গত শনিবার নদভীর স্ত্রী রিজিয়া তাঁর ফেসবুক পেজে রেজাউল ও রুহুল্লাহর দুটি ছবি দিয়ে একটি পোস্ট দেন। একটি ছবিতে দেখা যায়, রুহুল্লাহ বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউলের হাতে নৌকার প্রচারপত্র তুলে দিচ্ছেন। অপর ছবিতে দুজনকে কোলাকুলি করতে দেখা যায়।
ফেসবুক পোস্টে রিজিয়া লিখেছেন, ‘রেজাউল করিম সাহেবের সালাম নিন। ৭ তারিখ রুহুল্লাহ চৌধুরীকে নৌকা মার্কায় ভোট দিন। এলাকার উন্নয়ন ও শান্তিকে এগিয়ে নিন।’
রিজিয়ার পোস্টটি রুহুল্লাহও তাঁর ফেসবুকে শেয়ার করেছেন। এ পোস্টের নিচে বিভিন্ন ব্যক্তি মন্তব্য লিখে রুহুল্লাহকে রেজাউলের ‘সমর্থন’ দেওয়ার বিষয়টিকে সাধুবাদ জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেজাউল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সেদিন আমি অফিস থেকে বের হওয়ার সময় রুহুল্লাহর সঙ্গে দেখা হয়। তখন তিনি আমার সঙ্গে করমর্দন করেন। আমার হাতে তাঁর প্রচারপত্র তুলে দেন। ভোট ও দোয়া চান। পরে এই ছবি ফেসবুকে দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’
রেজাউল বলেন, ‘আমি কারও পক্ষে নেই। আমি নিরপেক্ষ। ভোটাররা যাঁকে নির্বাচন করবে করুক।’
৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার ১৬টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ হবে।
রেজাউল ২০০৩ সাল থেকে সাতকানিয়ার চরতী ইউপির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। চতুর্থবারের মতো ইউপি নির্বাচন করার জন্য রেজাউল প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে তা দাখিল করেছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগদলীয় প্রার্থী হিসেবে রুহুল্লাহর নাম ঘোষণার প্রেক্ষাপটে রেজাউল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।
এ বিষয়ে রেজাউল বলেন, ‘এমপি সাহেব (নদভী) মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বলায় প্রত্যাহার করে নিয়েছি। তাঁর শ্যালক নির্বাচন করায় আমাকে প্রত্যাহার করতে বলা হয়।’
সাংসদ নদভী প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেজাউলকে আমি কোনো চাপ দিইনি। তাঁকে বলেছি, আপনি এত বছর ধরে চেয়ারম্যান আছেন, এবার আর নির্বাচন না করেন।’
দলীয় সূত্রে জানা যায়, চরতী ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রুহুল্লাহর নাম ছিল না। জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে যে তালিকা মনোনয়ন বোর্ডে পাঠানো হয়েছিল, তাতে রুহুল্লাহর নাম ছিল না।
চরতী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রথমে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রদীপ কুমার চৌধুরীর নাম আলোচনায় ছিল। পরে রুহুল্লাহ মনোনয়ন পান।
রুহুল্লাহর মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার জন্য গত ৭ জানুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দীন চৌধুরী মনোনয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন। এতে রুহুল্লাহ সম্পর্কে বলা হয়, ‘জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির পর তাঁর গায়েবানা জানাজায় ইমামতি করেন রাজাকার মুমিনুল হক চৌধুরীর ছেলে রুহুল্লাহ চৌধুরী। এ ছাড়া গত বছরের ৩০ অক্টোবর চরতীতে কৃষকদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে রুহুল্লাহর বিরুদ্ধে।’
মূলত রুহুল্লাহর নৌকার মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পরই রেজাউলকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য ‘চাপ’ দেওয়া শুরু হয়। পরে তিনি তা প্রত্যাহার করে নেন।
একইভাবে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. মঈনুদ্দিন চৌধুরীকেও নানাভাবে চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
মঈনুদ্দিন চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেছেন, তাঁর বোনকে ফোন করে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বহিরাগত লোকজন এলাকায় এনে ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে।
জানতে চাইলে রুহুল্লাহ বলেন, ‘কাউকে চাপ দেওয়া হয়নি। সব মিথ্যা-বানোয়াট কথা। রেজাউল আমাকে সমর্থন দিয়ে নিজেই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এখনো তিনি আমাকে সমর্থন করছেন। আর মঈনুদ্দিনের তো এলাকায় জনভিত্তিই নেই।’
রেজাউল সমর্থন দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন—এমন প্রশ্নে রুহুল্লাহ বলেন, ‘রাজনীতির মাঠে কি সব কথা ওপেন বলা যায়?’