এম জিললুর রহমান: চল্লিশ বছর আগে নির্মিত সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরাজীর্ণ ভবনে চলছে চিকিৎসা কার্যক্রম। ছাদের পলেস্তারা আর বড় বড় সিমেন্টের দলা যখন তখন খসে ও ভেঙে পড়ছে। এরপরও কয়েক বছর আগে দূর্বল এই ভবনের এক তলা সংস্কার করে তার উপর দুই তলা উর্দ্ধোমুখি ভবন সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এখন পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হাসপাতালের আউডডোর ও প্রশাসনিক ভবন যেকোন সময় ভেঙে পড়ে বড় ধরণের হতাহতের ঘটনা ঘটতে পারে। জীবনের ঝুকি নিয়ে চিকিৎসক সেবিকা ও স্টাফরা দায়িত্ব পালন করছেন আর নিয়মিত ৪-৫শ’ জন সেবা প্রার্থীরা আসছেন এই হাসপাতালে। সিভিল সার্জন বলছেন ভবন সংস্কারের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে অনুরোধ করা হয়েছে।
গত ২ অক্টোবর সদর উপজেলার মাছখোলা গ্রামের আব্দুল জব্বারের স্ত্রী আয়েসা খাতুন দুপুরে তার পুতনিকে চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে নিয়ে আসেন। জরুরী বিভাগে শিশুটির ভর্তির সময় ভবনের নীচে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা আয়েশা খাতুনের মাথায় আকষ্মিকভাবে ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পড়ে গুরুতর আহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে শিশুর চিকিৎসা রেখে দাদী আয়েশাকে নিয়ে চিকিৎসায় ব্যস্থ হয়ে পড়েন চিকিৎসকরা। মাথায় ২৮টি সেলাই দিতে হয়েছে বলে জানান পরিবারের সদস্যরা। ছোট-খাট এমন ঘটনা প্রাই ঘটছে সদর হাসপাতালে। ফলে দীর্ঘদিনের পুরাতন আর জরাজীর্ণ ভবন ভেঙে নতুনভাবে নির্মাণের দাবী জেলাবাসীর।
ভুক্তভোগিরা অভিযোগ করে বলেন, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে এসে কার্নিশের পলেস্তারা ভেঙে মাথায় পড়ে আহত আয়েশার সুচিকিৎসা হয়নি। কোন রকমে জোড়াতালি দিয়ে চিকিৎসা শেষে তাকে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। পুরাতন এবং নি¤œমানের ও দুর্বল এই ভবনের অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক। প্রতিদিন ভবনের কোথাও না কোথাও পলেস্তারা ভেঙে পড়ে। এরপরও ছাদের উপর রুম করে টিন সেড দিয়ে ভবন বাড়িয়ে ঘর নির্মাণ করে সেখানেই মেডিসিনের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। এই হাসপাতালে চাকরিরত কর্মকর্তা কর্মচারি রোগি আর রোগির সঙ্গে আসা স্বজনদের প্রতি মুহূর্তে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হয়।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুজ্জামান হাসপাতালের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের কথা স্বীকার করে বড় ধরণের হতাহতের ঘটনা এড়াতে ভবনটির এখুনই সংস্কার বা নতনুভাবে নির্মাণের দাবী করেন।
সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ হুসাইন সাফায়াত জানান, আশির দশকের এই দুর্বল ভবনের উর্দ্ধমুখি সম্প্রসারণে ঝুঁকি আরও বেড়েছে। ভবনের চাপ তো আছেই তার সাথে রোগির চাপ আরো বাড়তি। দ্রুত সংস্কারের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে অবহিত করা হয়েছে জানিয়ে সিভিল সার্জন আরো বলেন, ভেঙে পড়লে বড় ধরণের হতাহতের ঘটনা ঘটবে। তাই বাজেট আসলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংস্কার করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল আশির দশকে নির্মিত ভবনে ৫০ শয্যা করা হয়। এরপর ১৯৯৭ সালের ২৭ জুন একই ভবনে ১শ’ শয্যায় উন্নীত হয়। পর্যায়ক্রমে দূর্বল ভবনে উর্দ্ধমুখি সম্প্রসারণ করায় আউটডোর ও প্রশাসনিক ভবনসহ সকল ভবনই চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। ফলে বড় ধরণের হতাহতের ঘটনা এড়াতে নতুন ভবন নির্মাণ এখন সময়ের দাবী জেলাবাসীর।