পুলিশের বাধা লাঠিচার্জ টিয়ারসেল নিক্ষেপ গ্রেফতার শতাধিক
রাজধানীতে জামায়াতের বিশাল গণমিছিল ॥ শ্লোগানে মুখর রাজপ
৩০ ডিসেম্বর ২০২২ – ২৩:৫৮ শনিবার ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট সংস্করণ
১০ দফা দাবিতে গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের গণমিছিল –
* লাখ জনতার উপস্থিতিই প্রমাণ করে জনগণ জামায়াতকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কল্পনা করে না
স্টাফ রিপোর্টার : ১০ দফা দাবি আদায় ও জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতৃবন্দের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে গণমিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। ঢাকা মহানগরী উত্তরের উদ্যোগে গণমিছিলটি রামপুরা বাজার থেকে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মৌচাকের কাছাকাছি আসলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ গণমিছিলের ব্যানার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং নির্বিচারে লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। মালিবাগে গণমিছিল করেছে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ। বিশাল গণমিছিলটি রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে খিলগাঁও তালতলা মোড়ে গিয়ে এক সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। গণমিছিল চলাকালে লক্ষ জনতার পদভারে ও মুহুর্মুহু ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার’ ‘একদফা একদাবি, শেখ হাসিনা কবে যাবি’ ‘এই মুহূর্তে দরকার কেয়ারটেকার’, ‘আমীরে জামায়াত জেলে কেন, শেখ হাসিনা জবাব দে’ ‘রাজপথে গুলী কেন, খুনী হাসিনা জবাব দে’ স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত এবং পুরো গণমিছিল উৎসব মূখর হয়ে ওঠে। গণমিছিল থেকে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয় বলে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। রাজধানী ছাড়াও গাজীপুর মহানগরী, ঢাকা জেলা উত্তর ও রংপুর মহানগরী গণমিছিল করেছে। এ দিকে গণমিছিলের কর্মসূচি সফলভাবে সম্পন্ন করায় নগরবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে এবং শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের বাধা দান ও গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দিয়ে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন, ১০ দফা দাবি আদায় ও জামায়াত আমীর ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতৃবন্দের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এই গণমিছিল কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। সারাদেশে গত ২৪ ডিসেম্বর এই গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানী ঢাকা, গাজীপুর ও রংপুরে গতকাল এই কর্মসূচি পালিত হয়।
মৌচাকে জামায়াতে গণমিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ : দুর্বার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমেই স্বৈরাচারী, ফ্যাসীবাদী ও অগণতান্ত্রিক শক্তির পতন ঘটিয়ে জনপ্রতিনিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার করে ভোট ও ভাতের অধিকার সহ গণমানুষের সকল অধিকার নিশ্চিত করা হবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর সেলিম উদ্দিন।
গতকাল রাজধানীতে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসাবে অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন, ১০ দফা দাবি আদায় ও আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতৃবন্দের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তর আয়োজিত গণমিছিল পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। সমাবেশ উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় মজলিস শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দিন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দীন মানিক, ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য মু. আতাউর রহমান সরকার, নাসির উদ্দিন ও জামায়াত নেতা শাহ আলম তুহিন প্রমুখ। গণমিছিল চলাকালে লক্ষ জনতার পদভারে ও মুহুর্মুহু ‘নারায়ে তাকবীর, আল্লাহু আকবার’ ‘একদফা একদাবি, শেখ হাসিনা কবে যাবি’ ‘এই মুহূর্তে দরকার কেয়ারটেকার সরকার’ ‘আমীরে জামায়াত জেলে কেন, শেখ হাসিনা জবাব দে’ ‘রাজপথে গুলী কেন, খুনী হাসিনা জবাব দে’ স্লোগানে রাজপথ প্রকম্পিত এবং পুরো গণমিছিল উৎসব মূখর হয়ে ওঠে।
