এতিমদের নামে ভুয়া তালিকা তৈরি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ: ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি

নিজস্ব প্রতিনিধি: এতিমখানায় এতিম না থাকলেও এতিমের ভুয়া তালিকা তৈরি করে তাদের খাওয়া ও পোশাক বাবদ বছরের পর বছর মোটা অঙ্কের টাকা উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা সদরের শাল্যে দাখিল মাদ্রাসার সুপারের বিরুদ্ধে। এতিম শিশুদের নামে এ পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার হিসাব পাওয়া গেছে। গায়েব করা হয়েছে কয়েক বছরের হিসাবের রেজিস্ট্রার। ফলে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাত করা হলেও তার কোন খবরই নেই খোদ সমাজসেবা অধিদপ্তরে। বিষয়টি জানাজানি হবার পর সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো: সহিদুর রহমান ওই এতিমখানার নামে বরাদ্দ স্থগিত করেছেন।

সরেজমিনে জানা গেছে, সাতক্ষীরা উপজেলার শাল্যে দাখিল মাদ্রাসা কাম এতিমখানা নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করে। সমাজসেবা থেকে এতিমখানার নিবন্ধন নং ২৮০। বর্তমানে এতিমখানাটির কোন অস্তিত্ব নেই। এমনকি সাইনবোর্ডও দেখা যায়নি। নেই কোন কার্যক্রম। স্থানীয়রা বলছেন, এই এতিমখানায় তারা কোনো সময়ে কোনো এতিমকে থাকতে দেখেননি। অথচ শাল্যে দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও এতিমখানার সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম ওই এতিমখানায় ৬জন এতিমের নামে ভুয়া তালিকা তৈরি করে বিভিন্ন সময়ে আত্মসাত করেছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।

উপজেলা সমাজ সেবা অধিদপ্তরের কার্যালয় থেকে জানা যায়, কমপক্ষে ১০জন এতিম ছাড়া কোন এতিমখানায় অনুদান পাওয়ার কিম্বা দেওয়ার সুযোগ নেই। সমাজসেবা অধিদপ্তর হতে নিবন্ধিত এতিমখানার সম্পাদক মো. নূরুল ইসলাম, ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এতিমদের ভুয়া তালিকা তৈরি করে হাতিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। ২০১৮ সালের ৭ মার্চ মাদ্রাসার শিক্ষক কবির হোসেনের মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। এরপর ওই বছর ২ জুলাই সুপার নূরুল ইসলাম ৬০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সুপার তুলেছেন ৬০ হাজার টাকা। এরপর একই বছর ২৬ জুন সুপার নূরুল ইসলাম আরও ৬০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন এতিমদের ভরণ-পোষণের নামে। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কোন খাতাপত্র নেই। তবে বছর বছর এতিমদের খাওয়া ও পোশাক বাবাদ অর্থ উত্তোলন করলেও এতিমখানাটি দীর্ঘ দিন ধরে খালি পড়ে আছে। সেখানে নেই এমিতদের থাকা ও খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা।

এ বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে শুরু থেকে অদ্যাবদি কোনো আসবাবপত্র ও এতিম নিবাসী নেই। বিভাগীয় পরিদর্শন কিংবা প্রশাসনের তদারকিকালে বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েকজন এতিম শিশুকে উপস্থিত করে ছবি তুলে রাখে। ওই ছবি ও ভুয়া নামের তালিকা দেখিয়ে পার পেয়ে যান। এমন কৌশলেই এ যাবৎ এতিমদের জন্য বরাদ্দ সরকারি টাকা উত্তোলন ও আত্মসাৎ করে যাচ্ছেন।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা সহিদুর রহমান বলেন, এতিমখানাটির রেজিস্ট্রেশন থাকলেও নেই কোন এতিম শিশু। ভুয়া নামের তালিকা দিয়ে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি জানতে পেরে বর্তমানে ওই এতিমখানায় বরাদ্দ স্থগিত করেছি। ১০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এতিমখানার অনুকূলে দেওয়া বরাদ্দের হিসাবের খাতা গায়েব করা হয়েছে। সে সময় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন মো: রোকনুজ্জামান। যে কারণে কী পরিমাণ অর্থ ওই ৫বছরে উত্তোলন করা হয়েছে তার হিসাব আপাতত উপজেলা সমাজসেবা অফিসে নেই। তিনি আরও জানান, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ওই এতিমখানায় কিস্তিতে দুই লক্ষ ৪০ হাজার টাকার অনুদান দেওয়া হয়।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।