মার্কিন কর্মকর্তাদের সিরিজ সফরের মধ্যে মাত্র ৫২ মিনিটের জন্য ঢাকায় যাত্রা বিরতি করেছিলেন চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং। সোমবার দিবাগত রাতে (মধ্যরাতে) আফ্রিকার পাঁচ দেশ সফরে যাওয়ার পথে বাংলাদেশে থামেন (স্টপঅভার) তিনি। রাত ১টা ৫৮ মিনিটে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী উড়োজাহাজটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে এবং চটজলদি রিফুয়েলিং শেষ করে রাত ২টা ৫০ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে যায়। অভ্যর্থনা জানানো থেকে বিদায় অবধি পুরোটা সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন বিমানবন্দরে চীনা অতিথিকে সঙ্গ দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মহসিন রেজার পাঠানো তথ্য, অডিও-ভিডিও পর্যালোচনায় এটা অনুমেয় যে, উড়োজাহাজ থেকে বোর্ডিং ব্রিজ ধরে মন্ত্রী কিন গ্যাংয়ের নেমে আসা, তাকে অভ্যর্থনা জানানোর আনুষ্ঠানিকতা এবং ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে একই পথে ফেরার সময় বাদ দিলে আনুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৩০ মিনিটেরও কম সময় পেয়েছেন। তবে সংক্ষিপ্ত ওই বৈঠকেও তাদের মধ্যে বেশ ভালো আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। পূর্ব ঘোষিত শিডিউল মতে সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকায় পৌঁছানো এবং রাত ৩ টার দিকে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। জনসংযোগ কর্মকর্তার দাবি, ফ্লাইটটি যথা সময়ে ছেড়ে গেছে, কিন্তু অবতরণে বিলম্ব হওয়ায় দুই মন্ত্রীর আলাপ তথা যাত্রা বিরতির সময়টা কমে গেছে। চীনা মন্ত্রীকে বিদায়ের পর কনকনে শীত আর প্রচণ্ড বাতাসের মধ্যে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জের বাইরে অপেক্ষমাণ সংবাদকর্মীদের সঙ্গে আলাপে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশকে করোনার টিকা দেয়ায় চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। চীনের সঙ্গে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী মোমেন বলেন, বাণিজ্যে সমতা ফিরাতে চীনের বাজারে ৯৮ শতাংশ বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়ার কথা ছিলো।
কিন্তু গেজেট না হওয়ায় দীর্ঘদিন পার হলেও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়ে গেজেট নোটিফিকেশন তথা ঘোষণা পাকাপোক্ত করতে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন বলে জানান মন্ত্রী। পদ্মাসেতুসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে চীনের সহযোগিতা বিশেষত পদ্মাসেতুর রেল লিংক স্থাপনে চীনের সহায়তার বিষয়টি আলোচনায় স্থান পেয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, আমরা এক চায়নায় বিশ্বাস করি। এটা আমাদের মূলনীতি, এটা আমাদের পররাষ্ট্রনীতি। তবে আমাদের সবাইকে নিয়েই যে চলতে হয় সেটাও আমি বলেছি। আমি বলেছি, এ জন্য আমরা আপনাদের (চীনকে) টাইম টু টাইম সাপোর্ট দেবো। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় অর্থ সহায়তার বেশ কিছু চুক্তি সই হয়েছিল। কিন্তু সবগুলো এখনো বাস্তবায়ন হয়নি জানিয়ে মোমেন বলেন, প্রতিশ্রুত অর্থ দ্রুত ছাড়ের অনুরোধ করেছি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী তাকে বেইজিং সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন উল্লেখ করে মন্ত্রী মোমেন বলেন, জবাবে আমি তাকে (কিন গ্যাংকে) আরও বেশি সময় নিয়ে (পুরোপুরি দ্বিপক্ষীয় সফরে) ফের বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। জবাবে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কি বলেছেন সে সম্পর্কে মন্ত্রী মোমেন কোন কিছু শেয়ার করেন নি। তবে তিনি আফসোসের সুরে বলেন, কখন যে ফ্লাইট ছাড়ার সময় চলে এলো, বুঝতেই পারলাম না!
সেগুনবাগিচার দায়িত্বশীল প্রতিনিধিরা সোমবার সন্ধ্যা রাতে মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বলেছিলেন, চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি যতই সংক্ষিপ্ত বা স্রেফ যাত্রাবিরতি হলেও এটার বহুমাত্রিক তাৎপর্য রয়েছে। এজন্য শিডিউল যাই হোক বা রাত যত গভীরই হোক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিমানবন্দরে তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে যাবেন- এটা নিশ্চিত। তাদের মতে, বন্ধুত্বের বিশেষ বার্তা বিনিময়ে চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করে বেইজিং ফিরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চেয়ারে বসা কিন গ্যাংয়ের সফর প্রসঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন সোমবার দুপুরে বেইজিংয়ের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে জানান, ইথিওপিয়া, গ্যাবন, অ্যাঙ্গোলা, বেনিন এবং মিশর আফ্রিকার ওই পাঁচ দেশ সফরে বেরিয়েছেন কিন গ্যাং। ৯ই জানুয়ারি থেকে ১৬ই জানুয়ারি তারিখ পর্যন্ত পাঁচ দেশ সফর হবে তার।
প্রসঙ্গত চীনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে আফ্রিকা যাওয়ার পথে কয়েক ঘণ্টার জন্য ঢাকায় যাত্রা বিরতি করেছিলেন।
সে সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। ২০১৬ সালের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংয়ের ঐতিহাসিক সফরের কয়েক মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত সেই যাত্রবিরতিতে প্রেসিডেন্ট শি’র সফরে গৃহীত বিভিন্ন সিদ্ধান্তের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছিল তার।