গণমিছিলটি রামপুরা বাজার থেকে শুরু হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মৌচাকের কাছাকাছি আসলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ গণমিছিলের ব্যানার ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে এবং নির্বিচারে লাঠিচার্জ, টিয়ারসেল নিক্ষেপ ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে সামনে দিকে অগ্রসর হয়ে মালিবাগ হোসাফ সেন্টারের সামনে পৌঁছলে পুলিশ নির্বিচারে রাবার বুলেট ছুঁড়তে শুরু করে। কিন্তু জনতা পুলিশের গুলীবর্ষণ উপেক্ষা করে সামনে দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করলে রায়ট কার এসে তাদের গতিরোধ করে। সে সময় পুলিশ গণমিছিল থেকে শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। এ সময় ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন।
সেলিম উদ্দিন বলেন, অবৈধ ক্ষমতালিপ্সার কারণেই আওয়ামী গণতন্ত্র ও রাজনীতির ময়দানকে রীতিমত রঙ্গমঞ্চ বানিয়েছে। আর সরকার দলীয় নেতারা এখন নিজেদের সেই রঙ্গমঞ্চের জোকারে পরিণত হয়েছেন। ফলে তারা এখন জনগণের বিনোদনের অনুসঙ্গ। সরকার নিজেদের অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য আবারো তামাশা ও ভাঁওতাবাজীর নির্বাচন করার জন্য দিবাস্বপ্নে বিভোর। সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই তারা নতুন করে বিরোধী দলের ওপর দলন-পীড়ন শুরু করেছে। স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশ ও রাজপথে সভা-সভাবেশ প্রত্যেকের নাগরিক সাংবিধানিক অধিকার হলেও সরকার পুলিশ বাহিনী ও দলীয় সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে জনগণকে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। কিন্তু সরকারের যতই জুলুম-নির্যাতন বাড়ছে, ততই রাজপথ উত্তপ্ত ও অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছে। আজকের গণমিছিলে লক্ষ জনতার স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ও গগণবিদারী স্লোগান সে কথারই প্রমাণ বহন করে। তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনপ্রশাসনকে প্রজাতন্ত্রের প্রতি অনুগত থেকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
তিনি আমীরে জামায়াতের গ্রেফতারের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সরকার আসন্ন গণঅভ্যুত্থান ঠেকানোর জন্য আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান সহ জাতীয় নেতাদের গ্রেফতার করে নিজেদের নগ্ন, কদর্য ও বিভৎস চেহারা জাতির সামনে উন্মুক্ত করেছে। কিন্তু গ্রেফতার করে, জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে অতীতে কোন স্বৈরাচারি ও ফ্যাসীবাদী শক্তির শেষ রক্ষা হয়নি; আওয়ামী লীগেরও হবে না। তিনি অপরাজনীতি ও অবৈধ ক্ষমতালিপ্সা পরিহার করে অবিলম্বে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানান। অন্যথায় জনগণ দুর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে আমীরে জামায়াতকে বিজয়ীর বেশে মুক্ত করবে-ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, সরকারের পায়ের তলা এখন থেকে মাটি সরে গেছে। তারা গণবিচ্ছিন্ন হয়ে নানা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের পিঠ বাঁচানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছেন। কিন্তু কোন কিছুতেই তাদের শেষ রক্ষা হবে না। মূলত, ১০ দফার ভিত্তিতে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার পর তাদের মধ্যে হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। তারা এখন পতনাতঙ্কে বিনিদ্র রাত কাটাচ্ছেন। সে আতঙ্কের অংশ হিসাবে তারা এখন বিদেশী কূটনীতিকদের সাথেও কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ করতে শুরু করেছে। সম্প্রতি সরকার সমর্থকদের হাতে নাজেহালের শিকার হয়েছে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। ফলে আন্তর্জাতিক মহলে দেশের সম্মানহানি ঘটেছে। তারা নানাবিধ ষড়যন্ত্র করে আসন্ন সরকার বিরোধী আন্দোলনকে বিভ্রান্ত ও বিপথগামী করতে চায়। কিন্তু তাদের সে ষড়যন্ত্র জনগণ কখনোই সফল ও স্বার্থক হতে দেবে না। তিনি ষড়যন্ত্র ও অপরাজনীতি পরিহার করে অবিলম্বে পদত্যাগ করে কেয়ারটেকার সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানান। অন্যথায় সরকারকে ইতিহাসের নির্মম পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন, জামায়াত একটি নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক ও আদর্শিক রাজনৈতিক দল। জামায়াত সবসময় ইতিবাচক রাজনীতি, আইন ও সাংবিধানিক শাসনে বিশ^াসী। সর্বোপরি আমরা দুর্নীতি, দুঃশাসন, হত্যা, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার। ২০১৪ ও ২০১৮ তামাশার নির্বাচন ছাড়া স্বাধীনতা পরবর্তী সকল সংসদের জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব ছিল। এমনকি সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াত অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। তিনি গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সরকারকে আগামী দিনের করণীয় নির্ধারণ করার আহ্বান জানান। অন্যথায় তাদেরকে গণরোষের মুখোমুখি হতে হবে।
