রাসেল হোসেনঃ
চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রতিটি ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লায় জমে উঠেছে উৎসবমুখর পরিবেশ। সবখানেই বইছে সাজ-সাজ রব। শব্দযন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারে মুখরিত প্রতিটি পাড়া-মহল্লা। একই অবস্থা বিরাজ করছে যশোরের অভয়নগর উপজেলাধীন ১নং প্রেমবাগ ইউনিয়নের প্রতিটি পরতে পরতে।
সরেজমিনে নির্বাচনী এলাকা ঘুরে ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আগামী ২৬ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য চতুর্থ ধাপের নির্বাচনের আওতায় এই ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেই আলোকে অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীদের প্রচার আর ভোট প্রার্থনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাড়া-মহল্লা। এ বছরে প্রেমবাগ ইউনিয়নের মোট ভোটার ১৭,৮৯৯ জন। এর মধ্যে অত্র ইউনিয়নে ১ জন চেয়ারম্যানের বিপরীতে ৫ জন, ৯ জন ওয়ার্ড মেম্বারের বিপরীতে ২৮ জন এবং ৩ জন সংরক্ষিত মহিলা মেম্বারের বিপরীতে ১২ জনসহ সর্বমোট ৪৫ জন প্রার্থী ভোট যুদ্ধে অংশগ্রহণ করছেন।
চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কর্তৃক বিগত নির্বাচনের মনোনীত ও নির্বাচিত সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান প্রভাষক মফিজ উদ্দিন দলীয় সিদ্ধান্ত মোতাবেক নৌকা প্রতিক নিয়ে পুনরায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আনারস প্রতিক নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর নেতা প্রভাষক মাওঃ মোঃ মশিউর রহমান, সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি সমর্থিত সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মান্নু ঘোড়া, লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে এম. ফরিদুল ইসলাম ফরিদ এবং মটর সাইকেল প্রতিক নিয়ে সুরভী ইসলাম নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এলাকার বিভিন্ন স্তরের ভোটারের সাথে আলোচনা করে জানা গেছে, মেম্বার এবং সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার প্রার্থী সম্পর্কে এলাকায় জোড়ালো কোন আলোচনা না থাকলেও চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে তৃণমূল পর্যায়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। ভোটারদের প্রত্যেকেই তাদের পছন্দের চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন রকম মন্তব্য ছুড়ে দিয়ে নির্বাচনী হাওয়া নিজেদের অনুকুলে রাখতে ব্যস্ত রয়েছেন। দলমত নির্বিশেষে প্রত্যেক চেয়ারম্যান প্রার্থীর রয়েছে তাদের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা। তবে এবারের নির্বাচনে প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে সম্পূর্ণ নতুন মুখ হিসেবে রয়েছেন উদিয়মান নেতা লাঙ্গল প্রতিকের এম. ফরিদুল ইসলাম ফরিদ ও মোটর সাইকেল প্রতিকের সুরভী ইসলাম।যদিও সুরভী ইসলাম দাবি করেছিলেন বিএনপি তাকে মৌণ সমর্থন দিয়েছে। অন্য তিন প্রার্থীর মধ্যে দু’জন রয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান।
সাবেক চেয়ারম্যান হওয়ায় পরিষদ পরিচালনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষ মফিজুর রহমান ও সিরাজুল ইসলাম মান্নুর সুখ্যাতি আছে। অন্যদিকে এ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে গতকয়েকবার সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজয় বরণকারী জামায়াতের প্রার্থী মাওঃ মোঃ মশিউর রহমান এবার প্রার্থী হয়েছেন।নির্দিষ্ট ভোট ব্যাংক থাকায় তিনি এবারো আশাবাদী। তার ভোট পরিচালনাকারী কয়েকজন জানান,নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে তিনি বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।
মূলত এবছর ওয়াকার্স পার্টি থেকে উঠে আসা মফিজ উদ্দিন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেকেই অসন্তোষ ছিলেন।যদিও পরে দলনত্রীর কড়া আদেশ থাকায় আওয়ামী লীগের কেওই প্রকাশ্যে নৌকার বিরুদ্ধে যায়নি।বর্তমানে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য শক্ত অবস্থানে আছে।
আর এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে জামায়াত। প্রকাশ্যে কোন কর্মসূচীতে জামায়াতকে দেখা না গেলেও ভোটের মাঠে বেশ এগিয়েছে তারা।
ভোট নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠ হলে এবার জয়ি হবেন বলে একই এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এই ইউনিয়নের অন্যান্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরাও।
সরেজমিনে এলাকা ঘুরে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ভোটারের সাথে কথা বলে বোঝা যাচ্ছে- প্রেমবাগ ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগের মনোনীত নৌকা প্রতিকের বর্তমান চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রভাষক মফিজউদ্দিন এবং আনারস প্রতিকের চেয়ারম্যান মাওলানা মশিউর রহমানের ভিতর মূলত লড়াই হবে।
আর বিএনপিমনা সিরাজুল ইসলাম মান্নুও বেশ নির্বাচনি প্রচারে আগিয়েছে।
তবে সাধারণ ভোটাররা আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। পাশাপাশি তারা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেদিকে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।