দক্ষিণ নড়াইলের বিছালী ইউনিয়নের নাওসোনা মহাশশ্মানে মৃত ব্যক্তির সৎকারে জন দুর্ভোগ

সব্যসাচী বিশ্বাস ( অভয়নগর ) যশোর:

নড়াইল জেলার সদর উপজেলার ১২ নং বিছালী ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত আকবপুর, রুন্দিয়া, খলিসাখালি ছাড়াও যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার জয়খোলা গ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষের মৃত সৎকারের একমাত্র স্থান নাওসেনা মহাশশ্মান। বর্ষাকালে কলাগাছের ভেলায়,কেউবা নৌকা- অথবা তালের ডোঙায়,আবার অনেকে ঘাড়ে করে কোমর পানির মধ্যে দিয়ে, শুকনায় জমির আইলের ওপর দিয়ে। এমন কষ্টের মধ্য দিয়ে নড়াইল সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়নের ১০টি গ্রামসহ অভয়নগরের জয়খোলা গ্রামের প্রায় ২০/২৫ হাজার হিন্দু সম্প্রদায় মানুষদের মরদেহ সৎকার করতে যেতে হয় নাওসোনা শশ্মানে। শশ্মানের অবস্থান বিছালী ইউনিয়নের বনখলিশাখালি গ্রামের ডঙ্করের বিলের মাঝ খানে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যাদের সামর্থ নেই তাদের অনেকেই বর্ষা মৌসুমে বিলের কচুরির ধাপের তলে স্বজনের মরদেহ ফেলে রেখে আসেন। দুর্ভোগের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে এলাকাবাসী মহা শশ্মানে যাতায়াতের জন্য রাস্তা নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

বিছালী ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মো. হেমায়েত হোসাইন ফারুক হিন্দু সম্প্রদায় মানুষদের এই দুর্ভোগ নিরসনে নাওসোনা মহাশশ্মানে তাদের মৃত স্বজনের সৎকারের সু-ব্যাবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসকসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি কামনা করেছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে,নড়াইল সদর উপজেলার বিছালী ইউনিয়ন জেলার শেষ প্রান্তে অবস্থিত। দক্ষিণে খুলনার ফুলতলা,পশ্চিমে যশোরের অভয়নগর,পূর্বপাশে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার শিঙ্গাশোলপুর ইউনিয়নের সীমানা। ১২টি গ্রাম নিয়ে ইউনিয়ন গঠিত। প্রায় ৪০ হাজার পরিবার এখানে বসবাস করেন। বিছালী ইউনিয়নের বনখলিশাখালি, রুন্দিয়া, আটঘরিয়া, আকবপুর, রুখালি, চাকই, মধুরগাতি, আড়পাড়া, কালিনগর, বিছালী এবং যশোরের অভয়নগর উপজেলার শ্রীধরপুর ও বাঘুটিয়া ইউনিয়ন সংলগ্ন নাওসোনা মহাশশ্মান। সংস্কারের অভাবে শশ্মানটি এখন জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। শশ্মানে যাতায়াতের কোন রাস্তা নেই। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে মরদেহ সৎকারে দুর্ভোগে পড়তে হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের।
বিছালী-আগদিয়াচর সড়কের বনখলিশাখালি সেতু থেকে শশ্মাণের দূরত্ব ২ কিলোমিটার। সেতুর নিচ দিয়ে হাজামজা একটি খাল। খালটি বন জঙ্গলে ভরা। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বিলের বেশিরভাগ অংশ প্রায় সারা বছরই পানির নিচে তলিয়ে থাকে। একটি উচু ভিটার ওপর শশ্মান। সেখানে কালী মন্দির,মন্দিরের সামনে একটি মজা পুকুর,একটি নলকুপ,উত্তর পাশে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একতলা একটি পাকা ঘর থাকলেও ঘরটি আগাছায় ছেয়ে গেছে। সুপেয় পানি পানের কোনো ব্যবস্থা নেই।

বনখলিশাখালি গ্রামের শিবাজি কুমার বিশ্বাস (৩৫) বলেন,আমরা গরীব মানুষ। আমাদের কোন নৌকা-ডোঙা কিছুই নেই। গত বর্ষায় আমার পিশিমা আলো বিশ্বাস মারা যায়। পিশিমার মরদেহ ঘাড়ে নিয়ে বুক জল ভেঙে শশ্মানে নেবার চেষ্টা করি। কষ্ট হয়ে গেলে খালের কচুরিপানার ধাপের তলে পিশিমাকে ডুবিয়ে দিয়ে আসি।

বিছালী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য অসিম বিশ্বাস বলেন,বিছালী-আগদিয়ারচর সড়কের বন খলিশাখালি সেতু থেকে শশ্মানের দূরত্ব ২ কিলোমিটার। তিনি বলেন,একজন মৃত ব্যক্তির সৎকার করতে আশপাশের ১০ গ্রামের প্রায় ২৫ হাজার হিন্দু সম্প্রদায় মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন।

বনখলিশাখালি গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি শচীন্দ্রনাথ রায় বলেন,আমি মারা গেলে আমারে কিভাবে শশ্মানে নেবে জানিনা। অনেককে শশ্মানে নিতে না পারায় খালের কচুরির ধাপের তলে ফেলে রেখে আসতে বাধ্য হয়েছি।
আটঘড়িয়া গ্রামের ফাল্গুনি রায় (৭৮) হরিমতি বিশ্বাস (৮২) বলেন,রাস্তা না থাকায় আমরা শশ্মান কালী মন্দিরে আসতে পারি না।

পরিতোষ মালাকার(৬৫) বলেন,কোন স্বজন মারা গেলে তার মরদেহ শশ্মাণে নিয়ে যাবার একমাত্র বাহন নৌকা,তালের ডোঙ্গা অথবা কলা গাছের ভেলা। বর্ষাকালে বুক জল ভেঙে শশ্মানে মরদেহ নিয়ে যেতে হয়। তিনি বলেন,বিলের মাঝখানে শশ্মান হওয়ায় খাল দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু খালটি বন-জঙ্গলে ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেখানে যাওয়া যায় না। তিনি বলেন,শশ্মানে নাম মাত্র একটি কমিটি আছে।

শশ্মান কমিটির সাধারণ সম্পাদক অলীপ বিশ্বাস বলেন,বিছালী ইউনিয়নের রুন্দিয়া মৌজার খাস খতিয়ানের ২৫ শতক এবং কেনা ৬৪ শতক জমির ওপর মহা শশ্মান স্থাপিত। তিনি আরো বলেন,সাবেক সাংসদ ধীরেন্দ্রনাথ সাহা শশ্মানে তিন কক্ষ বিশিষ্ট একটি পাকা ঘর করে দেন। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঘরটি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

জেলা প্রশাসক মো.হাবিবুর রহমান বলেন, এমন জনদুর্ভোগের কথা আগে শুনিনি। আমি নিজেই ওই এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন করবো। তিনি বলেন,ওই মহাশশ্মানে এলাকার মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে যেতে পারেন প্রাথমিক পর্যায়ে টিআর-কাবিখার সহায়তা প্রদান করে রাস্তা নির্মাণ করা হবে। পরে ইটের সোলিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।

Check Also

আশাশুনিতে টঙ্গী ইজতেমায় হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।ঢাকার টঙ্গীত ইজতেমা-মাঠে নিরীহ মুসল্লিদের উপর উগ্রবাদী সন্ত্রাসী সাদ পন্থীদের বর্বরোচিত হামলা ও পরিকল্পিত …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।