এক পটকা মাছে ৩০ জনের মৃত্যু হতে পারে: সাতক্ষীরায় পটকা মাছ খেয়ে একজনের মৃত্যু

হুসাইন বিন আফতাব, শ্যামনগর থেকে: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর ইউনিয়নের বংশিপুর গাইন পাড়ায় পটকা মাছ দিয়ে ভাত খাওয়ার পর একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরের পর সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মতিয়ার রহমান (৫৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়।
পারিবারিক সূত্রে মতিয়ার রহমানের মামাতো ভাই আব্দুল হান্নান জানান, মতিয়ার রহমান মঙ্গলবার বেলা এগারটার দিকে স্থানীয় বংশীপুর বাজার থেকে পটকা মাছ কিনে নিয়ে যান। দুপুরে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে পটকা মাছ দিয়ে ভাত খায়। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সহ অন্যান্যদের শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় হয়।
কিন্তু অবস্থার অবনতি মনে হলে কর্তব্যরত ডাক্তার সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর এর পরামর্শ দেন।
অসুস্থ রোগীদের নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মুজিবুর রহমানের মৃত্যু হয়।
এদিকে, এ ঘটনায় একই পরিবারের সাগর গায়েন, পিতাঃ মতিয়ার রহমান, মমতাজ বেগম, স্বামীঃ নজরুল ইসলাম, শিলমী, স্বামীঃ সাগর গায়েন, জাহাঙ্গীর আলম, পিতাঃ নজরুল ইসলাম মারাত্মকভাবে অসুস্থতা অবস্থায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অসুস্থ রোগীরা সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে এবং মৃত্যু মতিয়ার রহমানের লাশ বাড়িতে আনার প্রস্তুতি চলছে।
                                       এক পটকা মাছে ৩০ জনের মৃত্যু হতে পারে: গবেষণা

বিষাক্ত মাছ পটকা। দেশের প্রায় সব জায়গায় এ মাছ পাওয়া যায়। পটকা মাছ খেয়ে মানুষের মৃত্যু হওয়ার খবরও মাঝে মাঝে পাওয়া যায়। বুধবার রাতে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বউ-শাশুড়ি মারা গেছেন এই মাছ খেয়ে। ২০১৫ সালে সিলেটের জৈন্তায় একই পরিবারের ছয়জন পটকা মাছের বিষক্রিয়ায় মারা গিয়েছিল।

এ মাছ এতই বিষাক্ত যে একটি মাছ খেয়ে মারা যেতে পারে অন্তত ৩০ জন। জাপানে পটকা মাছ খুবই জনপ্রিয়। তবে তারা রান্না করার আগে এ মাছ থেকে বিশেষভাবে বিষ আলাদা করে নেয়। তবে সে প্রযুক্তি এখনো আসেনি বাংলাদেশে। তাই এ মাছের বিষক্রিয়া থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়, তা না খাওয়া।

পটকা মাছ নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। সরকারি পর্যায়ে ২০১৫ সালের সিলেটে পাঁচজন মারা ঘটনার পর ব্যাপক কাজ করেছে মৎস্য বিভাগ। মৎস্য বিভাগের গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য দেশ রূপান্তর জানিয়েছেন মৌলভীবাজারের সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ।

