে থেকে বাইপাস সড়কটি তৈরি করায় যনজট নিরসনের কোন পরিকল্পনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং বাইপাস সড়কের পাশ দিয়ে যেভাবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে কিছুদিন পর বাইপাস সড়কেও যানজট সৃষ্টি হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাইপাস সড়কের দুই পাশ দিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন বিভিন্ন পাকা স্থাপনা। এ সকল নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত ইট-বালু স্তুুপ আকারে দিনের পর দিন সড়কের উপরে রাখা হয়েছে। এতে একদিকে নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সড়ক এবং ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
বাইপাস সড়কের সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মোড় হতে কাশেমপুর জামতলা মোড় পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটারের মধ্যে সড়কের দুই ধারে ১৫ জায়গায় ইট-বালুর স্তুপ দেখা যায়। এছাড়াও সরকারি জমি দখল করে মাটি তুলে ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ করে অবৈধ দখলের পাঁয়তারা করছে কেউ কেউ। এতে করে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা চালুর দাবী জানিয়ে স্থানীয়রা বলেন, সাতক্ষীরা বাইপাস সড়কের অব্যবস্থাপনার বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ প্রয়োজন এমন দাবী করেছেন সচেতন মহল।
সাতক্ষীরা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন বলেন, ‘শহরে অজস্্র ইজিবাইক ও ইঞ্জিনভ্যান চলাচল করছে। যানজট সৃষ্টির প্রধান কারণ এসব ছোট ছোট যানবাহন। শহরের যানজট নিরসনে প্রাণ সায়ের খালের পুর্ব পাশ দিয়ে এসব যানবাহন যাবে এবং পশ্চিম পাশ দিয়ে আসবে। শহরের নারকেলতলা থেকে সুলতানপুর বড় বাজার পর্যন্ত প্রাণ সায়ের খালের উপর ৬টি ব্রিজ রয়েছে সুতরাং ইউ পদ্ধতিতে যানবাহন চলাচল করলে যানজট কমবে। তিনি আরো বলেন, ভোমরা বন্দরের সকল হেভি ওয়েট যানবাহন আগে শহরের মধ্যদিয়ে যাওয়া-আসা করতো। এখন সেগুলো বাইবাস সড়ক দিয়ে চলে।
সাতক্ষীরা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি’র সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ বলেন, বকচারা মোড়সহ শহরের সংযোগস্থলগুলো অবৈধভাবে দখলের মহোৎসব চলছে। বাইপাস সড়কের দুধারে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া বে-আইনী ভাবে সড়কের উপর ইট-বালু রেখে চলেছে নির্মানকারীরা। এতে করে সড়কটি সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে এবং যত্রতত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জেলাবাসীর।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদ’র চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান বাবু বলেন, ‘যানজট নিরসন এবং বাইপাস সড়কে যত্রতত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার বিষয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থাপন করেছি। শহরের যানজট নিরসন এবং বাইপাস সড়কে অবৈধ স্থাপনাকারীদের বিরুদ্ধে প্রাশসনকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরিচ্ছন্ন যানজটমুক্ত শহর গড়ে তুলতে সকলের সম্মিলিত সহযোগিতার আহবান জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়কের দু’ধারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শহরের যানজট নিরসনে ‘অন ওয়ে রোড’ চালু এবং চলাচলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে যত্রতত্র পার্কিং বন্ধসহ বিভিন্ন বিষয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি’র সভায় পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। শিঘ্রই এগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। শহরে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা এবং বাইপাস সড়কে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ একটি আধুনিক ও মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।