আমীরুল হক পারভেজ চৌধুরী
পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশ। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দেশের ১৯টি জেলার ১৪৭টি উপজেলা প্রকৃতিগতভাবেই উপকূল এলাকা। দেশের এক-দশমাংশ এলাকা উপকূল, যার বিস্তৃতি ৭১০ কিলোমিটার। এই বিস্তৃত ভূমিতে প্রায় চার কোটি মানুষের বসবাস।
উপকূলের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে প্রকৃতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তা সত্ত্বেও এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা অফুরন্ত। ছেড়া দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পতেঙ্গা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ, চরকুকরী মুকরী, ঢাল চর, মনপুরা, চর নিজাম, কুয়াকাটা, হিরণ পয়েন্ট, বৃহৎ সুন্দরবনসহ উপকূলীয় বিচ্ছিন্ন চর ও চরাঞ্চলকে পরিকল্পিত উপায়ে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা সম্ভব।
এছাড়াও স্থানীয় খনিজ ও অন্যান্য সম্পদ- তেল, গ্যাস, গন্ধকসহ লবণ, মাছ, শুঁটকি মাছ, পান, ধান, সুপারি ইত্যাদি তো রয়েছেই। উপকূলের ইলিশ মাছের কথা সর্বজনবিদিত।
১৪৭টি উপজেলার উন্নয়নে টেকসই উপকূল গড়ে তোলা বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে জরুরি। উপকূল অঞ্চলের একজন গবেষক হিসেবে ঘনঘন ভূমিকম্প, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের প্রবণতা বেড়ে যাওয়া, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে ওঠা, জোয়ারের দীর্ঘ স্থায়িত্ব, নদী ভাঙন, মাটি ও পানিতে লবণাক্ততা, সুন্দরী গাছের মড়ক লক্ষণগুলো চোখে পড়ে।
দেশের ২৫ শতাংশ নাগরিক যেমন উপকূলে বসবাস করে, তেমনি জাতীয় অর্থনীতিতে জিডিপির কমবেশি ২৫ শতাংশ অবদান রয়েছে উপকূলের। উপকূলের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে প্রকৃতির মেলবন্ধন উপকূলকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে।
উপকূলে এমন কিছু বিচ্ছিন্ন চর ও চরাঞ্চল রয়েছে, যেখানে বিদ্যুৎ বা সৌর বিদ্যুৎ নেই। এরকম প্রান্তিক বিচ্ছিন্ন দ্বীপ বা চরের মানুষের কল্যাণে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা জরুরি। উপকূলের নদ-নদীর ভাঙনের ব্যাপক প্রভাব পড়ে উপকূলীয় জীবনে। নদ-নদীগুলোর গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং যথাযথ শাসন প্রক্রিয়ায় স্বাভাবিক রাখতে পারলে উপকূল অঞ্চল জাতীয় অর্থনীতিতে আরও বেশি অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
উপকূলীয় নদ-নদীর ভাঙনপ্রবণ অঞ্চল চিহ্নিত করে বাঁধ নির্মাণ এবং পুরনো বাঁধ সংস্কার জরুরি। ক্ষেত্রবিশেষে ছয় থেকে সর্বোচ্চ দশ মিটার পর্যন্ত বাঁধ উঁচু করতে হবে। উপকূলীয় বাঁধগুলো টেকসই এবং নির্মাণ কাজে যথাযথ তদারক করা হলে আগামী ১০০ বছরেও এই বাঁধের কোনো ক্ষতি হবে না। টেকসই বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হলে উপকূল এবং উপকূলের চর ও চরাঞ্চলগুলোর জীবন ও জীবিকার গতিপথ ত্বরান্বিত হবে।
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা পরিমাপ করা হলেও এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নদীর গতিপ্রকৃতি, ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের প্রকৃতিও পরিবর্তিত হচ্ছে। এসব বিষয় বিবেচনায় রেখে এখনই উপকূলীয় অঞ্চল রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের কথা ভাবতে হবে। সংরক্ষিত ও সমৃদ্ধ উপকূল গড়ে উঠলে মানুষের জীবনমানের উন্নতি হবে। সমৃদ্ধ উপকূলে মানুষের মুখে হাসি ফুটে উঠুক।
এম আমীরুল হক পারভেজ চৌধুরী : শিক্ষক ও পিএইচডি গবেষক, ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়