নিজস্ব প্রতিনিধি: সমাজে বাল্যবিবাহের প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানানো হয়েছে। একইসাথে যারা বাল্যবিবাহে উৎসাহিত করবেন তাদেরকে সরকারের সকল বিনামূল্যের সুবিধা থেকে সরিয়ে দিতে হবে।
সোমবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা রেস্ট: সম্মেলন কক্ষে বাল্যবিবাহ বন্ধে করণীয় শীর্ষক কর্মশালায় বক্তারা এই আহবান জানান। এতে তথ্য উপস্থাপন করে বলা হয়, বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার শতকরা ৫১.৪ শতাংশ। অপরদিকে খুলনা বিভাগে এই হার ৬১.৮ শতাংশ। এছাড়া সাতক্ষীরা জেলায় বাল্যবিবাহের হার ৭৭ শতাংশ পেরিয়ে গেছে উল্লেখ করে বলা হয়, করোনাকালে এক শ্রেণির অভিভাবক তাদের সন্তানদের বাল্যবিবাহে উৎসাহিত করেছেন। তথ্য উপাত্ত তুলে ধরে আরও বলা হয়, এই সময়ের ব্যবধানে সাতক্ষীরার আলীপুরের ৬৭ জন, ঘোনায় ৩৫ জন, পল্লীশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ২৫ জন এবং নগরঘাটার একটি গ্রামেই ২৪ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক স্কুলছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। এছাড়াও চোরাগুপ্তাভাবে এ ধরণের বিয়ে দেওয়ার সময় প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে শতাধিক বিয়ে বন্ধ করাও হয়েছে। এমনকি কোন কোন ছাত্রীর বিবাহের বয়স ইতোমধ্যে ২ বছরও পার হয়েছে। অথচ তারা এখনও ক্লাস এইট নাইনে পড়াশোনা করছেন। তারা একইসাথে মা হয়েছেন।
আলোচনা সভায় আরও বলা হয়, বাল্যবিবাহের ফলে নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও সন্তানের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সুরক্ষা সম্ভব হয় না জানিয়ে বক্তারা বলেন, এই প্রবনতা রোধ করতে না পারলে আমাদের সমাজে খর্বাকৃতি, কম ওজন এবং শীর্ণদেহী ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্ম হতেই থাকবে। এতে প্রজন্মের স্বাস্থ্যহানির আশংকা রয়েছে।
জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক মো: হুমায়ুন কবির বলেন, আমাদের সবার দায়িত্ব অভিভাবকদের সচেতন করে তোলা। সেইসাথে স্কুলকলেজ মাদ্রাসার শিক্ষকদের আরও সচেতন করে তোলা গেলে এই প্রবনতা বহুলাংশে হ্রাস পেতে পারে। তিনি বলেন, বাল্যবিবাহ রোধে সরকারের যে আইন রয়েছে তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করতে হবে। এজন্য এলাকার জনপ্রতিনিধি, মসজিদের ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত এবং বিবাহ রেজিস্ট্রারেরও সহযোগিতা জরুরী।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সুমনা ফেরদৌসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় ১২ দফা দাবি তুলে ধরে প্রতিরোধ কমিটির কর্মকর্তা সাকিবুর রহমান বলেন, কন্যাশিশুর জন্মের সাথে সাথে তার নামে নির্দিষ্ট অংকের টাকা ব্যাংক ডিপোজিট করতে হবে। এর অর্ধেক দেবে অভিভাবক বাকি অর্ধেক দেবে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বিভাগ। এছাড়াও স্কুলকলেজে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে লিখিত চুক্তি সম্পাদিত হতে হবে। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম লাল্টু, দেবহাটা উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মুজিবর রহমান, সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা, তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রশান্ত কুমার বিশ^াস, স্বদেশ পরিচালক মাধব দত্ত, তালা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মিসেস নাজমুন নাহার, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল, পাটকেলঘাটা, আশাশুনি সাতক্ষীরা, কলারোয়া ও শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাবৃন্দ।