মহানগরী আমীর বলেন, সরকার ক্ষমতা হারানোর আতঙ্কে চলমান গণআন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার জন্য কথিত নাশকতার কল্পকাহিনী রচনা করতে শুরু করেছে। অথচ ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, অতীতে অগ্নিসন্ত্রাস সহ সকল নাশকতার সাথে আওয়ামী লীগই জড়িত ছিল। তারা জনতার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার জন্য দলীয় সন্ত্রাসীদের মাঠে নামানোর অগ্রিম ঘোষণা দিয়েছে। এতে প্রমাণ হয় তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের পথ বেছে নিয়েছে। কিন্তু জনগণ তাদের সে ষড়যন্ত্র কখনোই সফল ও সার্থক হতে দেবে না বরং অধিকারহারা জনতার উত্তাল জোয়ারে বাকশালীরা খরকুটার মত ভেসে যাবে। তিনি সরকারকে রাজপথে অনাকাক্সিক্ষতভাবে সংঘাত সৃষ্টি বিরত থাকার আহ্বান জানান। অন্যথায় সৃষ্ট যেকোন পরিস্থিতির দায়ভার সরকারকেই বহন করতে হবে।
জামায়াতকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের কোনো ভবিষ্যত কল্পনা করে না : যুগপৎ কর্মসূচির অংশ হিসেবে পূর্ব ঘোষিত রাজধানীতে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের বিশাল গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের মুক্তি, দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জনগণের সকল ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ১০ দফা দাবি আদায়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির আলোকে গতকাল জুমা’বার নামায শেষে রাজধানীর মালিবাগে গণমিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে বিশাল গণমিছিলটি রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে শুরু হয়ে আশেপাশের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে খিলগাঁও তালতলা মোড়ে গিয়ে এক সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। এই গণমিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসের শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসাইন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, আবু ফাহিম, শামছুর রহমান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য শ্রমিক নেতা আব্দুস সালাম, ড. মোবারক হোসাইন, জয়নাল আবেদীন, আব্দুর রহমান, শেখ শরিফ উদ্দিন আহমেদ, ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সভাপতি আব্দুল কাইউম মুরাদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান, ঢাকা মহানগরী পূর্বের সেক্রেটারি অহিদুল ইসলামসহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের বিভিন্ন থানা সংগঠনের আমীর ও সেক্রেটারিবৃন্দ।
গণমিছিল পরবর্তী সমাবেশে ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশের জনগণের ভোট ও ভাতের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন-সংগ্রাম করে যাচ্ছে। দেশে ন্যায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠার সেই সংগ্রামে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ফাঁসির কাষ্ঠে শাহাদাত বরণ করেছেন। শহীদ নেতৃবৃন্দ জালিমের সাথে আপস করেন নি। বাংলাদেশের জনগণের সকল অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সামনে কাতারে থেকে জামায়াত জনগণকে সাথে নিয়ে দেশে ঘোষিত ১০ দফা বাস্তবায়ন করবে ইনশাআল্লাহ। জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে অবিলম্বে দেশে একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে, জনগণের সমর্থন ও প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। আজ ঢাকায় জামায়াতের গণমিছিলে লাখ জনতার উপস্থিতি প্রমাণ করে এদেশের জনগণ জামায়াতকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের কোনো ভবিষ্যত কল্পনা করে না। ষড়যন্ত্রকারীরা ভেবে ছিলো জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দিলে, মামলা-হামলা করে জামায়াতকে শেষ করে দিবে। অথচ এতো বাঁধা প্রতিকূলতার মাঝেও জনগণ জামায়াতকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। জামায়াতের ডাকে এই গণমিছিলে তাই লাখো মানুষের উপস্থিতি। