সারা দেশের সাথে বরিশাল কৃষি অঞ্চলেও বোরো আবাদে সর্বকালের রেকর্ড সৃষ্টির পরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে নতুন মাইল ফলক রচনার লক্ষ্যে মাঠে কৃষি যোদ্ধাগন। তবে মৌসুমের শুরুতে ডিজেলের মূল্য ২৩% বৃদ্ধির ফলে এবার উৎপাদন ব্যায় ৯শ টাকা অতিক্রম করার আশংকার কথা জানিয়ে বোরো ধানের দাম মনপ্রতি নুন্যতম ১১শ টাকা না পেলে ভাগ্য বিপর্যয় শংকার কথাও জানিয়েছেন কৃষি যোদ্ধাগন। এতেকরে আগামীতে দেশের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল বোরা আবাদে কৃষকের আগ্রহে ভাটা পড়ার শংকার কথাও জানিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদ সহ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষি মন্ত্রনালয়েরই একাধীক মহল।
চলতি রবি মৌসুমে দেশে ৪৮ লাখ ৭২ হাজার ৬শ হেক্টরে আবাদের মাধ্যমে ২ কোটি ৯ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে ১৫ মার্চ চুড়ান্ত সমাপনি দিনে দেশে ৪৯ লাখ ৯ হাজার হেক্টরে বোরো ধানের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই সূত্রে জানা গেছে। এরমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় ৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৮৫ হেক্টরে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৫০ হেক্টরে বোরো ধানের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় লক্ষ্যমাত্রার ১১৩ ভাগ এবং বৃহত্বর ফরিদপুরের ৫ জেলায় ১০২% জমিতে বোরো আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় যে ১৫ লাখ ২২ হাজার ৫২০ টন বোরো চাল পাবার লক্ষ রয়েছে, তা ১৬ লাখ টনে পৌছবে বলে আশা করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
তবে দক্ষিণাঞ্চলে এখনো হাইব্রীড জাতের ধানের আবাদ কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌছেনি। সারা দেশে এবার ১২ লাখ ৩৬ হাজার ৭শ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরিতে ১৩ লাখ ২২ হাজার হেক্টরের বেশী জমিতে হাইব্রিড জাতের বোরো আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় অতি উচ্চ ফলনশীল এ জাতের ধানের আবাদের পরিমান ৬৬ হাজার হেক্টরেরও কম। আর বৃহত্বর ফরিদপুরে আবাদ হয়েছে ৭২ হাজার ৪৮৩ হেক্টরে।
এমনকি প্রায় ৮লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলে আউশ, আমন ও বোরো মৌসুমে হাইব্রীড জাতের ধানের আবাদ আরো ১০ভাগ বৃদ্ধি করতে পারলে, এঅঞ্চলে ১০ লক্ষাধীক টন খাদ্য উদ্বৃত্তের লক্ষ্যে পৌছান সম্ভব বলেও কৃষিবীদগন মনে করছেন।
গত বছর রবি মৌসুমে দেশের প্রায় ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে প্রথমবারের মত ২ কোটি ৮ লাখ টনেরও বেশী বোরো চাল উৎপাদন হয় বলে কৃষি মন্ত্রী দাবী করেছেন। চলতি বছরে দেশে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ৪৮.৭৩ লাখ হেক্টরের বিপরিতে আবাদ ৪৯ লাখ ৯ হাজার হেক্টরে পৌছেছে। ফলে সারা দেশে ২ কোটি ৯ লাখ ৫১ হাজার টন চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে তা ২ কোটি ১১ লাখ টনে পৌছানের ব্যাপারে আশাবাদী মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। যা দেশকে এযাবতকালের সর্বোচ্চ বোরো উৎপাদনে নিয়ে যতে পারে। তবে এজন্য প্রকৃতি সদয় থাকার পূর্বশর্তের কথা জানিয়েছেন কৃষিবীদগন। ইতোমধ্যে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি এলাকায় সেচ সংকটের খবরও আসছে। এমনকি সেচের পানির অভাবে বরেন্দ্র এলাকায় এক কৃষকের আত্মহননের মত ঘটনাও ঘটেছে।
অপরদিকে চলতি রবি মৌসুমের শুরুতেই তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় বিপুল সংখ্যক বোরো বীজতলা ‘কোল্ড ইনজুরীর’র কবলে পড়ে। দক্ষিণাঞ্চলে ধান পাকতে আরো দেড়মাস বাকি। ফলে কাল বৈশাখীর ছোবলের আশংকাও থেকে যাচ্ছে। তবে উত্তরাঞ্চলের কিছু স্থানে ইতোমধ্যে ধান পাকতে শুরু করেছে। কিছু স্থানে কর্তনও শুরু হয়েছে সিমিত আকারে।
গত বছর রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে অতিরিক্ত প্রায় ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হলেও এবার ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি সহ বৈরী আবহাওয়া অত্যন্ত স্পর্ষকাতর এ ধানের জন্য ঝুকি বৃদ্ধি করে।
বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হবার সাথে ডিজেলের মূল্যবদ্ধি এবার ইরি-বোরা আবাদকে কিছুটা হলেও ব্যাহত করেছে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন। ডিএই’র মতে, দক্ষিনাঞ্চলের ১১টি জেলার যে সাড়ে ১০ লাখ কৃষক ইরি-বোরোর আবাদ করেন, তার সেচকাজে প্রায় ৬৫ হাজার সেচ পাম্প ব্যাবহ্রত হয়ে থাকে। যারমধ্যে মাত্র ৬ হাজারের মত বিদ্যুৎ চালিত। অবশিষ্ট ৬০ হাজারেরও বেশী পাম্প ডিজেল চালিত বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের গত মৌসুমের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে। এখনো দক্ষিণাঞ্চলের বোরো সেচাবাদ প্রায় পুরোটাই ডিজেল নির্ভর।