খুলনা ব্যুরো: দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতাল। এ হাসপাতালটিতে এখন কোটি কোটি টাকা মূল্যের চিকিৎসা সরাঞ্জামাদি বিকল হয়ে পড়ে আছে। বিকল এ মেশিনগুলো সচল করতে না পারায় এগুলো এক প্রকার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। মুলত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একমাত্র উন্নত আধুনিক চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল। যেখানে সরকারীভাবে স্বল্প খরচে গরীব অসহায় রোগীদের উন্নত ও আধুনিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন যাবৎ এ রোগীদের চিকিৎসার কাজের জন্য আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি মেশিনগুলো বিকল হয়ে পড়ে আছে। এছাড়া ব্রেন টিউমার অপারেশনের জন্য কোটি টাকা ব্যয়ে অপারেটিভ মাইক্রোস্কপ অব নিউরো সার্জারি মেশিনটি এখনও পর্যন্ত নতুন অবস্থায় প্যাকেটে বস্তায় বন্দি হয়ে পড়ে আছে হাসপাতালটিতে। এখনও পর্যন্ত এই মেশিনটি ইনস্টল করতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এছাড়া রেডিওলজি বিভাগে ১টি এম-আরআই মেশিন, ১টি সিটি স্ক্যান মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে । এখনও পর্যন্ত এটি মেরামত করা সম্ভব হয়নি। হার্টের রোগীদের জন্য ১টি ইটটি মেশিনও বিকল হয়ে পড়ে আছে প্রায় দুই বছর যাবৎ। পাশাপাশি ১টি ক্যাথল্যাব ও ১টি এনজিওগ্রাম মেশিনও বিকল হয়ে পড়ে আছে। যে কারণে হাসপাতালটিতে গরীব অসহায় রোগীরা কিছুটা হলেও চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালটির প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ এই হাসপাতালে আধুনিক বেশ কয়েকটি চিকিৎসার সরাঞ্জামাদি মেশিন বিকল হয়ে পড়ে আছে। আমরা বেশে কয়েকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি ও চিঠি প্রেরণ করেছি। সেখান থেকে বড় বড় প্রকৌশলীরাও এসে এ সব বিকল মেশিনগুলো আর সচল করতে পারেনি। যে কারণে এগুলো এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এছাড়া ব্রেনের টিউমার অপারেশনের জন্য আধুনিক অপারেটিভ মাইক্রোস্কপ অব নিউরো সার্জারি মেশিনটি এখনও পর্যন্ত নতুন অবস্থায় পলিথিনে মোড়ানো আছে। ঢাকা থেকে যে অবস্থায় পাঠিয়েছিল সেই অবস্থায় পড়ে আছে। এখনও পর্যন্ত মেশিনটি ইনস্টল বা সচল করা সম্ভব হয়নি। আমরা মেশিনটি ফেরত নেয়ার জন্য মন্ত্রানালয়ে চিঠি প্রেরণ করেছি। তবে এখনও পর্যন্ত তারা কোন ব্যবস্থা নেননি। এছাড়া বড় বড় এসব মেশিন গুলো বিকল থাকায় বিভিন্ন সমস্যা হচ্ছে। একদিকে জায়গা স্বল্পতা পাশাপাশি বিকল মেশিন গুলো হাসপাতালটির রোগ নির্ণয় কক্ষের বড় একটি জায়গা দখল করে আছে। অন্যদিকে রোগীর প্রচন্ড চাপে সেবা নিতে ভিড়ের কারণে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কারণ এ সব মেশিন গুলো সচল থাকলে রোগীরা একটু হলেও বেশি সেবা পেত।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটিতে বর্তমানে প্যাথলজি বিভাগসহ এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন, ইকো, ইসিজি মেশিন, ডেন্টাল মেশিন, ব্রেন টিউমার অপারেশন মেশিন, হৃদরোগের জন্য এনিজওগ্রাম, ক্যাথল্যাব, ডায়ালাইসিস মেশিনসহ, সিটিস্ক্যানিং এমআরই চিকিৎসার সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের প্রশিক্ষিত জনবল এর অভাবে কাঙ্খিত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না আগত রোগীরা। এ ছাড়া হাসপাতালটিতে চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট, সিকিউরিটি আনসার সদস্য, ৪র্থ শ্রেণীর পরিচ্ছন্নতা কর্মি, আয়া ও ওয়ার্ড বয়সহ লোকবল সংকটে হাসপাতালের কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। শহীদ শেখ আবুনাসের হাসপাতালটির যেখানে অর্থপেডিক্স, কার্ডিওলজি, নিউরোলজি, ইউরোলজি, ডায়াবেটিস, কিডনি, দন্ত, লিভার, নিউরোমেডিসিন, বার্ন এন্ড প্লাষ্টিক সার্জারি-ইউনিট, ফিজিথেরাপি কক্ষ রয়েছে। হাসপাতালটিতে বহির্বিভাগে প্রতিদিন হাজারের মত রোগী সেবা নিতে আসে তবে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও জনবলের অভাবে প্রতিদিন বিশৃঙ্খলা ও রোগীদের ভীড় বেড়েই যাচ্ছে।
রোগী আজমল হোসেন বলেন, হাসপাতালটিতে হার্টের জন্য ইকো পরীক্ষা করতে আসছিলাম। ইকো রুম থেকে বলেছে দুই মাস পর আসেন এখানে অনেক সিলিয়াল। যে কারণে আমি বাইরের থেকে পরীক্ষা করে আনছি। এছাড়া ভর্তি রোগীদের সিরিয়াল পেতে গেলে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ ব্যাপারে শহীদ শেখ আবু নাসের হাসপাতালের পরিচালক ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, এ সব চিকিৎসা সরাঞ্জামাদি আমি যোগদান করার আগে থেকে বিকল হয়ে আছে। তবে আমি চেষ্টা করছি নতুনভাবে আবারো চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সচল করার জন্য। এ সব চিকিৎসার বিকল সরাঞ্জমাদি মেশিনগুলো মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠানোর জন্য বেশ কয়েকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালে কিছুটা চিকিৎসক বাড়ানো হয়েছে। অন্যান্য জনবল সংকট আছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মহোদয়কে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে । দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।