বিলাল মাহিনী, যশোর :
বিজয়ের ৫০ বছরে অভয়নগর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর
যশোরের অভয়নগর মুক্ত দিবসের ৫০ বছর আজ বৃহস্পতিবার।
১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর নির্যাতন থেকে মুক্তি পেয়েছিল উপজেলার লাখো মানুষ। ২৪ ঘন্টার সম্মুখ যুদ্ধে হানাদার মুক্ত হয়েছিল অভয়নগরের মাটি ও মানুষ। উড়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা। এরপর থেকে প্রতি বছর ৯ ডিসেম্বর অভয়নগর মুক্ত দিবস হিসেবে উদযাপন করে আসছেন অভয়নগরবাসী।
তবে এ বছর এ উদযাপনে রয়েছে ভিন্নতা। নেয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। অভয়নগর শত্রু মুক্ত হওয়ার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ব্যাপক আয়োজনে-উৎসবে, বাদ্য-বাজনায় দিনটি উদযাপন করছে অভয়নগরবাসী।
এ উপলক্ষ্যে গোটা নওয়াপাড়া শহরকে সাজানো হয়েছে অপরূপ নান্দনিকতায়। লাল সবুজের মাঝে বর্ণিল আলোকচ্ছ্বটায় যেন নব প্রাণের সঞ্চার ঘটেছে নওয়াপাড়ায়। এ যেন এক অনন্য রূপসী নওয়াপাড়া। সকাল থেকে বাদ্যের ঝংকার প্রাণের জাগরণ ঘটছে যশোর-খুলনা মহাসড়কে। সজ্জিত ও বর্ণাঢ্য র্যালির মাধ্যমে যশোর-খুলনা মহাসড়কে সৃষ্টি হয়েছে প্রাণের মেল বন্ধন। বিকেলে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
যশোরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস থেকে জানা যায়, পাক বাহিনীর অত্যাচার থেকে অভয়নগর মুক্ত করার উদ্দেশ্যে মুক্তিযোদ্ধারা তিনটি দলে বিভিক্ত হয়ে গেরিলা প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে চলে যান। প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে নড়াইল জেলার খড়লিয়া গ্রামে শ্যাম দারোগার বাড়ীতে অবস্থান করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে সেখান আক্রমণ করে পাক বাহিনী। খবর পেয়ে ফুলতলা, কালিয়া ও নড়াইল থানা এলাকার মুক্তিযোদ্ধার পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এরপর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধারা অভয়নগরের বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে গ্রামবাসীকে সংবদ্ধ করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মুক্তি বাহিনী গঠন করেন।
৬ ডিসেম্বর যশোর শহর ও যশোর ক্যান্টনমেন্ট হানাদার মুক্ত হওয়ার পর ৭ ডিসেম্বর ভোরে পাক বাহিনী অভয়নগরে চলে আসে। তারা যশোর-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন তিনটি জুট মিলে (জেজেআই, কার্পেটিং ও পূর্বাচল) ক্যাম্প স্থাপন করে। ৮ ডিসেম্বর সকালে তারা নওয়াপাড়া রেল স্টেশন এলাকায় বোমা বিষ্ফোরণ ও গুলি চালিয়ে অসংখ্য নারী, পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধকে হত্যা করে একটি গর্তে পুতে রাখে।
অভয়নগর মুক্ত করার টার্গেটে ৮ ডিসেম্বর ভোরে নড়াইল জেলার শ্যাম দারোগার বাড়ী থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে অভয়নগরে চলে আসেন। এবং স্থানীয় মুক্তি বাহিনীর সদস্যদের সংবদ্ধ করতে শুরু করেন। এদিন সন্ধ্যায় উপজেলার রাজঘাট এলাকায় জেজেআই জুট মিলে থাকা পাক বাহিনীর সঙ্গে শুরু হয় সম্মুখ যুদ্ধ। খবর পেয়ে অন্য দুই জুট মিলে থাকা পাক বাহিনী চলে আসে রাজঘাটে। যুদ্ধ চলাকালিন সময় মধ্যরাতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মেজর জলিলের নেতৃত্বে মিত্র ও মুক্তি বাহিনীর একটি সাজোয়া দল যোগদান করেন।
৯ ডিসেম্বর সকালে ত্রিমুখি আক্রমে পাক বাহিনী পরাজয় নিশ্চিত ভেবে খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলা ও শিরোমণি এলাকায় পালিয়ে যায়। হানাদার মুক্ত হয় অভয়নগর। জয় বাংলা শ্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে রাজপথ। অভয়নগরের মাটিতে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিযোদ্ধরা।
অভয়নগরের নওয়াপাড়া রেল স্টেশন সংলগ্ন সেই গণকবর আজও কালের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। শহীদদের স্মৃতি রক্ষায় ২০০৯ সালে নওয়াপাড়া পৌরসভার তৎকালিন মেয়র বর্তমান অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এনামুল হক বাবুল গণকবর সংরক্ষণ ও কবরের সঙ্গে লাল রঙের একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন। এরপর থেকে ৯ ডিসেম্বর অভয়নগর মুক্ত দিবসসহ ১৬ ডিসেম্বর ও ২৬ মার্চ আসলে অভয়নগরবাসী গণকবরসহ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন পূর্বক শহীদদের স্মরণ করে থাকেন সর্বস্তরের মানুষ।
শত্রুমুক্ত হওয়ার এ দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে নানা কর্মসূচি পালন করছে অভয়নগরের লাল সবুজ প্রেমী জনতা।
বিলাল মাহিনী
যশোর।