পনের বছর আগে মৃত ব্যক্তিদের ভোটার বানিয়ে তোপের মুখে অধ্যক্ষ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: ১০-১৫ বছর পূর্বে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তিদের ভোটার তালিকায় নাম তুলে অনিয়মের মাধ্যমে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে চরম তোপের মুখে পড়েছেন সাতক্ষীরার সাতক্ষীরা আয়েনউদ্দীন মহিলা আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাও: রুহুল আমিন। এব্যাপারে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন একই মাদ্রাসার একজন সহকারী শিক্ষক। অনিয়ম ও দুর্নীতির বর্ণনা তলে ধরে অভিযোগে বলা হয়েছে, সাতক্ষীরা আয়েনউদ্দীন মহিলা আলিম মাদরাসার গভর্নিংবডি গঠনে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির করেছেন অধ্যক্ষ রুহুল আমিন। ২০১৬ সালে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড নানা অভিযোগে গভর্নিংবডি ভেঙে দিলে দীর্ঘ দুই বছর গভর্নিং বডি ছাড়াই চলেছিল প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তীতে এডহক কমিটি গঠিত হয় এবং সর্বশেষ গত ৩১ অক্টোবর নিয়মিত গভর্নিংবডি গঠিত হয়।

 

এই গভর্নিংবডি গঠনে মাদরাসার অধ্যক্ষ নিজেই ভোটার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং সংরক্ষিত মহিলা শিক্ষক সদস্য নির্বাচনে ভোট প্রদান করেছেন। শিক্ষার্থীর পিতা জীবিত থাকতে মাতাকে, আবার মাতা জীবিত থাকতে মৃত পিতাকে ভোটার বানানোসহ ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। এছাড়া খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ না করে সরাসরি অনুমোদিত সীল দিয়ে বোর্ডে একটি ভোটার তালিকা টানানো হয়। এতে করে কেউ কোন অভিযোগ বা আপত্তি করার সুযোগ পায়নি। মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষক জানান, প্রতিষ্ঠান প্রধান বা সহকারী প্রতিষ্ঠান প্রধানের ভোট দেওয়ার ক্ষমতা নেই। এ দুটি পদ প্রশাসনিক। তার পরও মাদরাসার অধ্যক্ষ ভোট প্রদান করেন। বিধি অনুযায়ী প্রত্যেক প্রার্থী বা অন্য কেউ নির্বাচনের ফলাফল শীট দাবি করলে তাকে সরবরাহ করার বিধান থাকলেও আয়েন উদ্দীন মহিলা মাদরাসার ম্যানেজিং নির্বাচনে ফলাফল শীট প্রদান করা হয়নি।

 

ফলাফল শীট দাবি করে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করলেও তা মাদ্রাসা থেকে সরবরাহ করা হচ্ছেনা। অধ্যক্ষ ভোট প্রদান করে বিধি লঙ্ঘন করার অপরাধ ঢাকতে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। অথচ অধ্যক্ষ ভোট প্রদান করা প্রবিধানের ২(দ) ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে জানান শিক্ষকরা। এ বিষয়ে মাদরাসার সংশ্লিষ্ট শিক্ষকগণ মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছেন।

মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটি গঠন উপলক্ষে প্রকাশিত ভোটার তালিকা ও পৌর সভার দেওয়া মৃত্যু সনদ থেকে জানা গেছে, ১০-১৫ বছর পূর্বে মৃত ব্যক্তিদেরকে অধ্যক্ষ ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সাতক্ষীরা পৌরসভার দেওয়া মৃত্যুসনদ সূত্রে জানা যায়, ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী জেবা খাতুনের পিতা কামাল হোসেন ১০ বছর পূর্বে মারা যায়। অথচ তাকে ৬১ নং ভোটার বানানো হয়েছে। ৭ম শ্রেণির ছাত্রী তাসনিমের পিতা আব্দুল জলিল জীবিত থাকা অবস্থায় তার মাতা মেরিনা খাতুনকে ভোটার বানিয়ে তাকে কমিটির সদস্য বানানো হয়েছে। আলিম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া খাতুনের পিতা আব্দুল গফুর প্রায় ১৩ বছর পূর্বে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। তাকেও ভোটার বানানো হয়েছে। এরকম অসংখ্য ভুলে ভরা এবং ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।

এব্যাপারে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাও: রুহুল আমিন বলেন, তড়িঘড়ি করে ভোটার তালিকা করতে গিয়ে মৃত ব্যক্তিদের নাম ভোটার তালিকায় উঠে গেছে। তাছাড়া খসড়া ভোটার তালিকাই চূড়ান্ত ভোটার তালিকা হিসেবে অনুমোদন লাভ করা নতুন করে আর তালিকা করা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ ভোট দিতে পারবেন না সত্য, কিন্তু কেউ আপত্তি করেননি বলে আমরা ভোট প্রদান করেছি। যদিও বিষয়টি সবাই জানেন।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও প্রিজাইডিং অফিসার মো: জাহিদুর রহমান বলেন, ভোটার তালিকায় কারা ভোটার তা অনুমোদন লাভ করে ম্যানেজিং কমিটির সভায়। অনুমোদিত ভোটার তালিকা কর্তৃপক্ষ প্রিজাইডিং অফিসারের নিকট। প্রিজাইডিং অফিসার নির্বাচনী তফসীল ঘোষণা করেন এবং অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করেন। তিনি আরও বলেন, যখন দুজন প্রার্থীসম সংখ্যক ভোট পান তখন লটারীর মাধ্যমে বিজয়ী নির্বাচিত করা হয়। তবে প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক পদের কোন ব্যক্তির ভোট দেওয়ার কোন সুযোগ নেই।

এ ব্যাপারে সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, নিয়ম অনুযায়ী গভর্নিং বডি গঠনের সিদ্ধান্তের তারিখে যারা বৈধ শিক্ষার্থী তাদের অভিভাবকরাই ভোটার হবেন। ঐ মিটিংয়ে অধ্যক্ষকে একটি ত্রুটিমুক্ত ভোটার তালিকা তৈরীর অনুরোধ জানানো হলেও তিনি তা করেননি। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিভাবকরা বলেন, অনিয়ম দুর্নীতি করে এবং গোপনে গভর্নিংবডি গঠন করায় আমরা বঞ্চিত হয়েছি। যে কারণে উচ্চ আদালতে এর প্রতিকার দাবীও করেছি।https://www.dailysokalerdak.com.১৮/১/২০২২

Check Also

আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইল বাংলাদেশ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে ভারতকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।