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের জনগণের ভোট ও ভাতের ন্যায্য অধিকার ফিরেয়ে দেওয়ার আন্দোলন-সংগ্রামে সবার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিবে। যুগপৎ আন্দোলনে জামায়াত ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দশ দফা দাবি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জনগণের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে আনা হবে। জামায়াত বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক সংগঠন। বর্তমান বাংলাদেশে এটা দলমত নির্বিশেষে সকলে মনে প্রাণে বিশ^াস করেন। এই জামায়াতকে স্বাভাবিক ভাবে দেশে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনার সুযোগ দিন। বার বার আবেদন করার পরও প্রশাসন ও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সুযোগ বা পরিবেশ না দেওয়া চরম মানবাধিকার ও আইনের শাসনের চরম লঙ্ঘন বলে বিশে^র সচেতন সব মহল মনে করে। জামায়াত ইসলামীকে বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনের আলোকে নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক সকল কর্মসূচি পালনের সুযোগ দিতে হবে। আমরা প্রশাসন ও মিডিয়া গণমাধ্যমের বলতে চাই, ‘আসুন দেখুন, এতো বাঁধা-বিপত্তির মাঝেও জামায়াত তার লাখো কর্মী নিয়ে রাজধানী ঢাকায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে।’ আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাই, আপনারা আমরা সকলে মিলে এই বাংলাদেশকে একটি সুখি-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেই ইনসাফপূর্ণ দেশ গঠনে দলমত ভেদাভেদ ভুলে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঐক্যবদ্ধভাবে আসুন দেশ গড়ার শপথ গ্রহণ করি।
তিনি আরও বলেন, ১০ দফা দাবি আদায়ে আগামী দিনে আরও কঠোর কর্মসূচি পালন করা হবে। এই গণমিছিল থেকে আমরা আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর আ. ন. ম. শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহঃ সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কারাবন্দী সকল সম্মানিত আলেম-উলামাদের মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় রাজপথের যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে বিরোধী দলীয় সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে মুক্ত করা হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি আগামী দিনে দেশের মানুষের মুক্তির আন্দোলন সংগ্রামে সকলকে অগ্রণী ভূমিকা পালনের উদাত্ত আহ্বান জানান।
এদিকে শান্তিপূর্ণ গণমিছিল শেষে ফিরে যাওয়ার পথে পথিমধ্যে পুলিশ বিনা উসকানিতে সংগঠনের কর্মী মো. আব্দুর রাজ্জাক, কাউসার সুমন, সালাউদ্দিন সহ মোট দশজনকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল। অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিতে তিনি প্রশাসন ও সরকারের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানান।
সাভারে পুলিশের বাধায় জামায়াতের গণমিছিল: যুগপৎ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, জামায়াত ঘোষিত ১০ দফা বাস্তবায়ন ও জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ বিরোধীদলীয় সকল রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে গণমিছিল করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা জেলা উত্তর শাখা। গতকাল সকালে সাভার পৌরসভার রেডিও কলোনি থেকে গণমিছিলটি শুরু হয়ে নিউমার্কেট গিয়ে শেষ। এসময় গণমিছিলের নেতৃত্ব দেন জামায়াতের ঢাকা জেলা উত্তর শাখার সেক্রেটারি শাহাদাত হোসেন।
গণমিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ঢাকা জেলা উত্তর জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ও আইন বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শহিদুল ইসলাম বলেন, জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানসহ সকল রাজবন্দীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ জামায়াত ঘোষিত ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গণ আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান এই জামায়াত নেতা।
জামায়াতের গণমিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা জামায়াতের রাজনৈতিক সেক্রেটারি হাসান মাহবুব মাস্টার, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুর রউফ, সাভার পৌরসভা আমীর আজিজুর রহমান, আশুলিয়া থানা আমীর বশির আহম্মদ, ধামরাই পৌরসভা আমীর জহিরুল ইসলাম, সাভার পৌরসভা জামায়াতে সেক্রেটারি আবদুল কাদের, শিবিরের জেলা সভাপতি রুহুল আমীন, জেলা সেক্রেটারি সানোয়ার হোসাইন প্রমুখ।