কালিগঞ্জ প্রতিনিধি: বরের বয়স ৫০, কনের ২৮। ২৪ লাখ টাকা দেনমোহরে তারা বসলেন বিয়ের পিঁড়িতে। বেশ কিছুদিন পর হঠাৎ আলোচনায় বর সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী ও কনে তহমিনা খাতুন। ভালই কাটল তাদের ঈদ।
অনেকদিন ধরে গুঞ্জন ছিল সাঈদ মেহেদীর ছেলে অনিক মেহেদীর এক সময়ের বান্ধবী তহমিনার গ্রামের বাড়ি কালিগঞ্জের মৌতলা বাড়ির একটি ঘরে আটকা পড়েছেন সাঈদ মেহেদী। পরে পাড়া-পড়শিরা তাকে একরকম উত্তম-মধ্যম দিয়ে তহমিনার ঘর থেকে বের করে এনে ছেড়ে দেন।
তবে এ ঘটনা অনেকটাই চাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তা একসময় চাউর হয়ে পড়ে। এতে ক্ষুব্ধ হন সাঈদ মেহেদীর প্রথম স্ত্রী লাভলী ইয়াসমিন। লাভলী ইয়াসমিনের ঘরে এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। এক মেয়ের বিয়েও হয়ে গেছে।
ছাইচাপার মতো পড়ে থাকলেও বিষয়টি নিয়ে অনেকদূর এগিয়ে যায় সাঈদ মেহেদী ও তহমিনা খাতুনের পরিবার। শেষপর্যন্ত সম্প্রতি দুই পরিবারের সামাজিক সম্মতিতে অনুষ্ঠিত হয় বিয়ে।
সাঈদ মেহেদীর বড়ভাই আশেক মেহেদীর দাবি- ২৪ লাখ টাকা দেনমোহরে এ বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এখন সাঈদ মেহেদী তার দ্বিতীয় স্ত্রী তহমিনা খাতুনকে নিয়ে উঠেছেন কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সরকারি কোয়ার্টারে।
বহুল আলোচিত এ ঘটনার সরস প্রচার চলছে। এরই মধ্যে বিষয়টি ফেসবুকে স্থান পেয়ে তা ভাইরাল হয়ে পড়েছে।
বর সাঈদ মেহেদী বলেছেন, তিনি সামাজিকভাবে এ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এতে তার প্রথম স্ত্রীর সম্মতি রয়েছে।
সাতক্ষীরায় ছেলের বান্ধবীকে বিয়ে করেছেন কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সাঈদ মেহেদী। বিয়ের বিষয়টি তিনি বিভিন্ন সময় অস্বীকার করলেও এবার বিয়ের সময়ের একটি দৃশ্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।
দীর্ঘদিন বিয়ের খবরটি ধোঁয়াশার মধ্যে রাখলেও এবার স্বীকার করেছেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম তাহমিনা আক্তার মিনা (২২)। তিনি মৌতলা ইউনিয়নের আব্দুল মাজেদের মেয়ে। বর্তমানে তহমিনা আক্তার মিনা খুলনা বিএল কলেজের শিক্ষার্থী।
কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী মৌতলা গ্রামের বাসিন্দা। বর্তমানে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পদে দায়িত্বে রয়েছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে তিনি মৌতলা ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন।
জানা গেছে, বর্তমানে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের সরকারি কোয়ার্টারে অবস্থান করছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী। দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকেই প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে তার বিরোধ চলছে। দ্বিতীয় স্ত্রী তহমিনা ছিলেন সাঈদ মেহেদীর প্রথম স্ত্রীর ছেলে অনিক মেহেদীর বান্ধবী। ২০১৮ সালে তহমিনা ও অনিক মৌতলা শিমুরেজা এমপি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন।
কোয়ার্টারের আশপাশে বসবাসরত অনেকে জানান, ‘কয়েক মাস ধরে উপজেলা চেয়ারম্যানের কোয়ার্টারের ভেতরে এক তরুণী মেয়েকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। রাতের বেলা মেয়েটির চিৎকার ও সাঈদ মেহেদীর গালিগালাজের শব্দ শোনা যায়।’
বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে কালিগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদী বলেন, সরকারি কোয়ার্টারে তার দ্বিতীয় স্ত্রী তাহমিনা অবস্থান করছেন। তাকে ৪ বছর আগে বিয়ে করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
কোয়ার্টারে দ্বিতীয় স্ত্রীকে মারপিট ও গালিগালাজের বিষয় জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘পারিবারিক বিষয় নিয়েও আপনার সঙ্গে বলতে হবে নাকি? বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।’
উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রথম স্ত্রী লাভলী পারভীন জানান, ‘তার স্বামীকে ট্রাপে ফেলে বিয়ে করেছেন তাহমিনা। এখন সে উপজেলা চেয়ারম্যানের কোয়ার্টারে অবস্থান করছে।’
কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আবার বিয়ে করেছেন এমন খবর আমার জানা নেই।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৩ সালে সাতক্ষীরা শহরের একটি আবাসিক হোটেলে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে সদর থানায় মামলা হয়েছিল উপজেলা চেয়ারম্যান সাঈদ মেহেদীর বিরুদ্ধে। সেই মেয়েটির বাড়ি আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা এলাকায়।