সুইসাইড নোট লিখে আত্মহত্যা, সেই জ্যোতির স্বামী সুমিত গ্রেফতার

জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে নিজের জন্মদিনেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন দুই সন্তানের জননী গৃহবধূ জ্যোতি। বিয়ের পর থেকে পারিবারিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে চার দিন আগে অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এই মারোয়াড়ী নারী। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) মারা যান তিনি।

ঘটনার আগে লিখে যাওয়া সুইসাইড নোটের ভিত্তিতে আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে স্বামী সুমিত কুমার আগারওয়ালা নিক্কিকে রোববার রাত ১১টায় গ্রেফতার করে পুলিশ।

নিক্কি নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের নতুন বাবুপাড়া শহীদ ডা. বদিউজ্জামান সড়কের বাসিন্দা এবং যমুনা ব্রেড অ্যান্ড কনফেকশনারীর মালিক। সৈয়দপুরের বিশিষ্ট দানবীর ও মুক্তিযুদ্ধের শহীদ তুলশীরাম আগারওয়ালার নাতি এবং প্রয়াত শিল্পপতি সুশীল কুমার আগারওয়ালার বড় ছেলে এই নিক্কি।

নিহত জ্যোতির বড় ভাই ভারতের শিলিগুড়ি শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রঞ্জিত কুমার জজরিয়া বলেন, ২০০১ সালের ১২ ডিসেম্বর আমার বোনের বিয়ে হয়েছে। তারপর থেকেই তার ওপর মানসিক নির্যাতন করছে নিক্কি ও তার মা উমা দেবী। নিক্কির ছোট ভাই অমিত কুমার আগারওয়ালার সাথে সৈয়দপুরের স্থানীয় ডা. অমৃতা কুমারী আগারওয়ালার বিয়ের সময় কৌশলে মিথ্যা কথা বলে জ্যোতির নিজস্ব গহনা ও সঞ্চিত টাকা হাতিয়ে নেয় পরিবারের লোকজন। দীর্ঘ দিনেও ওই টাকা ও গহনা ফেরত দেয়া হয়নি। বরং ওই বিষয়ে কথা বললেই শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। নিক্কি মাদকাসক্ত ও পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ায় এবং এর প্রতিবাদ করায় পারিবারিক অত্যাচারের মাত্রা দিনে দিনে আরো বৃদ্ধি পায়। সম্প্রতি স্বামী-শ্বাশুড়ি-দেবর-জা মিলে নিয়মিত অমানবিক নির্যাতন অব্যাহত রাখায় জ্যোতি অতিষ্ঠ হয়ে প্রবলভাবে হতাশ হয়ে পড়ে। বুধবার আবারো সবাই মিলে নির্যাতন করায় ক্ষোভে দুঃখে একটি সুইসাইড নোট লিখে বৃহস্পতিবার সকালে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। নিক্কি ও উমা দেবী বিষয়টি জানতে পারলেও গুরুত্ব না দিয়ে ডা. অমৃতাকে দিয়ে ঘরোয়াভাবে চিকিৎসা দেয়। রাতে অবস্থার অবনতি হলে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মাইক্রোবাসে প্রথমে সৈয়দপুর ডক্টরস ক্লিনিকে নেয়া হয়। কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীকে ভর্তি না নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে চার দিন থাকার পর নিজের জন্মদিনের দিন বিদায় নেন
পৃথিবী থেকে।

একই রকম অভিযোগ করে জ্যোতির ভগ্নিপতি জয়পুরহাটের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কালী চরণ জানান, মূলত পুরো পরিবার মিলেই মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে জ্যোতিকে। সুইসাইড নোটেই এ ব্যাপারে স্পষ্টভাবে লিখে গেছেন তিনি। মৃত্যুর জন্য নিক্কি, উমা দেবী, অমিত ও অমৃতাকে দায়ী করে বিচার চেয়েছেন তিনি।

জ্যোতি সুইসাইড নোটে আরো লেখেন, বিয়ের পর থেকে ২১ বছরে এক দিনের জন্যও সুখের মুখ দেখতে দেয়নি শ্বাশুড়ি। ছেলের অপকর্মকে সায় দেয়াসহ উল্টাপাল্টা কথা বলে কান ভরান তিনি। সারা জীবন কেঁদেও গেল। টাকা ও গয়না নিয়ে ফেরত না দিয়ে মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার করে চলেছে। দুই সন্তানকেও ভয় দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে রেখেছে। কাজের লোক ও পাড়া প্রতিবেশীরাও সব জানে।

সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সৈয়দপুর সার্কেল) সারোয়ার আলমসহ নিহতের বাসায় রোববার দুপুরে গেলেও কাউকে পাওয়া যায়নি। সবার মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যায়। এতে স্থানীয় পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের উপস্থিতিতে তল্লাশি করে মৃতের নমুনা হাতের লেখা সংগ্রহ করা হয়। পরে রাতে আত্মহত্যার প্ররোচনার লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষাপটে সুমিত কুমার আগারওয়ালাকে গ্রেফতার করে সোমবার সকালে নীলফামারী আদালতে পাঠানো হয়।

সৈয়দপুর পৌরসভার ১১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এরশাদ হোসেন পাপ্পু বলেন, ইতোপূর্বেও অনেকবার সুমিত ও জ্যোতির পারিবারিক সমস্যার ব্যাপারে সালিশ বৈঠক করা হয়েছে। এতে স্বামীর পরকীয়া সম্পর্ক এবং শ্বাশুড়িসহ মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ জানা গেছে। গয়না ও টাকা নেয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই। আত্মহত্যার ব্যাপারেও আমাকে আগে জানানো হয়নি। মৃত্যুর পর পুলিশের কাজে সহযোগিতা করতে বাসায় গিয়েও ওই পরিবারের কাউকে পাইনি।

Check Also

সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন এর আয়োজনে বিজয় দিবস পালন ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা,পুরুষ্কার বিতারণ ও আলোচনা সভা  অনুষ্ঠিত হয়েছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।