তিনি জানান, মানুষ এ মাছ সম্পর্কে জানে না বলেই খায়। আর সে কারণেই মারা যায়।

জানা যায়, পটকা মাছ বা Puffer Fish জাপানে ফুগো মাছ বলে পরিচিত। এটি আসলে বিষাক্ত জলজ প্রাণী বা মাছ। এ মাছে রয়েছে ক্ষতিকারক টিটিএক্স (TTX) বা টেট্রোডোটোক্সিন (Tetrodotoxin) বিষ। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি যে পটকা মাছের প্রজাতি পাওয়া যায়, তার বৈজ্ঞানিক নাম Tetraodon Cutcutia, ইংরেজিতে এ প্রজাতিকে Ocellated Pufferfish বলে। মাছটিকে স্থানীয়ভাবে টেপা বা ফোটকা মাছও বলা হয়। তবে যে নামেই ডাকা হোক না কেন তার বিষাক্ততা কোনো অংশে কমে যায় না। বিষাক্ত পটকার চামড়া, যকৃত এবং ডিম্বাশয়ে সবচেয়ে বেশি বিষ থাকে। পটকার বিষ পটাশিয়াম সায়ানাইডের চেয়েও বেশি বিষাক্ত। প্রায় ১ হাজার ২০০ গুণ বেশি বিষাক্ত। একটি পটকা মাছের বিষে ৩০ জনের মৃত্যুও হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো কোনো সামুদ্রিক পটকা প্রতি গ্রামে ৪০০০ এমইউ পর্যন্ত বিষ বহন করে। একজন সুস্থ-সবল ব্যক্তি এমন বিষাক্ত পটকার তিন গ্রাম খেলেই বিষাক্রান্ত হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যাবে। অনেকের ধারণা, পটকা মাছ রান্না করলে এর বিষ নষ্ট হয়ে যায়। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। অত্যধিক তাপে বিষের উপাদান এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় রূপান্তর হতে পারে। এতে বিষাক্ততার খুব একটা তারতম্য হয় না।

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, সাধারণত প্রজনন ঋতুতে বা বর্ষাকালে এ মাছটি বেশি বিষাক্ত হয়ে পড়ে। তবে অন্যান্য সময়েও মাছটি কমবেশি বিষাক্ত থাকে।

পটকা মাছের বিষক্রিয়া সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে হয় না। কারও প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকতে পারে আবার কারও কম থাকতে পারে। সে হিসেবে পটকা মাছ খাওয়ার ২০ মিনিট থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে বিষক্রিয়া শুরু হতে পারে। পটকা মাছ খাওয়ার পর পর নিচের উপসর্গগুলো দেখে বোঝা যাবে যে, তিনি বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন কিনা-

১. পটকা মাছ খেয়ে কিছুক্ষণ পর বিষক্রিয়ায় বমি হতে পারে বা বমি বমি ভাব হতে পারে।

২. মাথা ঘোরানো, মাথাব্যথা ও আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা বেড়ে যাবে।

৩. তলপেটে ব্যথা ও ডায়েরিয়া হতে পারে।

৪. শরীর অসাড় হয়ে পড়া, হাত ও পায়ের পেশি দুর্বল হয়ে নিষ্ক্রীয় হয়ে যেতে পারে।

৫. হাঁটা-চলার অক্ষমতা ও স্বাভাবিক চিন্তা প্রকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

৬. কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করতে পারে।

সাধারণত এ মাছ খাওয়া বর্জন করাই সবার জন্য মঙ্গলজনক। তবে যদি কোনো কারণে কেউ মাছটি খেয়ে ফেলে এবং তার বিষক্রিয়া শুরু হয়, তাহলে কী করবেন? নিম্নোক্ত উপায়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে পারেন-

১. যে কোন উপায়ে চেষ্টা করতে হবে বমি করানোর জন্য। এ ক্ষেত্রে গ্রামের অনেক মানুষ গোবর গুলিয়ে সে পানি রোগীকে খাইয়ে থাকেন। যাতে বমি আসে আর ভক্ষণ করা মাছ বা বিষ বেরিয়ে আসে।

২. কাঠ কয়লা গুড়ো করে সরাসরি অথবা পানিরতে গুলে খাওয়াতে হবে। কাঠ কয়লা গুড়ো আর্ন্তজাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক বিষক্রিয়া নিরাময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ্য হিসেবে স্বীকৃত।

৩. প্রচুর পরিমাণ পানি খাওয়াতে হবে, যাতে বিষক্রিয়ার ফলাফল কমে আসে।

৪. চেষ্টা করতে হবে সজ্ঞান রাখার, কারণ জ্ঞান হারালে মস্তিষ্ক তার প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

৫. যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হবে এবং অবশ্যই ডাক্তারকে বলতে হবে লাইফ সাপোর্টে রাখতে।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।