শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ৯(২), ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট এবং ২০১৯ সালের ৩ মে পরিপত্র এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি বিধি উপেক্ষা করো অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে বিভিন্ন সময়ে অনার্স শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়োগ সংক্রান্ত জালিয়াতি ও কাম্য সংখ্যক ভূয়া শিক্ষার্থীর তালিকা গোপন করে ডিগ্রী স্তরের তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্তির জন্য তালিকা পাঠানোর ঘটনায় সাতক্ষীরা সিটি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মো: আবু সাঈদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, শিক্ষা মন্ত্রী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালক, উপ-পরিচালক কলেজ-২, সহকারি পরিচালক কলেজ-৩সহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। সাতক্ষীরা সদরের সরকারি কলেজ রোড এলাকার চম্পা রানী ম-ল গত ২৩ অক্টোবর এসব অভিযোগ করেন।
অভিযোগপত্রে উলে¬খ করা হয়েছে অধ্যক্ষ মো: আবু সাঈদ ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি সাতক্ষীরা সিটি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: জাহিদুর রহমান , বর্তমান জেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন, খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের সমসাময়িক কর্তব্যরত কর্মকর্তার যোগাসাজসে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০১৯ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষকদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি, নিয়োগ ও যোগদান সংক্রান্ত তথ্য জালিয়াতি, তথ্য গোপন, ভূয়া শিক্ষার্থীর তালিকা প্রকাশ (প্রতি বিষয়ে ২৫ জন কিন্তু বি.এস.সির ক্ষেত্রে ১৫ জন), জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি বিধি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা (২০০৫, ২০১০, ২০১৫ ও ২০১৮) এবং ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট ও ২০১৯ সালের ১২ মার্চ জারিকৃত পরিপত্র উপেক্ষা করে ডিগ্রী স্তরের ২য় ও ৩য় শিক্ষক হিসেবে করে প্রতি শিক্ষকের নিকট থেকে ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে ২১ জন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল কাঠামো নীতিমালা অনুসারে প্রতি বিষয়ে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ১জন, ডিগ্রী স্তরে ২জন ২০১৮ সালের ২৮ আগস্টের পূর্বে (উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ১জন সহ) এবং ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট ও ২০১৯ সালের ১২ মার্চ পরিপত্র জারির পর ডিগ্রী স্তরে ৩জন (ডিগ্রী স্তরে ২জনসহ) শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করা যাবে। এখানে উল্লেখ্য ২০১৮ সালের ২৮ আগষ্ট তারিখের পরিপত্র অনুসারে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির পূর্বে ডিগ্রী স্তরে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে এবং ২০১৯ সালের ১২ মার্চের পরিপত্র অনুসারে ৪-০২-২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির পরে ডিগ্রীস্তরে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হতে পারবেন। তবে অনার্স শাখায় বা অন্য শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা ডিগ্রীস্তরে তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হতে পারবেন না।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়েছে যে, ২০১৮ সালের ৩ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এমপিওভুক্ত ডিগ্রী কলেজে বিষয় ভিত্তিক এমপিও বিহীন তৃতীয় শিক্ষকের নামের তালিকা চেয়ে সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর তিন দিন সময় দিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। এরপর ডিগ্রী স্তরে তৃতীয় শিক্ষকের এমপিও ভুক্তির বিষয়ে গত ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র জারি করা হয়। উক্ত পরিপত্রে উল্লেখ করা হয় যে ৪-০২-২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির পূর্বে ডিগ্রী স্তরে নিয়োগকৃত তৃতীয় শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত হতে পারবেন। এই পরিপত্র জারির পর অধ্যক্ষ আবু সাঈদ নিয়োগ সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন ও রেজুলেশন জালিয়াতি করে অনার্স শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের ডিগ্রী স্তরের শিক্ষক বানিয়ে ও ভুয়া শিক্ষার্থীর তালিকা প্রস্তুত করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বিষয় ভিত্তিক শিক্ষকদের নামের তালিকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছেন এবং সে অনুসারে এমপিওভুক্ত হয়েছে বা হবে। এই পরিপত্র উপেক্ষা ২০১৯ সালের জুলাই মাসে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে অরুন কুমার সরকার, দর্শন বিভাগে নাসির আহমেদ, বাংলা বিভাগে মো: মনিরুল ইসলাম এবং ইংরেজী বিভাগে আবু রায়হানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এই তথ্য জালিয়াতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে তদন্তে আসেন যার তদন্ত এখনও চলমান আছে। একই বিষয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মাউশির নির্দেশে মাধ্যমিক ও উচচ শিক্ষা অধিদপ্তরের খূলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালকসহ তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত দল তদন্ত করেন এবং তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।
২০১৯ সালের ১২ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এমপিওভুক্ত ডিগ্রী কলেজে বিষয় ভিত্তিক এমপিও বিহীন তৃতীয় শিক্ষকের নামের তালিকা চেয়ে সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর পাঁচ দিন সময় দিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। উক্ত পরিপত্রে উল্লেখ করা হয় যে ৪-০২-২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির পর ডিগ্রী স্তরে নিয়োগকৃত তৃতীয় শিক্ষকরা এমপিও ভুক্ত হতে পারবেন। এই পরিপত্র উপেক্ষা করে অধ্যক্ষ আবু সাঈদ ২০১১ থেকে ২০১৬ সালে অনার্স শাখায় সমাজ বিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, গার্হস্থ্য অর্থনীতি, সমাজকর্ম, ইসলামের ইতিহাস, ব্যবস্থাপনা, মার্কেটিং, মনোবিজ্ঞান , ভুগোল ও পরিবেশ এবং ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগে নিয়োগকৃত শিক্ষকদেরকে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ ও যোগদান সম্পর্কিত তথ্য এবং ভূয়া কাম্য সংখ্যক শিক্ষার্থীর তালিকা জালিয়াতি ও গোপন করে ডিগ্রী স্তরের তৃতীয় শিক্ষক বানিয়ে নামের তালিকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছেন এবং সে অনুসারে পরবর্তিতে এমপিওভুক্ত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ২০১৯ সালের ১৯ অক্টোবরের পত্র অনুসারে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর তারিখের মধ্যে ডিগ্রী স্তরে তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকদের ২০/৯/২০২১ সালের ২০ সেপ্টেম্বরের পরিপত্রে এমপিওভুক্তির নির্দেশ দেন। কিন্তু সাতক্ষীরা সিটি কলেজে উক্ত নির্দেশিত তারিখে ডিগ্রী স্তরে তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগকৃত কোন শিক্ষক নেই। ২০১৮ সালের ২৮ আগষ্ট ও ২০১৯ সালের ১২ মার্চ এর পরিপত্র জারির পর তথ্য জালিয়াতি করে অনার্স শাখায় নিয়োগকৃত শিক্ষকদের ডিগ্রীর ৩য় শিক্ষক হিসেবে দেখানো হয়েছে। যেসমস্ত শিক্ষকদের তথ্য জাালিয়াতি করে এমপিও করার অনুমোদন পেয়েছেন বা পেতে যাচ্ছেন তারা হলেন ২০১১ সালের ৬ নভেম্বর নিয়োগবোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা বিভাগের চম্পা রানী হাজরা, একই তারিখের নিয়োগবোর্ডের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে নিয়োগপ্রাপ্ত লিলিফা পারভিন, জ্যেষ্ঠ শিক্ষক কামরুন্নাহারকে বঞ্চিত করে ইসলামের ইতিহাসে সাহাবুদ্দিন আহম্মেদকে, সমাজকর্ম বিভাগে সেলিনা পারভিন, বাংলা বিভাগে আশরাফুল হক, ২০১৫ সালের ১৫ জুলাই নিয়োগ বোর্ডের মাধমে অর্থনীতি বিভাগে জিএম ফিরোজ কবীরকে, ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর নিয়োগাবোর্ডের মাধ্যমে মনোবিজ্ঞানে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিমল কুমার, জ্যেষ্ঠ শিক্ষক তাপস কুমার সরকারকে বঞ্চিত করে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে একই দিনে ইমরুল ইকবালকে, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে মুকুন্দ কুমার ঘোষকে, দর্শণ বিভাগে মিহির কুমারকে, ২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে মার্কেটিং বিভাগে পবিত্র কুমারকে এবং একই নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগে শ্রীপতি রায়কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই কলেজে কর্মরত থেকে ২০১৯ সালে অন্য প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত হয়েছে এবং পরবর্তিতে এই পদে তথ্য জালিয়াতি করে তানভীর আহমেদ কে ২০২০ সালের মার্চ মাসে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে)।
প্রসঙ্গত, অধ্যক্ষ মো: আবু সাঈদের দূর্নীতির বিরুদ্ধে পূর্বে দাখিলকৃত অভিযোগের তদন্ত প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সাঈদের সঙ্গে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি মুঠো ফোন রিসিভ করেননি। patradoot