শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র হল পরিবার। পরিবার থেকে একজন শিশু আচার-আচারণ,আদব- কায়দা, ভালো – মন্দ শিখে থাকে।আর বাবা- মা হলেন এই শিক্ষা কেন্দ্রের প্রথম শিক্ষক। তাই মা -বাবা যেভাবে সন্তানকে শেখাবে ঠিক সেভাবে শিখবে। কিন্তু সত্য কথা হল এই জায়গায় আমাদের দেশের বেশির ভাগ বাবা- মা যত্নবান না। আপনি যদি আপনার শিশু সন্তানের প্রতি যত্নশীল না হন।তাহলো, এর প্রভাবে যে ফল পাবেন সেটা অনেক কষ্টদায়ক।
একটি ঘটনা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি। কিছুদিন আগে আমার দূরসম্পর্কের পরিচিত এক আপার বাসায় গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি আপার এক সাত বছরের পিচ্ছি মেয়ে মোবাইল ফোনে যে গান শুনছে, সে গান শুনে আমি লজ্জায় পড়েছি। আমি ওই আপাকে বললাম মেয়ের কাছ থেকে মোবাইলটা নিয়ে অন্যকিছু দেন। আপা বললেন, মোবাইলে যা চলছে এটা পালটালে ও কান্নাকাটি করবে ওকে আর থানানো যাবে না। আমি বললাম আপনার সন্তান তো জন্মগতভাবে এই গান শুনতে হবে এটা শিখে আসেনি। আপনি যা করবেন, আপনার সন্তানের সামনে ও তো সেটাই শিখবে বা সেটাই করবে। তাই সন্তানের যত খারাপ অভ্যাস আছে। এগুলোর জন্য দায়ী আপনারাই। আমার মনে হল আমারএই কথা উনি প্রত্যাশা করেননি।
আরেকটা ঘটনা বলি,কয়েক বছর আগে একটা টিউশনি ছিল আমার। বাচ্চার বয়স আট বছর হবে। ছাত্রীর বাবা- মা দুইজনে চাকরি করে। চাকরির কারনে সন্তানকে সময় দিতে পারেন না। রেখে যান কাজের মেয়ের কাছে। চাকরির কারনে বাবা-মা সকালে বের হন আর বাসায় ফেরেন রাতে। এই দুই সময় তাদের শিশু সন্তানটি ঘুমিয়ে থাকে।এক সময় এই শিশু সন্তানটির বাবা- মা বুঝলো তাদের সন্তানের আচারণ অস্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। সারাদিন কাজের মেয়ের কাছে থাকার কারণে, এই শিশু কাজের মেয়ের আচার-আচরণ যা দেখছে তাই শিখছে। যা বাবা- মাকে বুঝতে দেরি হয়ে গেল। এই সন্তান কী শিখে বড় হবে।
কাজেই এই শিশু সন্তানটি বাবা- মায়ের ভালোবাসা, তাদের কাছ থেকে যে কিছু শিখবে সবকিছু থেকে বঞ্চিত। এর দায়ভার এই বাবা-মায়ের।
একটু খেয়াল করে দেখেন দুইটা ঘটনায় একই রকম। আপনার সন্তান কেমন হবে তা নির্ভর করবে তার ছোটবেলায় বেড়ে ওঠার উপরে। তাই আপনার সন্তানকে আপনার সময় দিতে হবে। বাবা- মা হিসেবে আপনার সন্তান সুস্থ পরিবেশে বড় হবে না অসুস্থ পরিবেশে বড় হবে তা নির্ভর করবে আপনাদের উপর।
প্রথম ঘটনা দেখুন, সন্তানের সামনে যদি তার মা অশ্লীল গান না বাজিয়ে ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পূর্ণ সঙ্গীত শোনাতো তাহলে সে এগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হতো।কিন্তু বাবা- মা তা করতে পারিনি।দ্বিতীয় ঘটনা দেখুন বাবা-মা দুজনই চাকরি করার কারনে সন্তানকে সময় দিতে না পারাই। এই সন্তান আলটিমেটলি কাজের মেয়ের চাল – চলন নিয়ে সে বড় হবে।
আপনার সবকিছু তো আপনার সন্তানের জন্য, তাহলে তার জন্য সময় বের করুন।ছোট বেলায় গল্পের বই পড়ানোর অভ্যাস করুন, বিভিন্ন জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যান,বিকালে নিয়মিত খেলাধুলার সুযোগ দিন।তাদের সাথে গল্প করুণ।
বাবা-মা হিসাবে আপনার সন্তানকে কোন পরিবেশে বড় হবে। তা নির্ভর করবে আপনাদের উপর। তাই সময় থাকতে আপনার সন্তানের প্রতি যত্নশীল হোন।
সাইফুল ইসলাম
শিশু সংগঠক