কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: বিদ্যুৎ-বিভ্রাটে অতিষ্ঠ হয়ে স্থানীয় গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল না দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সুরুজ্জামাল। মঙ্গলবার (৩১ মে) বিকালে উপজেলার কর্তিমারী এলাকায় মাইকিং করে এই প্রচারণা চালান এই নেতা।
আওয়ামী লীগের এই নেতার দাবি, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে স্থানীয় জনগণ অতিষ্ঠ হওয়ায় তিনি এই মাইকিং করিয়েছেন। তবে রৌমারী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দাবি, রৌমারীর কর্তিমারী এলাকার ফিডার বিভক্তের কাজ চলমান থাকায় তিন দিন ধরে সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন বন্ধ রাখা হচ্ছে। বিষয়টি কর্তিমারী বাজার সভাপতিসহ স্থানীয়দের জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (৩১ মে) বিকালে একটি বাইসাইকেলের সামনে ও পেছনে দুটি মাইক লাগিয়ে সুরুজ্জামালের নির্দেশে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করার আহ্বান জানিয়ে মাইকিং করেন মাইক অপারেটর কালাম।
সেখানে বলা হয়, ‘বিছমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। সবার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, যারা বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন, নিয়মিত বিদ্যুৎ না থাকলে কেউ বিদ্যুৎ বিল দেবেন না। প্রচারে মো. সুরুজ্জামাল সাহেব, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রৌমারী থানা শাখা।’ এ সময় সুরুজ্জামালকে মোটরসাইকেল নিয়ে পেছন পেছন আসতে দেখা যায়।
মাইকিংয়ের বিষয়ে সুরুজ্জামাল দাবি করেন, ‘পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ থাকলেও স্থানীয় গ্রাহকরা কোনও সেবা পাচ্ছেন না। দিনরাত মিলে খুব অল্প সময় বিদ্যুৎ সেবা পাওয়া যায়। বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ পান না গ্রাহকরা। এ জন্য প্রতিবাদ জানাতে স্থানীয় গ্রাহকদের বিল পরিশোধ না করার নির্দেশনা দিয়ে মাইকিং করিয়েছি।’
সুরুজ্জামাল বলেন, ‘আমি নিজে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাসহ দুই দিন বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে সমস্যা ও গ্রাহকদের অসন্তুষ্টি নিয়ে কথা বলে এসেছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। বিদ্যুৎ না থাকলে বিল দিমো ক্যা? বিদ্যুৎ দিলে তখন বিল দেমো। আমি তো বলি নাই বিল দেওয়া যাবে না, সেবা পাইলে বিল দেমো। দিনেও বিদ্যুৎ থাকে না, রাইতেও থাকে না।’
মাইকিং করে বিল না দেওয়ার নির্দেশনা দিতে পারেন কি-না, এমন প্রশ্নে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘প্রথমে চিন্তা করছি, সব জায়গায় মাইকিং করি। কিন্তু পরে শুধু এক পাক দিয়া বন্ধ করায় দিছি। আমার কথা হইলো, নিয়মিত বিদ্যুৎ দিয়া নিয়মিত বিল নেবে।’
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির রৌমারী জোনাল অফিসের জেনারেল ম্যানেজার মেহেদী মাসুদ বলেন, ‘সুরুজ্জামাল সাহেবের মাইকিং করার বিষয়টি জেনেছি। তার ফোন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে কথা বলতে পারিনি। তিনি যা করেছেন তা আইনসম্মত নয়। আমি বিষয়টি কর্তিমারী বাজার সমিতির সভাপতিকে জানিয়েছি। তাদেরকে জানিয়ে সরবরাহ লাইনের কাজ করছি।’
বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার বিষয়টি মাইকিং করে গ্রাহকদের জানানো হয়েছিল কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলে তখন মাইকিং করে জানানো হয়। তা না হলে সব গ্রাহক মনে করেন যে বিদ্যুৎ থাকবে না। ওই ফিডারের সব গ্রাহকের লাইন বন্ধ রাখা হয়নি। আমরা ফোন করে ওই ফিডারের আওতাভুক্ত কর্তিমারী বাজার সভাপতিসহ কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিষয়টি জানিয়েছিলাম।’
মাইকিং করে বিল পরিশোধ না করতে গ্রাহকদের নির্দেশ দেওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ্জামালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান পল্লী বিদ্যুতের এই কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, সুরুজ্জামালের বিরুদ্ধে উপজেলায় অবৈধ বালু বাণিজ্যসহ ড্রেজার মালিক সমিতির নামে সিন্ডিকেট তৈরির অভিযোগ আছে। এ ছাড়াও কর্তিমারী বাজারের কাছে সরকারি খাস জমি দখল করে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে এই নেতার বিরুদ্ধে।