কুলিয়ায় সংখ্যালঘু পরিবারের জমি জবরদখল করে রাতারাতি স্থাপনা নির্মান

দেবহাটা প্রতিনিধি :- দেবহাটার কুলিয়ায় মনিন্দ্রনাথ মন্ডল (৬০) ও বাবুরাম মন্ডল (৩৭) নামের দুই সংখ্যালঘুর জমি জোরপূর্বক দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মানের অভিযোগ উঠেছে এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার কুলিয়ায় ইউনিয়নের কদমখালি গ্রামে জমি জবরদখলের ঘটনাটি ঘটে।

ভুক্তভোগী মনিন্দ্রনাথ মন্ডল কদমখালি গ্রামের মৃত খগেন্দ্রনাথ মন্ডলের ছেলে এবং অপর ভুক্তভোগী বাবুরাম মন্ডল তার ভাতিজা। জবরদখল পরবর্তী অবৈধ স্থাপনা নির্মানকালে ভুক্তভোগীরা কুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে লিখিত অভিযোগ দিলে গ্রাম পুলিশরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবৈধ স্থাপনা নির্মান কাজ বন্ধ করে দেন এবং জবরদখলকারী কদমখালি গ্রামের মৃত গহর গাজির ছেলে সইলউদ্দীন গাজীসহ তার লোকজনকে জমির স্বপক্ষের কাগজপত্র নিয়ে পরিষদে হাজির হতে নোটিশ জারি করেন।

ভুক্তভোগী মনিন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, পূর্ব পুরুষের আমল থেকে শুরু করে বিগত ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে তারা পরিবার পরিজন নিয়ে কুলিয়ার কদমখালিতে বসবাস করে আসছেন। কদমখালিতে বেশিরভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের বসবাস। তার বাবা মৃত খগেন্দ্রনাথ মন্ডল ও দুই কাকা নগেন্দ্রনাথ ও ঈষান্দ্রনাথ মন্ডলের মৃত্যুর আগে রেখে যাওয়া জমিজমা তিনি, তার ভাতিজা বাবুরাম মন্ডলসহ অন্যান্য পূর্বপুরুষদের উত্তরসূরীরা ভোগদখল করছেন।

কদমখালির ছোট জগন্নাথপুর মৌজার ১২৮ বাটা ৩৪০ ও ৩৪২ দাগে তাদের রেকর্ডীয় ২৭ বিঘা জমি ছিল। এছাড়া ওই জমির সাথে লাগোয়া আরোও প্রায় ১২ শতক জমি প্রায় ৫০ বছর ধরে তার পূর্বপুরুষদের ভোগদখলের ধারাবাহিকতায় বর্তমানেও উত্তরসূরী হিসেবে তিনি ও তার ভাতিজা বাবুরাম মন্ডল ভোগদখল করছেন।

মনিন্দ্রনাথ আরোও বলেন, কয়েকবছর আগে তার কাকা নগেন্দ্রনাথ মন্ডলের ছেলে শশোধর মন্ডল স্থানীয় মৃত গহর গাজীর ছেলে সইলউদ্দীন গাজীর কাছে তাদের রেকর্ডীয় জমি থেকে ৩বিঘা ৫কাঠা জমি বিক্রি করেন। এরপর থেকে বাকি জমির ওপর কুনজর পড়ে সইলউদ্দীনের। ক্রয়কৃত ৩বিঘা ৫ কাঠা জমির স্থলে এপর্যন্ত সইলউদ্দীন গাজী সাড়ে ৪বিঘা জমি জবরদখলে নিয়ে রেখেছেন। শুধু তাই নয়, আরো জমি নিজের দখলে নিতে সইলউদ্দীন গাজী মঙ্গলবার ফের তাদের জমি দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মান শুরু করে বলে জানান মনিন্দ্রনাথ মন্ডল।

অপর ভুক্তভোগী তার ভাতিজা বাবুরাম মন্ডল জানান, প্রভাবশালী সইলউদ্দীন গাজীর নাতি আলফাজ হোসেন সুরুজ ওই এলাকার চিহ্নিত চাঁদাবাজ, মাদকসেবী ও অবৈধ অস্ত্রধারী মাস্তান। আলফাজ হোসেন সুরুজ, সাদ্দাম হোসেন ও সুফিয়ান নামের তিন মাস্তানের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ওই জনপদের সাধারণ মানুষ। তাদের একটি সক্রিয় কিশোর গ্যাং রয়েছে।

কয়েকমাস আগে গণধোলাইকালে অস্ত্রসহ খালে ঝাঁপ দিয়ে প্রান বাঁচে আলফাজ হোসেন সুরুজের। প্রভাবশালী সইলউদ্দীন গাজী ওই কিশোর গ্যাংকে ব্যবহার করে জোরপূর্বক দফায় দফায় তাদের জমি জবরদখল করে নিচ্ছে। এমনকি সইলউদ্দীন গাজীসহ মাস্তান আলফাজ, সাদ্দাম ও সুফিয়ান বাহিনী বিভিন্ন সময়ে তাদের প্রাননাশের হুমকি দিয়ে আসছে বলেও অভিযোগ করেন বাবুরাম মন্ডল। এব্যাপারে তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগীতা কামনা করেছেন।

এব্যাপারে কুলিয়ার নব-নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান আছাদুল হক বলেন, প্রভাবশালী সইলউদ্দীনের বিরুদ্ধে জমিদখলসহ নব্য মাস্তান আলফাজ, সাদ্দাম ও সুফিয়ান বাহিনীর বিরুদ্ধে এপর্যন্ত চাঁদাবাজিসহ বহু অভিযোগ আসছে। জমিজমা সংক্রান্ত বিষয়টি শালিসের মাধ্যমে উভয় পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে সমাধান করা হবে।

  1. অপরদিকে এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে এবং অপরাধ নির্মূলে এসব নব্য মাস্তানদের আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।

Check Also

বিএনপি নেতাকর্মীদের জড়িয়ে হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেবহাটায় মানববন্ধন

দেবহাটা প্রতিনিধি: স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দোসর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের গ্রেফতার এবং বিএনপির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।