সাতক্ষীরায় চলতি মৌসুমে ২৪ হাজার ৪৫৭ টন রফতানিজাত বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে, যার অভ্যন্তরীণ বাজার মূল্য ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি। উৎপাদিত এসব চিংড়ির ৭০ শতাংশই রফতানি করা হয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে। তবে করোনাকালে বাগদা চিংড়ির দেশীয় বাজারও সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান চাষী ও ব্যবসায়ীরা।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি মৌসুমে প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর পরিমাণ জমির ৫৪ হাজার ৯৬০টি লবণ পানির ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয়েছে। একটি বাদে জেলার ছয়টি উপজেলায় রফতানিজাত বাগদা চিংড়ি চাষ হয়েছে। ছয়টি উপজেলা হলো শ্যামনগর, আশাশুনি, কালীগঞ্জ, দেবহাটা, তালা ও সাতক্ষীরা সদর। সূত্রটি আরো জানায়, ২০২২ মৌসুমে জেলার লক্ষাধিক চিংড়িচাষী ২৪ হাজার ৫৪৭ টন বাগদা চিংড়ি উৎপাদন করেছেন। যার গড় দেশীয় বাজার মূল্য কেজিপ্রতি ৭৫০ টাকা। এ গড় মূল্য অনুযায়ী, ২৪ হাজার ৫৪৭ টন বাগদা চিংড়ির দাম আসে ১ হাজার ৮৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান জানান, সারা দেশে মোট যে পরিমাণ রফতানিজাত চিংড়ি উৎপাদন হয় তার ৬৫-৭০ শতাংশ জোগান দেয় সাতক্ষীরা জেলা। চলতি মৌসুমে জেলায় ২৪ হাজার ৫৪৭ টন রফতানিজাত বাগদা চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। যার দেশীয় বাজার মূল্য ১ হাজার ৮৪১ কোটি টাকার বেশি। তিনি আরো জানান, উৎপাদিত এসব চিংড়ির অন্তত ৭০ শতাংশ রফতানি হয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে, যা থেকে দেশে বৈদেশিক আয় এসেছে অন্তত আড়াই হাজার কোটি টাকা।
জেলার আশাশুনি উপজেলার সরাপপুর গ্রামের চিংড়ি চাষী রাজ্যেস্বর দাশ জানান, তিনি চলতি মৌসুমে ২ হাজার বিঘা আয়াতনের ঘেরে বাগদা চিংড়ি চাষ করেন। জমির লিজ মূল্য, রেণু পোনা ক্রয়, ঘের পরিচর্যা ও শ্রমিকের বেতন-ভাতা দিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটি টাকা উৎপাদন খরচ হয়েছে তার। তিনি বলেন, এর আগে পরপর তিন বছর বাগদা চিংড়ি উৎপাদনে মোটা অংকের টাকা লোকসান হয়েছে। তবে চলতি মৌসুমে কিছু লাভ হতে পারে বলে জানান।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রব জানান, করোনাকালে বাগদা চিংড়ি রফতানির পাশাপাশি দেশীয় বাজারও প্রসার হয়েছে। এখন দেশীয় বাজারে ৮০০-৮৫০ টাকা মূল্যে প্রতি কেজি বাগদা চিংড়ি ক্রেতারা ক্রয় করছেন। এছাড়া বিদেশের বাজারেও বাগদা চিংড়ির চাহিদা বেড়েছে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলার অন্যতম চিংড়ি রফতানি ও প্রক্রিয়াকরণ কারখানা দিপা সি ফুডস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী দীনোবন্ধু দাশ জানান, তিনি সাতক্ষীরা জেলায় উৎপাদিত বাগদা ও গলদা চিংড়ি রফতানি করেন জাপানসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। করোনা সংকট কাটিয়ে চিংড়ি রফতানি প্রসারিত হতে শুরু করেছে। তবে করোনা মহামারীর আগে যে চাহিদা ছিল সে স্থানে যেতে আরো সময় লাগবে।
বাংলাদেশ চিংড়ি রেণু পোনা উৎপাদন মালিক সমিতির সভাপতি ও বিশিষ্ট ঘের ব্যবসায়ী ডাক্তার আবুল কালাম বাবলা জানান, সাতক্ষীরায় প্রতি মৌসুমে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বাগদা রেণু পোনা বেচাকেনা হয়। এসব পোনার ৯০ শতাংশই আসে কক্সবাজার থেকে। এছাড়া কিছু স্থানীয়ভাবে ও প্রাকৃতিক উপায়ে সরবরাহ হয়।