সব্যসাচী বিশ্বাস (অভয়নগর) যশোর:
যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলা প্রকৃতি প্রমিকদের এক অতি পরিচিত স্থান।
গ্রামীণ জনপদের পথের ধারে ফুটে থাকা বন্যফুল যে শোভা বিস্তার করে তার পাশাপাশি এই অঞ্চলের মানুষের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে চিত্তাকর্ষক বিনোদনের সুব্যবস্থা। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের মধ্য দিয়ে সারাদেশের ন্যায় যশোর-খুলনা তথা দক্ষিণাঞ্চলে শুরু হয়েছে পিকনিক ও ভ্রমণ। অন্যদিকে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে পিকনিক স্পটগুলো সেজেছে নতুন সাজে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমৃদ্ধ যশোরের অভয়নগর উপজেলার কয়েকটি পিকনিক স্পটেও এসেছে নতুন সাজ। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ১১ শিব মন্দির, ভাটপাড়া ইকোপার্ক, বাশুয়াড়ী খানজাহান আলী দিঘি, ভৈরব সেতু, পুড়াখালি বাওড়, প্রেমবাগ ও সুন্দলী ধাম, ভবদহ স্লুইস গেট, ভবদহ কলেজ ক্যাম্পাসসহ অভয়নগরের অর্ধডজন পিকনিক স্পট ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দর্শনার্থীদের জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত ও ভ্রমণ উপযোগি হিসেবে গড়ে উঠেছে।
শিল্পশহর নওয়াপাড়ার কোল ঘেঁষে বয়ে চলা ভৈরব নদীতেও প্রতিনিয়ত নৌকা ও ট্রলার ভ্রমণ দৃশ্যমান। রং-বেরংয়ের ব্যানার ফেস্টুন ও বেলুন উড়িয়ে নৌকা ও ট্রলার সাজিয়ে ভ্রমণপিয়াসীরা ছুটছেন নদীর অশান্ত জল আর ঢেউ ছুঁয়ে দেখতে। ভৈরব সেতু ও সেতুর পাদদেশে দিয়াপাড়া নতুন বাজারের পূর্বদিকে কালোজলের খেলা দেখতে পুড়াখালি বাওড়েও ছুটছেন তরুন-তরুনীসহ সব বয়সের মানুষ। এখানে আসলেই যে কেউ প্রকৃতির প্রেমে পড়বেন। পাখির কলরব ও ফাল্গুনী হাওয়ায় মন উতালা হয়। সুনীল আকাশ, পড়ন্ত বিকেল অশান্ত মনের যত যন্ত্রণা পুড়াখালি বাওড়ের জলে ভাসিয়ে হৃদয়টাকে প্রফুল্ল করে ফেরেন দর্শনার্থী। বাওড়ের পাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্যাস্ত দেখা যেনো সমুদ্রের কিনারে দাঁড়িয়ে অনুভবের সদৃশ। কাটানো, বিনোদন ও প্রকৃতি দর্শনে ভবদহ বিল ডিঙিয়ে অনেকে আবার ছুটছেন ভবদহ কলেজ ক্যাম্পাসে। চারিদিকে ছোট ছোট নদীর বাঁক। নানা রঙের ফুল-ফলের বৃক্ষ। বাতাসে মৌ মৌ গন্ধ। আম-কাঠালের মুকুল আর কৃষ্ণচূড়া ফুলের সমাহার ভবদহ কলেজ ক্যাম্পাস জুড়ে। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিস্তৃর্ণ জলরাশি, ফসলের মাঠ, বাঁকা নদী, স্লুয়িস গেট ও প্রকৃতির অপরূপ সাজ দেখতে ছুটে আসেন প্রকৃতিপ্রেমীরা এই কলেজ ক্যাম্পাসে। প্রকৃতির সাজের পাশাপাশি কলেজ কর্তৃপক্ষের সৃষ্টিশীল কারুকাজ ও বাহারি স্থাপত্য/ভাস্কর্য বাড়তি আনন্দ দেয় দর্শনার্থীদের।
১১ শিব মন্দির ও ভাটপাড়া ইকোপার্ক অভয়নগরের অন্যতম আকর্ষণীয় পিকনিক স্পট। ভৈরব নদীর কূল ঘেঁষে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে এই পার্কটি। নদীর তীরে অভয়নগর পুরাতন থানা ভবনের পশ্চিমে ১১ শিব মন্দির এবং পূর্বে ইকোপার্ক। কারুশিল্পীদের দীর্ঘদিনের পরিশ্রমে গড়ে তোলা হয়েছে সাদাপরী, উট, বাঘ, কুমির, হরিণ, বানরসহ অসংখ্য বন্যপ্রাণীর ভাস্কর্য। নাগরদোলা, রেলরাইডসহ বাচ্চাদের নানাবিধ খেলার উপকরণও রয়েছে এই ইকোপার্কে।
অভয়নগরের অন্যতম প্রতত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নের বাশুয়াড়ী পীর খানজাহান আলী দিঘি ও মসজিদ। প্রায় ৬’শ বছরের পুরাতন দিঘি দেখতে প্রতিদিন ভিড় জমে এখানে। যারা দীর্ঘ পথপাড়ি দিয়ে বাগেরহাটে পীর খানজাহান আলীর দরবার ও দিঘিতে পৌঁছতে ব্যর্থ, তারা ছুটে আসেন অভয়নগরের পীর খানজাহান আলী দিঘি দর্শনে। প্রাণ জুড়িয়ে যায় দিঘির কালোজলে অবগাহন করে।